কোন পথে মণিপুর সমস্যার সমাধান? দিনভর সফর শেষে উপায় বাতলালেন রাহুল
Rahul Gandhi at Manipur: দিনভর মণিপুর সফরের পর রাহুল জানান, তিনি এ নিয়ে তৃতীয়বার মণিপুরে এলেন। তাঁর কথায়, "ভেবেছিলাম পরিস্থিতির উন্নতি দেখব। কিন্তু দুঃখের বিষয়, কোনো উন্নতি চোখে পড়ল না।"
মণিপুরে হিংসার এক বছরের বেশি কেটে গেলেও সেখানে পদধুলি পড়েনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির। এরই মধ্যে তৃতীয় বার মণিপুরে গেলেন রাহুল গান্ধি। হিংসাবিদীর্ণ মণিপুরে এর আগেও দু'বার গিয়েছেন রাহুল। মণিপুর থেকেই তিনি আরম্ভ করেছিলেন এ বছরের ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা। লোকসভার অধিবেশনে তিনি একাধিক বার শাসকদলকে মণিপুর-প্রশ্নে বিঁধেছেন। কেন এত দিনে একবারও মণিপুরে যাওয়ার সময় হল না প্রধানমন্ত্রীর, প্রশ্ন তুলেছেন তা নিয়েও। অধিবেশন মিটতেই মণিপুরের অবস্থা প্রত্যক্ষ করতে সশরীরে সেখানে পৌঁছলেন রাহুল। জিরিবামে ত্রাণ শিবিরে গিয়ে সেখানকার মানুষের সঙ্গে দেখা করে তাঁদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। শোনেন তাঁদের দুর্দশার কথা।
সোমবার সকালে অসমের শিলচর বিমানবন্দরে নামেন কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী। সেখানে তাঁকে স্বাগত জানান অসম এবং মণিপুরের কংগ্রেস নেতারা। অসমের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের সঙ্গে দেখা করে মণিপুরের উদ্দ্যেশে রওনা দেন কংগ্রেস সাংসদ। তাঁর আগে অসমের চাঁচর জেলায় মণিপুরের দুর্গতদের জন্য করা ত্রাণ শিবিরে যান রাহুল। মণিপুর পৌঁছে সোজা জিরিবামের ওই ত্রাণ শিবিরে উপস্থিত হন রাহুল। সেখানে থাকা মেইতেই সম্প্রদায়ের মানুষদের সঙ্গে দেখা করেন তিনি। সেখান থেকে সড়কপথে চূড়াচাঁদপুরের উদ্দ্যেশে রওনা দেন বিরোধী দলনেতা। চূড়াচাঁদপুরে জাতিগত হিংসায় ঘরছাড়াদের ত্রাণ শিবির পরিদর্শন করেন রাহুল গান্ধী। এদিন রাহুলের সঙ্গে ছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি কেইশাম মেঘচন্দ্র এবং সিএলপি নেতা ও ইবোবি সিং। মেঘচন্দ্র এদিন সাংবাদিকদের বলেন, রাহুল গান্ধীর এই সফরের লক্ষ্য গোটা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্থ মানুষদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া।
আরও পড়ুন: মস্কোয় মোদি! হিংসাদীর্ণ মণিপুরে বিধ্বস্তদের পাশে সেই রাহুলই
এদিকে সোমবারই রাশিয়া সফরে গিয়েছেন মোদি। সেখানে দু'দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে কথা বলেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে। তবে নিজের দেশের উত্তর-পূর্বের ছোট্ট রাজ্য মণিপুরে পা রাখার সময় করে উঠতে পারেননি মোদি। সেই ইস্যুতে দেশের প্রধানমন্ত্রীকে আক্রমণ শানান কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ জয়রাম রমেশ। এক্স হ্যান্ডেলে কটাক্ষ করে তিনি লেখেন, ‘আমাদের নন বায়োলজিক্যাল প্রধানমন্ত্রী মস্কোর উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন, অন্যদিকে লোকসভার বিরোধী দলনেতা অসম ও মণিপুরে দুর্গত মানুষদের পাশে দাঁড়াতে। ২০২৩ সালের ৩ মে থেকে ভয়াবহ হিংসায় রক্তাক্ত মণিপুর। অথচ আজও প্রধানমন্ত্রী ওই এলাকায় পা তো রাখেননি এমনকী সেখানকার মুখ্যমন্ত্রী বা কোনও রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে সাক্ষাৎও করেননি।’
মোদি এদিন মণিপুরে গিয়ে সেখানকার সাংসদদের সঙ্গে দেখা করেন। আলোচনায় বসেন সে রাজ্যের রাজ্যপাল অনুসুইয়া উইকেইয়ের সঙ্গেও। মণিপুরে যাওয়ার আগে তিনি অসম বন্যাবিপর্যস্তদের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন। এদিন কাছাড় জেলার কুম্ভীগ্রাম বিমানবন্দরে পৌঁছে সেখান থেকে মণিপুরের উদ্দেশে রওনা হন রাহুল। বন্যায় অসমের আঠাশটি জেলার ২২ লক্ষেরও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৭৮ জনের। বিভিন্ন ত্রাণশিবিরগুলোতে ঘুরে বিপর্যস্তদের সঙ্গে কথা বলেন রাহুল। সেখান থেকে যান মণিপুরে। যেখানে মেইতেই ও কুকিদের ত্রাণশিবিরগুলো পরিদর্শন করেন তিনি।
দিনভর মণিপুর সফরের পর রাহুল জানান, তিনি এ নিয়ে তৃতীয়বার মণিপুরে এলেন। তাঁর কথায়, "ভেবেছিলাম পরিস্থিতির উন্নতি দেখব। কিন্তু দুঃখের বিষয়, কোনো উন্নতি চোখে পড়ল না। আমি ত্রাণ শিবিরে মানুষের সঙ্গে দেখা করেছি, তাদের কথা নিবিড় ভাবে শুনেছি। তাদের কষ্ট চোখের সামনে দেখেছি। বুঝতে চেষ্টা করেছি।" তাঁর মতে, হিংসা ও ঘৃণার মাধ্যমে কোনও সমাধানের পথ মণিপুরে মিলবে না। ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও ভ্রাতৃত্বের মাধ্যমেই সমাধান খুঁজতে হবে মণিপুর-সমস্যার। রাহুল জানান, তিনি রাজ্যপালের সাথে কথা বলেছেন। তাঁকে তিনি জানিয়েছেন, কংগ্রেস পার্টি সামর্থ্য অনুযায়ী মণিপুরের পাশে থাকবে। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর মণিপুর প্রসঙ্গ এড়িয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিয়েও মুখ খোলেন বিরোধী দলনেতা। তাঁর বক্তব্য, "আমি প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করি, মণিপুরে এসে বোঝার চেষ্টা করতে। এখানে কী হচ্ছে, বুঝতে। এখানকার মানুষের কষ্টের শুনুন। ওদের মন বুঝুন। গোটা দেশ চায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মণিপুরে আসুন। মানুষের কথা শুনুন। তাহলে মানুষ ভরসা পাবে।"
আরও পড়ুন:মণিপুরে চুপ থাকা মানে মেরি-রতন থিয়ামদের অপমান করা! মোদির উদ্দেশ্যে মণিপুরের সাংসদ
প্রশ্ন উঠছে বিরোধী নেতার এত ভর্ৎসনা কিংবা অনুরোধের পরেও কি প্রধানমন্ত্রীর চিঁড়ে গলবে? আদৌ কি কখনও হিংসাদীর্ণ মণিপুরে পা পড়বে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির? নাকি মণিপুর শুধুমাত্র বিরোধী দলনেতা রাহুলকেই পাশে পাবে জীবনভর? আদৌ কবে মিটবে মণিপুরের সমস্যা? কবে নিজের দেশে সসম্মানে ফিরে আসবেন মণিপুরের বাস্তুচ্যুতরা। সেই প্রশ্ন বোধহয় থেকেই যায়।