যে ১১টি শর্তে পাকিস্তানকে ৮ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিল আইএমএফ

IMF Loan for Pakistan: পাকিস্তানকে আট হাজার কোটি টাকার (ভারতীয় মুদ্রায়) বাড়তি ঋণ দিয়েছে আইএমএফ, যার প্রথম দুই কিস্তির টাকা ইতিমধ্যেই পড়শি দেশ পেয়ে গিয়েছে।

ঋণ নিয়ে মানুষ বাড়ি কেনে, গাড়ি কেনে, উচ্চশিক্ষার চেষ্টা করে, অনেকে বিয়েও করে। তবে ভারতের প্রতিবেশী পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ঋণ নিয়ে যুদ্ধ করার অভিযোগ উঠেছিল। পাকিস্তানের অর্থনীতি জরাজর্জরিত। দেশকে চাঙ্গা করার নামে টাকা ধার করে সেই টাকা সন্ত্রাসবাদীদের পৃষ্ঠপোষকতায় খরচ করার মারাত্মক অভিযোগ ছিল। ভারত ও পাকিস্তানের সাম্প্রতিক যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে যখন সারা বিশ্ব উদ্বিগ্ন, দেখা গেল আইএমএফ আবারও ঋণ দিয়েছে পাকিস্তানকে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল অর্থাৎ আইএমএফ পাকিস্তানকে ঋণ দিয়েছে বটে, তবে সেই ঋণ পাওয়ার জন্য ১১টি নতুন শর্তও আরোপ করেছে এবার। পাশাপাশি আইএমএফ সতর্ক করে দিয়েছে যে ভারতের সঙ্গে সংঘাত বাড়লে তা এই ঋণ প্রকল্পের নানা ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতেও পারে।

এক্সপ্রেস ট্রিবিউন সংবাদপত্র জানিয়েছে, পাকিস্তানকে আট হাজার কোটি টাকার (ভারতীয় মুদ্রায়) বাড়তি ঋণ দিয়েছে আইএমএফ, যার প্রথম দুই কিস্তির টাকা ইতিমধ্যেই পড়শি দেশ পেয়ে গিয়েছে। তবে পরবর্তী কিস্তির টাকা দেওয়ার আগে নতুন ১১টি শর্ত চাপানো হয়েছে। এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের ওই প্রতিবেদনেই জানা যাচ্ছে, পাকিস্তানের উপর ঋণ বিষয়ক ৩৯টি শর্ত আগে থেকেই দিয়ে রেখেছিল আইএমএফ। আরও ১১টি শর্ত চাপানোর ফলে মোট শর্তের সংখ্যা বেড়ে এখন ৫০। এই ৫০টি শর্ত পূরণ করলেই ঋণের পরবর্তী কিস্তির টাকা পাবে পাকিস্তান।

আরও পড়ুন- আইএমএফ ঋণের অপব্যবহার: ঋণ নয়, রাষ্ট্রের ছদ্মবেশী যুদ্ধ তহবিল

কী কী শর্ত দিচ্ছে আইএমএফ? প্রতিবেদন অনুযায়ী, অন্যতম শর্ত হচ্ছে যে পাকিস্তানের ২০২৬ অর্থবর্ষের বাজেট আইএমএফের চুক্তির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হতে হবে এবং তাতে সংসদীয় অনুমোদন থাকতে হবে। পাকিস্তানের ফেডেরাল বাজেটে ১৭ লক্ষ ৬০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেখিয়েছে আইএমএফ। এর মধ্যে পাকিস্তানের উন্নয়নের জন্যই ১.০৭ লক্ষ কোটি টাকা খরচ করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি পাকিস্তানের যে প্রদেশগুলিতে নতুন কৃষি আয়কর আইন বাস্তবায়ন করার কথা, সেখানে আয়কর দাখিলের প্রক্রিয়াকরণ, করদাতাদের শনাক্ত এবং নথিভুক্ত করার জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম প্রতিষ্ঠা করতেও বলা হয়েছে। এই সবটার জন্য সময়সীমা দেওয়া হয়েছে জুন মাস পর্যন্ত।

আইএমএফের সুপারিশ অনুযায়ী, পাকিস্তান সরকারকে একটি নির্দিষ্ট প্রশাসনিক পরিকল্পনা তৈরি করে তা প্রকাশ করতে হবে যাতে প্রশাসনিক দুর্বলতাগুলিকে চিহ্নিত করে সংস্কার করা যায়। ২০২৭ সালের পরে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পাকিস্তানের পরিকল্পনার একটি রূপরেখাও তৈরি করে প্রকাশ করতেও বলা হয়েছে।

বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে পাকিস্তানকে চারটি নতুন শর্ত দিয়েছে আইএমএফ। এই বছরের ১ জুলাইয়ের মধ্যে পাক সরকারকে বার্ষিক বিদ্যুৎ শুল্ক পুনর্নির্ধারণের বিজ্ঞপ্তি জারি করতে হবে। এখন পাকিস্তানে বিদ্যুতের ঋণ পরিশোধের বাড়তি খরচের সর্বোচ্চ সীমা ইউনিট প্রতি ৩.২১ টাকা। জুন মাসের মধ্যে আইন করে এই সীমা তুলে দিতে হবে।

তিন বছরেরও বেশি পুরনো ব্যবহৃত গাড়ি আমদানির উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার কথাও বলেছে আইএমএফ।

আইএমএফ আরও একটি শর্ত দিয়েছে যে পাকিস্তান ২০৩৫ সালের মধ্যে বিশেষ প্রযুক্তি অঞ্চল এবং অন্যান্য শিল্প পার্ক এবং অঞ্চল সম্পর্কিত সমস্ত প্রণোদনা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করার জন্য পরিচালিত মূল্যায়নের ভিত্তিতে একটি পরিকল্পনা প্রতিবেদন তৈরি করবে পাকিস্তান, এই বছরের শেষ নাগাদ তার সময়সীমা।

আরও পড়ুন- কেন ভারতের বিরোধিতা করে পাকিস্তানকে সমর্থন করছে আজারবাইজান, তুরস্ক?

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে যে, গত দুই সপ্তাহে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে উত্তেজনা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেলেও এখনও পর্যন্ত বাজারে তার ভয়ঙ্কর প্রভাব পড়েনি। শেয়ার বাজারও লাভ ধরে রেখেছে।

আইএমএফের প্রতিবেদনে আগামী অর্থবর্ষে প্রতিরক্ষা বাজেট দেখানো হয়েছে ২.৪১৪ ট্রিলিয়ন টাকা। আইএমএফ এবং বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে, ভুল জ্বালানি নীতি, সরকারের অযোগ্য প্রশাসনের কারণেই ঋণের বোঝা বাড়ছে।

২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে পাকিস্তানি সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর প্রত্যাঘাত হিসেবে ৭ মে ভারত পাকিস্তানি সন্ত্রাসী ঘাঁটির উপর ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর মাধ্যমে হামলা চালায়। তারপর চারদিন ধরে আন্তঃসীমান্তে ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর ভারত ও পাকিস্তান ১০ মে যুদ্ধবিরতিতে আসে। এর মাঝেই পাকিস্তানকে বিপুল অঙ্কের ঋণ মঞ্জুর করে আইএমএফ। আইএমএফের বক্তব্য, পাকিস্তানের উপর ঋণের যে বোঝা চেপেছে, তার জন্য সরকারের ভুল নীতিই দায়ী। মনে রাখতে হবে, পাকিস্তানের উপর আগেও ৩৯টি শর্ত ছিল। সেই সমস্ত মেনে চলেও কি দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল করতে পেরেছে পাকিস্তান? নতুন ঋণের ক্ষেত্রেও তা অন্য খাতে যাতে কোনওভাবে ব্যবহৃত না হয় তা নিশ্চিত করা গেল আদৌ?

More Articles