ভোটে জেতানোর পুরস্কার! ট্রাম্পের প্রশাসনে যে দায়িত্ব পেলেন এলন মাস্ক

Donald Trump-Elon Musk: প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন, এলন মাস্ক 'সরকারি দক্ষতা বিভাগ'-এর নেতৃত্ব দেবেন।

নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্প যে জিতবেন, তা মোটামুটি নিশ্চিত করাতে যদি কারও সবচেয়ে বড় ভূমিকা থেকে থাকে, তাহলে তিনি হলেন এলন মাস্ক। কমলা হ্যারিসকে পিছিয়ে ট্রাম্পকে জেতাতে তাঁর সবচেয়ে বড় অস্ত্র ছিল টাকা! ট্রাম্পকে ভোট দিলে মিলিয়ন ডলার পুরস্কার আমজনতার! টাকা-মদ-মাংস দিয়ে ভোট কেনা নতুন ঘটনা নয়। তৃতীয় বিশ্ব তো তাতে অভ্যস্তই। প্রথম বিশ্বে নতুন একটিই বিষয়, টাকার পরিমাণ! সেই যাই হোক, যস্মিন দেশে যদাচার। তা মাস্ক তো ট্রাম্পকে জেতালেন। বদলে কী পেলেন? ট্রাম্পের একাধিক প্রকল্প যে এবার সবুজ সংকেত পেয়ে যাবে বিনা বাধায় এ তো সহজেই অনুমেয়। পাশাপাশি এবার ট্রাম্প তাঁকে সরাসরি দায়িত্বও দিচ্ছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন, এলন মাস্ক 'সরকারি দক্ষতা বিভাগ'-এর নেতৃত্ব দেবেন। ট্রাম্প অবশ্য প্রচারাভিযানের সময়ই এমন ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। ভারতীয়-আমেরিকান উদ্যোক্তা বিবেক রামাস্বামীর পাশাপাশি এই বিভাগের প্রধান হবেন মাস্ক।

"একসঙ্গে, এই দুই প্রতিভাধর আমেরিকান সরকারি আমলাতন্ত্রকে ভেঙে ফেলার, অতিরিক্ত বিধি-বিধান কমানোর, অযথা ব্যয় কমানোর এবং ফেডারেল সংস্থাগুলির পুনর্গঠন করার পথ প্রশস্ত করবে আমার প্রশাসনের জন্য - যা 'আমেরিকা বাঁচাও আন্দোলনের' জন্য অপরিহার্য," ট্রাম্প এক বিবৃতিতে বলেছেন। ট্রাম্প আরও বলেছেন, এলন এবং বিবেক 'ফেডারেল ব্যুরোক্রেসি'-র দক্ষতার দিকে নজর রেখে সমস্ত আমেরিকানদের জীবনকে আরও উন্নত করতে চলেছেন। ট্রাম্পের বিশ্বাস, সরকার থেকে ব্যাপক অপচয় এবং জালিয়াতি দূর করে দেবেন এই দুইজন।

আরও পড়ুন- ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতিতে সমস্যায় পড়বে ভারত? ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে চ্যালেঞ্জ কী কী?

নির্বাচনে জিতে বিজয় ভাষণেই ট্রাম্প মাস্কের ঢালাও প্রশংসা করেছিলেন। বলেছিলেন, মাস্ক হচ্ছেন 'সুপার জিনিয়াস'। বলার সহস্র কারণও আছে। মাস্ক বিশ্বের ধনীতম ব্যক্তি হয়ে যেভাবে ট্রাম্পের প্রচারে গায়ে-গতরে খেটেছেন তা দলীয় কর্মীদেরও লজ্জায় ফেলে দেবে। বিলিয়নেয়ার হয়েও মাস্ক ট্রাম্পের প্রচারের জন্য আমেরিকার অখ্যাত অঞ্চলেও সময় কাটিয়েছেন। প্রচারের জন্য ফিলাডেলফিয়া এবং পেনসিলভানিয়ায় দুই সপ্তাহ কাটিয়েছেন।

মাস্ক বরাবরই ট্রাম্পের কট্টর সমর্থক ছিলেন। তবে আমেরিকান বিশিষ্ট মুখেরা সরাসরি রাজনৈতিক অরচারে এভাবে সক্রিয় থাকেন না। মাস্ক সেই আগল ভেঙেছেন। রিপাবলিকানদের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিলেন মাস্ক। টেসলার সিইও ট্রাম্পের পুনঃনির্বাচনের লড়াইয়ে ১০০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি অনুদান দিয়েছেন। নিজের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম X ব্যবহার করে বিরোধীদের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক প্রচার চালিয়েছেন।

গত ৯ নভেম্বর, ট্রাম্প স্পষ্টই বুঝিয়ে দিয়েছিলেন যে মাস্ক তাঁর প্রশাসনের অংশ হতে চলেছেন। ট্রাম্প মাস্ককে ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে একটি টেলিফোনিক কথোপকথনে যোগ দিতে বলেছিলেন। ইউক্রেনের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, জেলেনস্কি স্টারলিঙ্কসের জন্য মাস্ককে ধন্যবাদও জানিয়েছেন।

আরও পড়ুন- ভোটারদের কোটি কোটি টাকা ‘পুরস্কার’! কেন ট্রাম্পের হয়ে সালিশি করছেন এলন মাস্ক?

ট্রাম্পের জয় শুধুমাত্র আমেরিকার উপর তো প্রভাব ফেলবে না। ট্রাম্পের জয় ভারত-বাংলাদেশের পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন, কানাডার রাজনৈতিক মানচিত্রেও ছাপ রেখে যাবে। ট্রাম্প ইতিমধ্যেই কানাডা প্রসঙ্গে নানা মন্তব্য করে ইঙ্গিত দিতে শুরু করেছেন যে জাস্টিন ট্রুডোর মেয়াদ সঙ্কটে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডার মধ্যে বিশ্বের দীর্ঘতম স্থল সীমান্ত রয়েছে। দুই দেশের এক ট্রিলিয়ন ডলারেরও বেশি মূল্যের বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে। ট্রাম্পের জয় আমেরিকার উত্তরের এই প্রতিবেশী দেশটিকে প্রভাবিত করতে চলেছে একথা অনস্বীকার্য।

ট্রাম্প ট্রুডোকে 'দু-মুখো' বলেছিলেন আগেই। ট্রুডোও ২০১৯ সালে ন্যাটো নেতাদের বৈঠকে ট্রাম্পকে উপহাস করেছিলেন। ট্রাম্পের জয়ের পরে এই সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে যে, কানাডায় নতুন প্রধানমন্ত্রী এবং সরকার নির্বাচন হতেই পারে। ট্রুডোর লিবারেল পার্টির অবস্থা এই মুহূর্তে নড়বড়েই। আর সেই সুযোগ মাস্কের ব্যবসা প্রসারণেও ভূমিকা ফেলবে।

More Articles