ভারতেই ছাপানো হয়েছিল শূন্য টাকার নোট! কারণ জানলে চমকে উঠতে হয়...
Zero Rupee Note: টাকাটি দেখতে সাধারণ ৫০ টাকার নোটের মতোই। প্রায় এক দশকেরও বেশি সময় ধরে প্রতি মাসে নোটগুলি বিতরণ করা হয়।
টাকা। গান্ধীছাপ এই একটি বিষয় নিয়ে যতই 'মাটি টাকা' জাতীয় বাণী বলা হোক না কেন, সকলেই জানেন প্রাণ ও মান দুই-ই বাঁচাতে পারে এই টাকা। অথচ এই বিষয়টির চাহিদা প্রবল থাকলেও জোগান বাড়ানোর উপর কোনও হাত নেই। মানি হাইস্ট বা হালফিলের ফর্জি দেখে এমন ইচ্ছে যে জাগেনি মানুষের তা নয়, তবে সেক্ষেত্রে ফলাফল যা হতে পারে তা ভেবেই বিশেষ এগনো হয় না মধ্যবিত্তের, নিম্নবিত্তের। বাকি বিত্তটির কথা তেমন উঠল না কারণ, জোগান সেখানে ধারাবাহিক। ভারতের রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অর্থাৎ আরবিআই ১ টাকা থেকে শুরু করে ২,০০০ টাকা পর্যন্ত বিভিন্ন মূল্যের নোট ছাপায়। প্রচণ্ড অর্থনৈতিক সংকটের মুখে পড়লে সেই নোট ছাপা বাড়ানোর জটিল সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। আজ অবধি নানান নোট এসেছে, বাতিল হয়েছে, রং বদলেছে। কিন্তু জানেন কি, এই দেশেই একবার ছাপা হয়েছিল শূন্য টাকার নোটও?
শূন্য টাকার নোটটি আরবিআই স্বীকৃত সাধারণ ভারতীয় নোট নয়। ২০০৭ সালে এই নোটটি ছাপা হয়েছিল, যার নেপথ্যে ছিল চেন্নাইয়ের একটি এনজিও। 5th Pillar নামের এই এনজিও দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য নানাভাবে কাজ করে থাকে। হিন্দি, তেলগু, কন্নড় এবং মালায়লামের মতো বিভিন্ন ভাষায় লক্ষ লক্ষ শূন্য টাকার নোট ছাপা হয় এনজিওর তরফে। টাকাটি দেখতে সাধারণ ৫০ টাকার নোটের মতোই। প্রায় এক দশকেরও বেশি সময় ধরে প্রতি মাসে নোটগুলি বিতরণ করা হয়। নোটগুলিতে "সর্বস্তরে দুর্নীতি দূর করুন" এবং "আমি ঘুষ নেব না, দেবও না" জাতীয় দুর্নীতিবিরোধী নানা স্লোগান লেখা।
এই শূন্য টাকার নোটগুলি 5th Pillar নামের এনজিওর স্বেচ্ছাসেবকরা রেল স্টেশন, বাস স্টেশন এবং বাজারের নানা এলাকায় বিলোতে থাকেন। তাদের উদ্দেশ্য ছিল ঘুষ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি। জনসাধারণকে নিজেদের অধিকার এবং উপলব্ধ বিকল্প সমাধানগুলি মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য শূন্য টাকার নোট বিতরণ করা হয়৷ সেই সময় বিয়ের অনুষ্ঠানের মূল প্রবেশদ্বারের সামনে এনজিওর তরফে ইনফরমেশন ডেস্ক স্থাপন করা হতো৷ বিয়ের অনুষ্ঠান, জন্মদিনের পার্টি এবং সামাজিক নানান জমায়েতের সময় বিভিন্ন সমাবেশ স্থলে এবং হলগুলিতে শূন্য টাকার নোট বিতরণ করা হতো। একই সঙ্গে পুস্তিকা এবং প্যামফলেটও ছড়িয়ে দেওয়া হতো মানুষের মধ্যে।
আরও পড়ুন- নোটবন্দির আগেই হয়েছিল কয়েনবন্দি! কেন পুরনো মোটা পাঁচ টাকার কয়েন তৈরি বন্ধ করে দেয় RBI?
5th Pillar এনজিওর ওয়েবসাইট বলছে, পড়ুয়াদের এবং জনসাধারণকে ৩০ ফুট চওড়া এবং ১৫ ফুট লম্বা এক বিশাল শূন্য টাকার নোটের ব্যানারে স্বাক্ষর করার জন্যও অনুরোধ করা হয়েছিল। সেই সময়ে টানা ৫ বছরে ১২০০ টিরও বেশি স্কুল, কলেজ এবং জনসভায় এই বিশাল ব্যানার নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। 'শূন্য দুর্নীতি' প্রতিশ্রুতির সমর্থনের চিহ্ন হিসাবে নাগরিকদের কাছ থেকে ৫ লক্ষেরও বেশি সই সংগ্রহ করা হয়েছিল। জনগণ সই করেছিল এই মর্মে যে, "আমি ঘুষ নেব না এবং দেব না"। শূন্য টাকার সেই নোটের সামনের দিকে মুদ্রিত ছিল এই কথাটিই৷
জীবনের নানাক্ষেত্রে নানাভাবে ঘুষ দিতে বাধ্য হয়েছেন ভারতের নাগরিকরা। সরকারি সুবিধা পেতে গেলে, কোথাও চাকরি পেতে গেলে, কোথাও কোনও পরিষেবা সঠিক সময়ে পেতে হলে টেবিলের নিচ দিয়ে টাকার লেনদেন করতে হয়েছে আমজনতাকে। বেআইনি জেনেও কাজ হয়নি, পুলিশ বা প্রশাসন যাদের এক্ষেত্রে ভূমিকা নেওয়ার কথা তাদেরই বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সুতরাং ঘুষ ঠেকাবে কে! এই সচেতনতাই ছড়াতে চেয়েছে এনজিওটি।
এনজিওর তরফে জানানো হয়েছিল, এই টাকা মানুষ হাতে পাওয়ার পরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে চমকপ্রদ কিছু ঘটনা ঘটেছে। একবার মধ্যরাতে একজন অটোরিকশা চালককে এক পুলিশ অকারণে পাকড়াও করে নিয়ে যান। জানান, পুলিশকে 'খুশি করে দিলে' ছাড়া মিলবে। অটোচালক তখন সেই পুলিশ কর্মীকে এই শূন্য টাকার নোটটি ধরিয়ে দিয়েছিলেন। পুলিশ হতবাক হয়ে যান। সেই যাত্রায় হেসে তাকে ছেড়েও দেন।