India VS Bharat: সুপ্রিম কোর্ট থেকে সাংবিধানিক সভা, কোন দিকে ঝুঁকে রায়?

India VS Bharat: পাখির চোখ ২০২৪ -এর লোকসভা নির্বাচন। ২০২৪ -এর নির্বাচনকে ঘিরে বিরোধী জোটের নাম নির্বাচিত হয়েছে I.N.D.I.A. বা Indian National Democratic Inclusive Alliance। এই কারণেই কি দেশের নাম পরিবর্তনে ব্যস্ত বিজেপি?

ভারত নাকি ইন্ডিয়া? কোন নামে ডাকা হবে দেশকে?এই নিয়ে কিছুদিন ধরেই জল্পনা চলছিল। জি২০ সম্মেলন আরও একবার সেই বিতর্ক উসকে দিয়ে গেল। দেশ-বিদেশের অতিথিদের কাছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পরিচয় হিসেবে লেখা হয়েছিল, Prime Minister, Bharat. একইভাবে জি-২০ সম্মেলনের মঞ্চেও তাঁর নামফলকে লেখা ছিল ভারত। তাহলে কি বিশ্বের সামনে ভারত নামেই সিলমোহর পড়তে চলেছে এবার? প্রশ্ন উঠছে নানা মহলে। জেনে নেওয়া যাক এই নামের ইতিহাস।

ইন্ডিয়া এবং ভারত: ইতিহাস কী বলছে?

পার্সিয়ানদের 'স' এর বদলে 'হ' -এর উচ্চারণে সিন্ধু হল হিন্দু। হিন্দু থেকে ইরানিয়ানদের প্রভাবে বদলে দাঁড়াল হিন্দুস্তান। গ্রিকদের আগমনের পরে, ইন্দাস ভ্যালি থেকে ইন্দোস হয়ে ইন্ডিয়া। ইতিহাসের পাতায় ভৌগলিক ভূ-বিন্যাসের কারণে নাম হল ইন্ডিয়া। অন্যদিকে, ভারত নামের পেছনে উপনিষদের প্রভাব। রয়েছে 'মহাভারত'-এর অনুষঙ্গও। অনেকে মনে করেন রাজা দুষ্মন্ত এবং শকুন্তলার পুত্র ভরতের নাম থেকেই ভারত নামের উৎপত্তি ঘটেছে। সমাজবিজ্ঞানী ক্যাথরিন ক্লেমেন্টিন ওঝা-র মতে ভারত সম্পূর্ণভাবে একটি ধর্মীয় এবং সামাজিক পরিচয়।যদিও ভারতের সংবিধানের প্রথম বাক্যেই দুটি নামকেই স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।"India that is Bharat, shall be a union of states."

আরও পড়ুন: ইন্ডিয়া নয়, ভারতেই জোর মোদির! জি-২০ তে স্পষ্ট হচ্ছে যেসব ইশারা


বিচারব্যবস্থা কী বলছে?

২০১৬ সালের মে মাসে, দেশের নাম ভারত করার জন্য সুপ্রিম কোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করা হয়েছিল। বিচারপতি টি.এস.ঠাকুর সেই জনস্বার্থ মামলা খারিজ করে দেন। এবং এই বিষয়ে কোর্টের গুরুত্বপূর্ণ সময় অপচয় করার জন্য ভর্ৎসনা করেন। খারিজ করার যুক্তি হিসেবে বলা হয়েছিল, যাঁর ইচ্ছে ভারত নামে ডাকার তিনি ডাকতে পারেন। যাঁরা ইন্ডিয়া নামে ডাকতে চান, তাঁদের সেই সুযোগ দিতে হবে। সংবিধানে এই দুই নামেরই উল্লেখ রয়েছে। বোঝা যায়, তখনও শাসকদলের তরফে কোনও বিশেষ নাম চাপিয়ে দেওয়ার প্রবণতা শুরু হয়ে যায়নি। পরে, ক্রমশই বদলে যেতে থাকে পরিস্থিতি। ২০২০ সালে দিল্লির এক ব্যক্তি সুপ্রিম কোর্টে ফের জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন। সংবিধানের ১ নং ধারার বদল চেয়ে তিনি ইন্ডিয়া নাম বাতিলের পরামর্শ দেন। তাঁর যুক্তি ছিল, ইন্ডিয়া নাম বাতিলের মধ্যে দিয়ে পূর্বপুরুষদের কষ্টার্জিত স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করা হবে। এতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বদেশচেতনা প্রবল হবে। যদিও এই মামলাও খারিজ হয়ে যায়।

যদি বর্তমানে, ভারত নামটিই শুধুমাত্র ব্যবহার করতে চাওয়া হয়, সেই ক্ষেত্রে সংবিধানে সংশোধন ঘটাতে হবে। কোন পথে হাঁটছে কেন্দ্র সরকার?

নাম প্রসঙ্গে নানা মত:

সংবিধান সভার অন্যতম সদস্য, কে.ভি. কামাথ সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাব রেখে বলেন, হয় ভারত নাহলে ইন্ডিয়া যেকোনও একটি নামই ব্যবহার করা উচিৎ। যদিও বিশ্বে চিন,জাপান,হল্যান্ডের মতো একাধিক দেশ একাধিক নামে পরিচিত। সংবিধান সভার আরেক সদস্য, শেঠ গোবিন্দ দাসের মতে, প্রাচীন ইতিহাসে ইন্ডিয়া নামের প্রচলন ছিলনা। গ্রিকরা আসার পরে, এই নাম প্রচলিত হয়। অন্যদিকে ভারত নাম 'বিষ্ণুপুরাণ' তথা উপনিষদেও ব্যবহৃত হয়েছে। তাই ইন্ডিয়া নাম বর্জন করে, ইতিহাস অনুসরণে সংস্কৃতিকে তুলে ধরা উচিৎ।

আরও পড়ুন:ভারত বনাম ইন্ডিয়া: প্রথম নয়, আগেও যেভাবে পাল্টে ফেলা হয়েছে এই সব রাজ্যের নাম


এক দেশ, এক নাম:

পাখির চোখ ২০২৪ -এর লোকসভা নির্বাচন। ইতিমধ্যেই কানাঘুষো শোনা গেছে এক দেশ,এক নাম,এক নির্বাচনের ডাক দিয়েছে কেন্দ্র সরকার। ২০২৪ -এর নির্বাচনকে ঘিরে বিরোধী জোটের নাম নির্বাচিত হয়েছে I.N.D.I.A. বা Indian National Democratic Inclusive Alliance। এই কারণেই কি দেশের নাম পরিবর্তনে ব্যস্ত বিজেপি? এক নির্বাচনের বিষয়েও ধন্দে পড়তে হচ্ছে আমজনতাকে। এতদিন লোকসভা নির্বাচন এবং রাজ্যগুলির বিধানসভা নির্বাচন ভিন্ন সময়ে হত। ফলত, দুই নির্বাচনের ইস্যুও হত পৃথক।'এক নির্বাচনের' ফলে, স্থানীয় ইস্যুগুলি যেমন মূল্যহীন হয়ে যাবে, তেমনই গুরুত্ব হারাতে পারে স্থানীয় দলগুলিও। ভারতের সংস্কৃতি বহুত্বের মাঝে ঐক্যের বার্তা দেয়। একটি বিরোধী জোটের নাম ঘিরে, সংবিধান সংশোধন করে সারা দেশের নাম বদলে ফেলা যে আদতে একনায়কতন্ত্রী মনোভাবের ফসল। বুঝতে অসুবিধে হয় না কারোরই

More Articles