রক্ত নেওয়া নয়, পাকিস্তানি জঙ্গিকে রক্ত দিয়ে ইতিহাসে নাম লেখাল ভারতীয় সেনা

মানবতার এক অনন্য নজির গড়ল ভারতীয় সেনা।

ভারতীয় সেনার সঙ্গে সন্ত্রাসবাদীদের সংঘর্ষের কথা প্রায়দিনই শুনি আমরা। কিন্তু এবার মানবতার এক অনন্য নজির গড়ল ভারতীয় সেনা। ভারতীয় সেনার বয়ান অনুযায়ী, গত ২১ অগাস্ট, বুধবার, রাজৌরি জেলার কাছে একটি বর্ডার চেকপোস্টে হামলার চেষ্টা করে এক পাকিস্তানি সন্ত্রাসবাদী। সেনাদের সঙ্গে গুলি চালাচালিতে আহত হয় সে। ভারতীয় সেনারাই সেই আহত আততায়ীকে বাঁচায় বোতলতিনেক রক্তদান করে। আততায়ীর নাম তবারক হোসেন, বয়স ৩২। পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের কোটলি জেলার সব্জকোট গ্রামে তার বাস।

ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দিতে গিয়ে নৌশেরা বিগ্রেডের কমান্ডার বিগ্রেডিয়ার কপিল রানা জানান, ২১ অগাস্ট সকালে ঝানগর সেক্টরে মোতায়েন কয়েকজন সেনা লক্ষ করেন, লাইন অফ কন্ট্রোল পেরিয়ে ভারতের দিকে ঢুকে পড়েছে কয়েকজন সন্ত্রাসবাদী। "ওদের মধ্যে একজন পোস্টের একেবারে কাছে চলে এসেছিল, কাঁটাতারের বেড়া কাটার চেষ্টা করছিল, তখনই সেনারা ধাওয়া করে তাকে। আততায়ী পালানোর চেষ্টা করে। কিন্তু গুলিবিদ্ধ হয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। তাকে পাকড়াও করে ভারতীয় সেনা। সেই সুযোগে বাকি দু'জন সন্ত্রাসবাদী পালিয়ে যায়"— বলেছেন রানা।

রাজৌরির আর্মি হাসপাতালের কমান্ডান্ট রাজীব নায়ার জানান, "কাঁধে এবং ঊরুতে দু'টি বুলেট আঘাত থাকায় প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছিল। ফলে অবস্থা গুরুতর হয়ে ওঠে জঙ্গিটির। আমাদের সেনারাই বোতলতিনেক রক্তদান করে ওকে। অপারেশন করা হয়, আইসিইউ-তে ভর্তিও করা হয়। এখন অবস্থা স্থিতিশীল ওর।"

আরও পড়ুন: মাত্র দু’পাতা পড়েই রুশদিকে খুনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সে!

ভারতীয় সেনা জানিয়েছে, হুসেন এবং তার ভাই হারুণ আলিকে এর আগেও একবার আটক করা হয়েছিল। ২০১৬ সালের এপ্রিল মাস সেটা। তখন ওর বয়স মাত্র পনেরো বছর। এই সেক্টরেই গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ ছিল ওদের ওপর। কিন্তু মানবাধিকারের ভিত্তিতে ২০১৭-র নভেম্বরে মুক্তি দেওয়া হয় তাদের।

জেরার মুখে হুসেন বারংবার জানিয়েছে, পাকিস্তানের এক ইন্টেলিজেন্স অফিসার, কর্নেল ইউনুস চৌধুরী তাকে ভারতীয় চেকপোস্ট আক্রমণ করার জন্য পাঠিয়েছিল। ৩০,০০০ টাকা দিয়েছে হুসেনকে সেই অফিসার। সেনার বয়ান অনুযায়ী, সে এবং বাকি অনুচররা চেকপোস্টের উপর নজর রাখছিল বেশ কিছু দিন ধরেই। অবশেষে ২১ অগাস্ট চৌধুরী আক্রমণের নির্দেশ দেয়। বছর দুয়েক হল হুসেন পাকিস্তানি ইন্টেলিজেন্সের হয়ে কাজ করছে। এজন্য এলওসি-র পাশে লস্কর-এ-তইবার একটি ট্রেনিং ক্যাম্পে ছ'মাসের প্রশিক্ষণ নেয় সে। ২০১৬র ২৫ এপ্রিল হুসেন এবং তার ভাই হারুণ আলিকে সবজকোটেরই আরও তিনজন জঙ্গির সঙ্গে পাঠানো হয়েছিল। তিনজন জঙ্গির কাছেই যুদ্ধাস্ত্র ছিল। ভারতীয় চেকপোস্টের কাছেই একটি বোম লাগানোর পরিকল্পনা ছিল তাদের। ২০১৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর, হুসেনের আরেক ভাই মহম্মদ সায়েদও একই সেক্টরে ভারতীয় সেনার হাতে ধরা পড়ে। আপাতত, হুসেনের বিচারের অপেক্ষায় ভারতীয় সেনা।

ইতিমধ্যে ট্যুইটারে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। যাতে হুসেন সরাসরি স্বীকার করেছে নিজের যাবতীয় অপরাধ। তার বয়ান অনুযায়ী, পাকিস্তানের মেজর রাজ্জাক নিজের হাতে তাকে তৈরি করেছেন। প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। হুসেনের মতে, তার সঙ্গে যে দু'জন জঙ্গি ছিল, তারা বিশ্বাসঘাতকতা করে। সেজন্যই ভারতীয় সেনার হাতে ধরা পড়ে সে। লস্কর-এ-তইবা এবং জঈশ-এ-মহম্মদের নানা ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ নিয়েছে বলেও জানিয়েছে হুসেন। সেনার গুলিতে জঙ্গি নিধন, অথবা জঙ্গির গুলিতে সেনা— এ বড় স্বাভাবিক দৃশ্য। কিন্তু আহত জঙ্গিকে রক্ত দিয়ে বাঁচিয়ে যে এক নতুন নজির গড়ল ভারতীয় সেনা, তা অনস্বীকার্য।

More Articles