লাগামছাড়া খিস্তি, যৌনতায় 'না'! ওটিটি ছবিতেও এবার নিষেধের পরোয়ানা?

OTT Abuse and Vulgarity: গত কয়েক বছরে ওটিটির নানা বিষয়ে অশ্লীলতার অভিযোগ বাড়তে শুরু করেছে, তাই নড়ে বসেছে সরকার।

বাদ দিতে হবে। কখন কোথা থেকে ঠিক কতখানি বাদ দিতে হবে এই বিষয়ে সবটুকু জানে সেন্সর বোর্ডের কাঁচি। বিচিত্র সেই 'বাদ' পড়ার তালিকা। কখনও ধর্মে আঘাত লাগার জন্য কাঁচি, কখনও, যৌন উদ্দীপনার জন্য কাঁচি, কখনও মারদাঙ্গার জন্য কাঁচি। যা ঘটমান, সিনেমা তাই বলে- এমন একটা ধারণা রয়েছে বটে দেশে, তবে যা ঘটে সবটাই যে পর্দায় ফলাও করে বলতে হবে এমন তো না? অন্তত কাঁচিবোর্ড তেমনই মনে করে। যখন যেটা দেখালে অসুবিধা মনে হয়, বাদ দিয়ে দেওয়া হয় সেটুকু। চারপাশে খুনোখুনি হোক, বরদাস্ত করা যাবে, কিন্তু পর্দায় হিংসা নৈব নৈব চ! ভাবাবেগে আঘাতের নামে, অশ্লীলতার নামে কত কীই যে বাদ পড়ে যায়- আবার কত কী বাদ পড়েও না। কাঁচির এই এত ভেদাভেদ থেকে ভারতকে হালেফিলে মুক্তি দিয়েছে 'ওভার দ্য টপ' প্রযুক্তি। ওটিটি নামেই সারা দেশ যাকে আদর করে ডাকে। ওটিটি সহজ বাণিজ্যে বিশ্বাসী, ফেলো কড়ি মাখো তেল। যদি নিজের মনমতো, বাধ্যবাধকতাহীন নানা বিষয় দেখতে হয়, তাহলে ওটিটিই ভরসা। তবে লাগামহীনতার জেরে ভালো রোজগার হচ্ছে বলেই অপ্রয়োজনীয় হিংসা, গালাগালি বা যৌন হিংসাই বা কতখানি যুক্তিযুক্ত? খুব বেশিদিন কি অনলাইনে কাঁচিহীন বিষয় দেখা যাবে? সেখানে লাগাম টানতে কেনই বা অপেক্ষা করছে সরকার?

এই বিবিধ অনলাইন স্ট্রিমিং পরিষেবাগুলিতে সিনেমা এবং সিরিজে গালিগালাজ আর সহ্য করবে না দেশ। ইতিমধ্যেই সতর্ক করে দিয়েছেন মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর। দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিধিগুলিতেও এবার চালু হবে সেন্সরশিপ, যার সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রক হবে সরকার। দেশে গজিয়ে ওঠা বিবিধ অনলাইন স্ট্রিমিং প্লাটফর্মে অপমানজনক এবং অশ্লীল বিষয়বস্তু বৃদ্ধির বিষয়ে অভিযোগের তালিকা ক্রমেই বাড়ছে। কেন্দ্রীয় তথ্য সম্প্রচার এবং ক্রীড়া ও যুব বিষয়ক মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর সম্প্রতি জানিয়েছেন, সৃজনশীলতার নামে অশ্লীল ভাষার ব্যবহার সহ্য করা হবে না। এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করবে সরকার, এবং নির্মম কাঁচি চলবে সর্বত্র।

“যদি এই সংক্রান্ত নিয়মে কোনও পরিবর্তন করার প্রয়োজন হয়, মন্ত্রক তা বিবেচনা করতে রাজি। এই প্ল্যাটফর্মগুলিকে সৃজনশীলতার জন্য স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছিল, অশ্লীলতার জন্য নয়। এ বিষয়ে যত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া দরকার, সরকার তা থেকে পিছপা হবে না,” সাফ কথায় জানিয়েছেন অনুরাগ।

আরও পড়ুন- সিনেমা নয়, ওয়েবসিরিজই মাত করেছে ২০২২! কোন কোন সিরিজ, সিনেমা জিতেছে মন?

মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুরের মতে, প্রযোজককে প্রথম স্তরে প্রাপ্ত অভিযোগগুলির সমাধান করতে হবে। যা যা অভিযোগ উঠবে তার ৯০ থেকে ৯২% নিজেদেরই প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করে সমাধান করতে হবে। অভিযোগ সমাধানের বিষয়টি পরবর্তী কমিটির স্তরে যাবে, সেখানে বাকি কাঁটাছেঁড়া চলবে। একেবারে শেষ স্তরে আসবে সরকারের হস্তক্ষেপ। সিনেমা বা সিরিজে কতখানি কী থাকবে, কী কী বাদ যাবে তা নিয়ম অনুযায়ী বিভাগীয় কমিটি স্তরে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গত কয়েক বছরে ওটিটির নানা বিষয়ে অশ্লীলতার অভিযোগ বাড়তে শুরু করেছে, তাই নড়ে বসেছে সরকার।

 

তাহলে ভারতে অ্যামাজন এবং নেটফ্লিক্স বা আরও বিবিধ সব ওটিটির দিন শেষ? সরকারি হস্তক্ষেপওয়ালা বিষয়ই যদি দেখতে হয় তাহলে আর পয়সা খসিয়ে 'সাবস্ক্রাইব' করার অর্থই বা কী দাঁড়ায়? দক্ষিণ এশিয়ার বাজারে নিজেদের বিষয়বস্তুর জন্য ইতিমধ্যেই সমালোচনার মুখে পড়েছে অ্যামাজন ও নেটফ্লিক্স। ২০২১ সালে, অ্যামাজনের একটি নিজস্ব রাজনৈতিক ওয়েব সিরিজের জন্য ভারতীয় ব্যবহারকারীদের কাছে ক্ষমা চাইতে হয়েছে কর্তৃপক্ষকে। কয়েকটি দৃশ্য কিছু মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেছে এই অভিযোগ ওঠে ওই সিরিজের বিরুদ্ধে।

অ্যামাজন লিখিতভাবে জানাতে বাধ্য হয়, "আমরা আমাদের দর্শকদের বৈচিত্র্যপূর্ণ বিশ্বাসকে সম্মান করি এবং যারা এই দৃশ্যগুলো দেখে আঘাত পেয়েছেন তাদের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইছি। আমাদের দলগুলি সংস্থার বিষয়বস্তু মূল্যায়ন প্রক্রিয়াকে মেনে চলে। আমরা স্বীকার করছি যে, আমাদের দর্শক শ্রোতাদের আরও ভালো বিষয় পরিবেশন করার জন্য তার ক্রমাগত আপডেট প্রয়োজন। আমরা ভারতের আইন মেনে এবং আমাদের দর্শকদের সংস্কৃতি ও বিশ্বাসের বৈচিত্র্যকে সম্মান করেই বিনোদনমূলক বিষয়বস্তু তৈরি করতে থাকব।”

আরও পড়ুন- পরিচারিকা, স্ত্রী, বিতর্কিত যৌনতা! অভিনেতার নেপথ্যে রয়েছেন অন্য নওয়াজউদ্দিন

উল্লেখ্য, ভারতের OTT-র দর্শকসংখ্যা ৪৩ মিলিয়ন! ২০২৩ সালের শেষ নাগাদ সংখ্যা বাড়তে বাড়তে ৫০ মিলিয়ন ছোঁবে বলেই অনুমান। কোভিডের সময় সিনেমা হলগুলি বন্ধ থাকায় অনিবার্য হয়ে ওঠে ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলি। বর্তমানে, OTT গুলির বিষয়বস্তুর জন্য কোনও সেন্সর বোর্ড নেই এবং অনিয়ন্ত্রিত OTT বিভাগের জন্য একটি নির্দিষ্ট রূপরেখা প্রদানের প্রথম প্রচেষ্টাই ছিল তথ্য প্রযুক্তি (ইন্টারমিডিয়ারি গাইডলাইনস অ্যান্ড ডিজিটাল মিডিয়া এথিক্স কোড) বিধি, ২০২১ (IT বিধি)।

ওটিটির বিষয়বস্তুতে অশ্লীলতার বিষয়টি নিয়ে প্রায়ই হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টেও জলঘোলা হয়েছে। দাবি উঠেছে এই লাগাম টেনে ধরার। গত সপ্তাহেই, দিল্লি হাইকোর্ট ওটিটিতে অশ্লীলতার উপর কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই বলেই জানিয়েছে। সোনির ওটিটি প্ল্যাটফর্মে টিভিএফ-প্রযোজিত ওয়েব সিরিজ 'কলেজ রোমান্স'-এর বিষয়বস্তু অশ্লীল বলেই জানিয়েছে আদালত। আদালত সরকারকে এই ধরনের প্ল্যাটফর্মে ভাষার উপর নজরদারির জন্য পদক্ষেপ করতে বলেছে। বিচারক রায় দিয়েছেন, TVF, অনুষ্ঠানের পরিচালক সিমারপ্রীত সিং এবং অভিনেতা অপূর্ব অরোরার বিরুদ্ধে ধারা ৬৭ (ইলেকট্রনিক মাধ্যমে অশ্লীন বিষয়ের প্রকাশ বা প্রসার) এবং ৬৭-এ (যৌন অশ্লীলতার উপাদান প্রকাশ বা প্রসারের জন্য শাস্তি) এর অধীনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

More Articles