ভারতীয়দের দ্রুত তেহরান ছাড়ার নির্দেশ, ইজরায়েলের সঙ্গে সংঘর্ষে যেখানে দাঁড়িয়ে ইরান
Iran Israel Conflict: ইরানের বিদেশমন্ত্রী ও প্রধান পারমাণবিক আলোচক আব্বাস আরাঘচি জানিয়েছেন, ইজরায়েল যে আঘাত করেছে তা পারস্পরিক কূটনৈতিক সম্পর্কের আগুনে ঘি ঢেলেছে।
ইরান ও ইজরায়েলের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সংকটের আবহে নতুন করে নির্দেশিকা জারি করেছে ভারত। তেহরানে বসবাসরত ভারতীয় নাগরিকদের দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করার এবং দ্রুত তেহরান ছেড়ে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে ভারত সরকার। তেল আভিভে ভারতীয় দূতাবাস নাগরিকদের স্বার্থে সর্বক্ষণের হেল্পলাইনও চালু করেছে। টানা পঞ্চম দিন ইজরায়েলের উপর প্রত্যাঘাত হিসেবে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইরান। আশঙ্কা, গোটা মধ্য প্রাচ্য জুড়েই এই অশান্তির স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে পড়তে পারে অচিরেই, ফলে সংঘাত আরও তীব্র আকার নেওয়ার দিকেই এগোতে পারে। দীর্ঘদিনের শত্রু ইরান ও ইজরায়েলের মধ্যে সাম্প্রতিক উত্তেজনা বৃদ্ধির নেপথ্যে আছে তেল আভিভ গত সপ্তাহে ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্রগুলির উপর ইজরায়েলের 'অপারেশন রাইজিং লায়ন'। ওই আঘাতের পর থেকে থেমে নেই তেহরানও। ইজরায়েলি শহরগুলিতে একাধিক হামলায় এখনও অবধি ২০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু ঘটেছে, আহত শতধিক।
ইরানের স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর বলছে, ইরান কর্তৃপক্ষ তেহরানের ইজরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের একটি ড্রোন উত্পাদনকারী কারখানার হদিশ পেয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরান কর্তৃপক্ষ তেহরান এবং আলবারজ প্রদেশ জুড়ে চালানো নানা পৃথক অভিযানে ইজরায়েলের মোসাদ গোয়েন্দা সংস্থার হয়ে কাজ করার অভিযোগে দু'জনকে গ্রেফতার করেছে। ২০০ কেজিরও বেশি বিস্ফোরক, ২৩ টি ড্রোন, লঞ্চার এবং অন্যান্য প্রযুক্তিগত সরঞ্জাম বাজেয়াপ্তও করা হয়েছে।
ইরানের বিদেশমন্ত্রী ও প্রধান পারমাণবিক আলোচক আব্বাস আরাঘচি জানিয়েছেন, ইজরায়েল যে আঘাত করেছে তা পারস্পরিক কূটনৈতিক সম্পর্কের আগুনে ঘি ঢেলেছে। আব্বাস আরাঘচি বলছেন, "মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পারমাণবিক আলোচনার মাঝেই ইরানের বিরুদ্ধে ইজরায়েলি এই আগ্রাসন এক বড় কূটনৈতিক ধাক্কা।" ইরান এবং ইজরায়েলের দ্বন্দ্ব যত বাড়ছে আমেরিকা 'প্রতিরক্ষামূলক অবস্থান’ বাড়ানোর জন্য মধ্য প্রাচ্যে নিজেদের সামরিক উপস্থিতি জোরদার করছে। মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথ বলেছেন, তিনি মধ্য প্রাচ্যে অতিরিক্ত প্রতিরক্ষামূলক ক্ষমতা মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছেন।
আরও পড়ুন- ইরান হামলার বিরোধিতা থেকে কেন সমর্থনে ট্রাম্প?
ইরান পারমাণবিক অ-প্রসারণ চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার হুমকি দিয়েছে। পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সামর্থ্যের বিস্তার রোধের জন্যই এই চুক্তি করা হয়েছিল। শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পারমাণবিক শক্তি বিকাশের লক্ষ্যে এই চুক্তি করা হয়েছিল। ইরান এই চুক্তি ভেঙে বেরিয়ে এলে তার প্রভাব কী হতে পারে, সহজেই অনুমেয়। যদিও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলছেন, তিনি বিশ্বাস করেন যে, ইজরায়েলের সঙ্গে চলতে থাকা এই সংঘাতের মধ্যেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পারমাণবিক কর্মসূচিতে একটি চুক্তিতে সই করতে চায় ইরান। "আমি যেটায় সই করতে বলেছিলাম, ইরানের সেই চুক্তিতে সই করা উচিত ছিল। কী লজ্জা! মানবজীবনের কী অপচয়! সহজভাবে বলতে গেলে, ইরানের কোনও পারমাণবিক অস্ত্র থাকতে পারে না। আমি এটা বারবার বলেছিলাম! প্রত্যেকেরই এক্ষুণি তেহরান ছেড়ে বেরিয়ে আসা উচিত!” সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন ট্রাম্প।
সোমবার হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট মধ্য প্রাচ্যের পরিস্থিতির কারণে একদিন আগেই কানাডায় জি ৭ শীর্ষ সম্মেলন ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। চিন, তুরস্ক এবং যুক্তরাজ্যের মতো অনেক দেশই ইরান ও ইজরায়েলকে উত্তেজনা হ্রাস করার জন্য অবিলম্বে পদক্ষেপ করার আহ্বান জানিয়েছে।