ভারতের এই মন্দিরে পূজিত হয় মোটরবাইক! 'বুলেট বাবা'-র নেপথ্যে রয়েছে গা ছমছমে যে ঘটনা
Bullet Baba Temple: মন্দিরটিতে ওম বান্নার একটি আবক্ষ মূর্তিও রয়েছে। তার পিছনেই রয়েছে সেই বুলেট মোটরসাইকেল।
ঈশ্বর নিরাকার, অনেকেই বলেন। অনেকেই বলেন মন্দিরে মসজিদে সে দেব নাই, রয়েছে সর্বত্র, সকল প্রাণে। কেউ কেউ আবার বলেন, ঈশ্বর মূর্তিমান। প্রতিমাতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা সম্ভব। কেউ পাথরেই দেবত্ব খুঁজে পান, কেউ ধর্মগ্রন্থে। সর্বব্যাপী এই সত্ত্বা যা মহাবিশ্বের প্রতিটি কোণে অবস্থান করে বলে মানুষের বিশ্বাস তিনি কিনা বাস করছেন বাইকে? পশু-পাখি-প্রতিমা কোনও কিছুই না, একটি 350cc বুলেট মোটরসাইকেলকেই দেবতা বলে পুজো করা হয় এই ভারতে। রাজস্থানের রোপার জেলার মানুষজন বুলেট বাইককেই ভোগ দেন, মালা পরান, আবার প্রার্থনাও করেন বাইক দেবতার কাছে। অবিশ্বাস্য মনে হলেও এমনটাই সত্যি!
যোধপুর থেকে প্রায় ৫০ কিমি দূরে এই বুলেট বাবার দর্শন করতে ভিড় জমান অজস্র মানুষ। বুলেট বাবাকে আসলে 'সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফের' দেবতা বলা যায়। রাস্তাঘাটে নিরাপদে যাত্রার জন্য 'বুলেট বাবা'র কাছে আশীর্বাদ চান ভক্তরা। বুলেট বাবার আশীর্বাদের হাত (হ্যান্ডেল বা স্ট্যান্ড বলা যায়) মাথায় থাকলে দুর্ঘটনা এড়ানো যায় বলে বিশ্বাস করেন মানুষ৷ কিন্তু যান্ত্রিক এই দেবতার ভোগ-নৈবেদ্য কী? পেট্রল ডিজেল? নাহ! বুলেট বাবার ভক্তরা বুলেট বাইককে মদ দিয়ে প্রণাম জানান। বাইকের গায়ে মদ ছিটিয়েই প্রণাম করা হয়। কারণ মদ্যপানই সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম প্রধান কারণ।
এই অদ্ভুত মন্দিরে সকাল ও সন্ধ্যায় নানা আচার-অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে পুজো হয়। ঢোল বাজিয়ে, প্রধান পুরোহিতের গান এক দ্রষ্টব্য বিষয়। বুলেট বাবার দর্শনের জন্য লম্বা লাইন পড়ে রোজ। পালি-যোধপুর মহাসড়কের উপর দিতে যেতে হলে বেশিরভাগ যাত্রীই দিনের যে কোনও সময় ওম বান্না মন্দিরের চারপাশে ব্যাপক জ্যাম দেখতে পাবেন। কিন্তু বুলেটকে পুজোর কারণ কী? এর নেপথ্যে রয়েছে এক অদ্ভুত গল্প।
আরও পড়ুন- হার মানল তাজমহল, গিজার পিরামিডও! মায়াপুরে বিশ্বের বৃহত্তম মন্দিরের অন্দর চোখ ধাঁধাবেই
বুলেট বাবার গল্প জানতে হলে ফিরতে হবে ১৯৯৮ সালে। স্থানীয় এক গ্রামের নেতা ওম সিং রাঠোরের ছেলে ওম বান্না এক মারাত্মক দুর্ঘটনার শিকার হন। ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান তিনি আর তাঁর মোটরসাইকেলটি খাদে পড়ে যায়। পুলিশ মোটরসাইকেলটিকে খাদ থেকে তুলে থানায় নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু পরের দিনই ঘটে এক অবাক ঘটনা। থানা থেকে আশ্চর্যজনকভাবে উধাও হয়ে যায় মোটরসাইকেলটি এবং দুর্ঘটনাস্থলে ফের গাড়িটিকে পড়ে থাকতে দেখা যায়।
পুলিশ আবারও মোটরসাইকেলটিকে তুলে থানায় নিয়ে আসে, জ্বালানির ট্যাঙ্ক খালি করে বেঁধে রাখা হয়। কিন্তু পরের দিন ফের একই। থানা থেকে আপনা আপনিই উধাও হয়ে মোটরসাইকেলটিকে দুর্ঘটনাস্থলে পড়ে থাকতে দেখা যায়। এই অদ্ভুত ঘটনা থেকে মানুষের বিশ্বাস জন্মায়, তাঁরা বিশ্বাস করতে শুরু করেন 'টারজান - দ্য ওয়ান্ডার কার' সিনেমার মতো ওম বান্নার আত্মা মোটরসাইকেল ছেড়ে যেতে পারেনি।
আরও পড়ুন- হাত পাতলেই মেলে ‘চাউমিন’ প্রসাদ, যেভাবে কলকাতার কালী মন্দিরের সঙ্গে জড়িয়ে পড়লেন চিনারা
স্থানীয়দের বিশ্বাস, ওম বান্না এখনও রাস্তায় বাইক নিয়ে চড়ে বেড়ান, কখনও কখনও অভাবীদের সাহায্যও করেন। প্রচলিত একটি গল্প খুব জনপ্রিয় পর্যটকদের কাছেও। একজন গাড়ি চালকের গাড়িটি ওম বান্না মন্দির থেকে দূরে একটি খাদে পড়ে যায়। চালক গুরুতর আহত হন। প্রবল রক্তপাত হয়। তখনই ওম বান্নার আত্মা এসে তাকে নাকি সাহায্য করেন।
মন্দিরটিতে ওম বান্নার একটি আবক্ষ মূর্তিও রয়েছে। তার পিছনেই রয়েছে সেই বুলেট মোটরসাইকেল। কাঁচের বিশাল বাক্সের মধ্যে ঢাকা রয়েছে সেই বাইক, প্রচুর ফুল আর মালায় ঢাকা। বিশেষ করে রয়াল এনফিল্ড চালাতে যারা পছন্দ করেন তাঁদের কাছে এই স্থানটি ভীষণ আকর্ষণীয়। শুধুই ধর্মীয় স্থান নয়, রাজস্থানের গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্রও হয়ে উঠেছে এই ওম বান্না মন্দির।