কেন বাংলাদেশি পণ্যে বিধিনিষেধ ভারতের?
Bangladesh: সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রায় ৭০ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রফতানি হত।
স্থলপথে বাংলাদেশ থেকে আমদানি পণ্যের উপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে ভারত। এপ্রিল মাসের শুরুতেই ভারত তৃতীয় দেশে রফতানি পণ্য পাঠানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে দেওয়া ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা প্রত্যাহার করে নিয়েছিল। জবাবে বাংলাদেশও স্থলবন্দর দিয়ে ভারতীয় সুতো আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়।
বিধিনিষেধ কী কী? কোন কোন পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ? কোন দেশে কী প্রভাব পড়বে?
বিধিনিষেধ
১৬ মে শুক্রবার ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ ফরেন ট্রেড বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। ঘোষণা করা হয়েছে- কোন স্থলবন্দর দিয়েই তৈরি পোশাকসহ কিছু বাংলাদেশি পণ্য ভারতে আমদানি করা যাবে না। আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা, মিজোরাম এবং পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংরাবান্ধা ও ফুলবাড়ী দিয়ে ভারতের আমদানি বন্ধ করার কথা বলা হয়েছে। আমদানি নিষেধ করা হয়েছে-
১) ফল, ফলের-স্বাদযুক্ত যে কোনো ধরনের পানীয় ও কার্বোটেড ড্রিংকস,
২) বেকারি, চিপস, স্ন্যাকস এবং কনফেকশনারিতে তৈরি প্রক্রিয়াজাত খাবার,
৩) তুলো ও সুতোর পণ্য,
৪) পিভিসি-সহ বিভিন্ন প্লাস্টিকের পণ্য,
৫) কাঠের তৈরি আসবাবপত্র,
তবে মাছ এলপিজি ভোজ্যতেল ও পাথর আমদানি করা যাবে। ভারতের তরফে জানানো হয়েছে, ভারতের ওপর দিয়ে ভুটান ও নেপালে বাংলাদেশি পণ্যের রফতানি অব্যাহত থাকবে। পোশাক শুধুমাত্র কলকাতা ও মুম্বাইয়ের নভসেবা সমুদ্র বন্দরের দিয়েই ভারতে প্রবেশ করতে পারবে।
ব্যবসায় প্রভাব
গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)-এর দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, বিষয়টি শুধুই অর্থনৈতিক নয় এতে বাংলাদেশ এবং ভারতের সম্পর্কের যে টানাপোড়েন তাও স্পষ্ট হয়েছে। এতে ভারতীয় আমদানিকারকরাও ক্ষতির মুখে পড়বেন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তথ্য বলছে, ভারতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রফতানি বাড়ছিল। ভারতের বেশ কিছু রাজ্যে বিভিন্ন কোম্পানি নতুন করে বিনিয়োগের পরিকল্পনাও করছিল। নতুন ঘোষণার পর দুই দেশেরই ব্যবসায়িকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রায় ৭০ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রফতানি হত। ২০২৩-২৪ সালে বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রায় ১৫৭ কোটি ডলারে পণ্য রফতানি করা হয়েছিল। পোশাক ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যই সেখানে বেশি ছিল। এছাড়াও ছিল প্লাস্টিক পণ্য ও আসবাব সামগ্রী। আমদানির ক্ষেত্রে ২০২৩-২৪ সালে বাংলাদেশ ভারত থেকে আমদানি করেছে ৯০০ কোটি ডলারের পণ্য। গত বছর বাংলাদেশ আরও অন্যান্য দেশে ৩৮ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রফতানি করেছে। বলে রাখা ভালো, এক বিলিয়ন ডলারেরও বেশি পণ্য অন্য দেশে রফতানি হয়েছে ভারতের বন্দর থেকে। সে সময় ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধে পেত বাংলাদেশ।
সমুদ্র বন্দরে খরচ বেশি
সমুদ্র বন্দর দিয়ে পণ্য পাঠালে খরচ বেশি হয় এবং সময়ও বেশি লাগে। তৈরি পোশাক শিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ'র সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ফয়সাল সামাদ বিবিসি বাংলা-কে বলেছেন- এই সিদ্ধান্তে দুই দেশেরই ক্ষতি হবে। তাঁর কথায়, "স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য পাঠালে আমাদের খরচ ও সময় কম লাগে। সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে পণ্য পাঠালে ব্যয় বাড়বে। আবার সময়ও অনেক বেশি লাগবে। কিন্তু এতে যে শুধু আমাদের ক্ষতি হবে তা নয়। ভারতীয় আমদানিকারকদেরও তো খরচ বাড়বে।"
স্থল বন্দর ব্যবহার করেই ভারতে রফতানি বাড়ছিল। ভারতে সবচেয়ে বেশি পণ্য রফতানি করে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ। তারা ৫০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি পণ্য রফতানি করে। তবে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ভারত নতুন বিধিনিষেধের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি। তিনি এও দাবি করেছেন যে, এই বিধি-নিষেধে বাংলাদেশের চেয়ে ভারতের ব্যবসায়ীরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। উল্লেখ্য, উত্তর-পূর্ব ভারতে বাংলাদেশী পণ্যের বড়ো বাজার রয়েছে। ভারতের এই অংশেই সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
উল্লেখ্য, গত ৫ অগস্ট শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করে বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন। বাংলাদেশের আওয়ামী সরকারকে কেন্দ্র করে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন ছিলই। বিশ্লেষকরা একাংশ বলছেন, এই ধরনের সিদ্ধান্ত এমনি এমনি হয় না। এই সিদ্ধান্তে দুই দেশের সম্পর্ক আরও খারাপ হতে পারে। রফতানির এই নিষেধাজ্ঞায় বাংলাদেশ কী বিকল্প বেছে নেবে? এই সংকট থেকেই বা কীভাবে বেরোবে বাংলাদেশ? তাই এখন দেখার।
Whatsapp
