বাংলাদেশে দু’মাস জেলবন্দির পর মুক্তি! তবু কেন অনিশ্চিত সাকিনা বেগমের আসাম ফেরা?
Sakina Begum Gets Bail in Bangladesh: সাকিনার পরিবার বারবার জানিয়েছে, তিনি জীবনে কখনও বাংলাদেশে যাননি। গত মে মাসের শেষদিকে অসুস্থ অবস্থায় বাড়ির বাইরে বেরোতেই স্থানীয় পুলিশ তাঁকে ধরে নিয়ে যায়।
অসমের নলবাড়ির ৬৮ বছরের সাকিনা বেগমের মতোই বহু বছর ধরে সীমান্তের দুই পারে আটকে পড়া মানুষের কাহিনি যেন এক দুঃস্বপ্ন হয়ে আছে। ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী’ তকমায় তাঁকে বাংলাদেশে আটক করা হয়েছিল, যেমনভাবে এর আগে সোনালি খাতুন-সহ আরও বেশ কয়েকজনকে সীমান্তে পুশব্যাক করা হয়েছিল। ঢাকার আদালত জামিন দিলেও, তিনি নিজের রাজ্য অসমে ফিরতে পারবেন কি না তা এখনও স্পষ্ট নয়।
সাকিনার পরিবার বারবার জানিয়েছে, তিনি জীবনে কখনও বাংলাদেশে যাননি। গত মে মাসের শেষদিকে অসুস্থ অবস্থায় বাড়ির বাইরে বেরোতেই স্থানীয় পুলিশ তাঁকে ধরে নিয়ে যায়। এরপর খুব দ্রুত তাঁকে ‘বিদেশি নাগরিক’ দাবি করে বাংলাদেশ সীমান্তে ‘পুশ-ব্যাক’ করা হয়। বাংলাদেশে পৌঁছানোর পর মিরপুরের ভাষানটেক থানায় তাঁর বিরুদ্ধে অবৈধ অনুপ্রবেশের মামলা হয়।
আরও পড়ুন
অন্তঃসত্ত্বা সোনালি খাতুন বনাম ভারতরাষ্ট্র: পরিযায়ী শ্রমিকের যুদ্ধ চলছেই
অগাস্ট থেকে তিনি ঢাকার কাশিমপুর জেলে ছিলেন। তাঁর জামিনের আবেদন টানা তিনবার খারিজ হয়। পরে বিষয়টি সংবাদমাধ্যম ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর নজরে আসতেই প্রশাসন নড়েচড়ে বসে। অবশেষে ২৩ নভেম্বর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত তাঁকে জামিন দেয়। মুক্তি পেলেও তাঁর মনে তখন একটাই প্রশ্ন, তিনি কোথায় থাকবেন? তাঁর বাড়ি তো আসামে।
মিরপুরের জাকিয়া খাতুন নামে এক নারী জাকিয়াকে দেখিয়ে বলেন, “ওর বাড়িতেই যাব। ওরা এখন আমার নিজের মানুষ।” জাকিয়ার পরিবারই এর আগে সাকিনাকে আশ্রয় দিয়েছিল। জামিনের শর্ত অনুযায়ী, প্রতি সাত দিনে একবার থানাকে জানাতে হবে সাকিনা কোথায় থাকছে এবং তাঁর নিরাপত্তার তথ্য।
গুয়াহাটি হাইকোর্টে ইতোমধ্যে সাকিনার পরিবার মামলা করেছে। পরিবারের দুটি দাবি, তাঁকে গ্রেফতার করে বিএসএফের হাতে তুলে দেওয়াকে বেআইনি ঘোষণা করা হোক এবং সরকার যেন তাঁকে ভারত ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করে। আইনজীবী আব্দুর রেজ্জাক ভুঁইঞ্যার কথায়, সাকিনাকে পুশ-ব্যাক করার প্রক্রিয়া আইনসম্মত নয়। তাঁর মতে, সাকিনাকে আদালতে হাজির করে সকলকে জানানো জরুরি প্রশাসন কীভাবে তাঁকে গ্রেফতার ও 'পুশব্যাক' করেছিল। ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ঢাকার ভারতীয় হাই কমিশনের সহযোগিতা চেয়ে আদালতে সেই আবেদনও করা হয়েছে।
আরও পড়ুন
নথি যাচাই না করেই কেন ঘাড় ধাক্কা সোনালিদের? কেন্দ্রের কাছে জবাব চায় সুপ্রিম কোর্ট
প্রসঙ্গত, ২০১২ সালে আসামের বিদেশি ট্রাইব্যুনাল সাকিনাকে ‘বিদেশি’ ঘোষণা করেছিল। পরে হাইকোর্টও সেই সিদ্ধান্ত বহাল রাখে। এর পর তাঁকে প্রায় পাঁচ বছর বিদেশিদের আটক কেন্দ্রেও রাখা হয়েছিল। করোনাকালে জামিনে বেরিয়ে তিনি বাড়ি ফিরেছিলেন। কিন্তু এই বছরের মে মাসে ফের তাঁকে আটক করে পুলিশের বদলে সরাসরি বিএসএফের কাছে হস্তান্তর করা হয়, এমনটাই আদালতে জানিয়েছে আসাম সরকার। তবে বিএসএফের হেফাজত থেকে তিনি কীভাবে বাংলাদেশে পৌঁছলেন তার কোনো ব্যাখ্যা আজও পাওয়া যায়নি।
দু’মাস বাংলাদেশ জেল কাটিয়ে সাকিনা বেগম আপাতত মুক্ত। কিন্তু তাঁর মুক্তি অসম্পূর্ণ, কারণ তিনি এখনো নিজের দেশে ফিরতে পারছেন না। জামিন পেলেও ভারত তাঁকে নাগরিক হিসেবে ফেরত নেবে কি না তা এখনও অজানা। তাঁর নাগরিকত্ব প্রমাণের নথি নেই বা হারিয়ে গিয়েছে। অন্যদিকে, বাংলাদেশে মামলা নিষ্পত্তি না হলে প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়াও শুরু হবে না। দু’দেশের প্রশাসনের উপর নির্ভর করছে তাঁর ভবিষ্যৎ। একজন বয়স্ক নারীর ভাগ্য এখন ঝুলে আছে ভারত ও বাংলাদেশের প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের উপর। যেন সাকিনার নিজের পরিচয় প্রমাণের নতুন সংগ্রাম শুরু হলো।

Whatsapp
