১১ হাজার কোটির ব্যবসা! কীভাবে অসাধ্যসাধন করলেন ভারতের ধনীতম হোমিওপ্যাথ চিকিৎসক?
India’s Richest Homeopath Doctor: একটি জমিতে ৫০,০০০ টাকার বাজি ধরেন রামেশ্বর রাও। ব্যাস! হঠাৎ যেন বদলে যায় সবটা!
বাজি ধরে ফতুর হয়েছেন কতজন? সংখ্যাটা নিদেন কমও না। কিন্তু বাজি ধরে 'বাজিগর' হয়েছেন এমন মানুষ ব্যাতিক্রম বলেই তারা উদাহরণ। এক দেড়শো না, ৫০ হাজার টাকার বাজি ধরেছিলেন রামেশ্বর রাও। পেশায় একজন হোমিওপ্যাথ। প্রশিক্ষণের ডিগ্রিও রয়েছে তাঁর। কিন্তু কোনও ব্যবসায়িক ডিগ্রি নেই মোটেও। দরকারই বা কী? প্রথাগত ব্যবসার কোনও ধারণা না থাকা সত্ত্বেও আজ বিশাল ব্যবসায়িক সাম্রাজ্যের মালিক তিনি। তাঁর মোট সম্পত্তির পরিমাণ ১১,৪০০ কোটি টাকা! কীভাবে সম্ভব হলো এই অবাস্তব সফর? কৃষকের সন্তান তিনি। ছোট থেকেই বাহুল্য বা বিলাসিতা নেই জীবনে। পারিবারিক আয়ের দিক দিয়ে দেখতে হলে নিম্নবিত্তই তারা। অথচ সম্প্রতিই দেশের অন্যতম ধনকুবেরদের তালিকায় ঢুকে পড়েছেন রামেশ্বর। তারপর থেকে রামেশ্বরের সম্পদের পরিমাণ আরও ৪০০ মিলিয়ন ডলার বেড়েছে। একজন হোমিওপ্যাথ থেকে রামেশ্বের রাও আজ হয়ে উঠেছেন দেশের বিখ্যাত 'বিজনেস টাইকুন’। তবে সে সবের নেপথ্যে রয়েছে একটি বাজি, ৫০ হাজার টাকার বাজি! তারপর থেকে রামেশ্বর রাওকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি।
হায়দরাবাদের জুপল্লী রামেশ্বর রাওয়ের শুরুটা ছিল দেশের আরও হাজারো নিম্ন মধ্যবিত্ত, সুবিধা বঞ্চিত সন্তানদের মতোই। প্রাথমিক স্কুলে যেতেও কিলোমিটারের পর কিলোমিটার পথ হেঁটেই যেতে হতো তাঁকে। নিজেকে এসবের বাইরে দেখতে চাইতেন ঠিকই, আকাঙ্খা ছিল, তবে সামর্থ না। অগত্যা হোমিওপ্যাথির ডাক্তারিকেই পেশা হিসেবে বেছে নেন রামেশ্বর। সম্মানজনক পেশা অবশ্যই কিন্তু এই পেশার সীমাবদ্ধতার কারণে তেমন বড় কোনও সম্ভাবনাও ছিল না। ১৯৭৪ সালে মাহবুবনগর জেলায় তাঁর গ্রাম থেকে হায়দরাবাদে পাড়ি দেন রামেশ্বর। বয়স নিতান্তই কম, অভিজ্ঞতা আরও কম। কিন্তু বড় শহরে এসে বেশ কয়েকটি মোড় ঘোরানো ঘটনা ঘটে। একটি অপ্রত্যাশিত সুযোগ রামেশ্বরের সাফল্যের পথ প্রশস্ত করে।

আরও পড়ুন- ৫১,০০০ স্কোয়ার ফুটের প্রাসাদে বাস! চেনেন কলকাতার সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিকে?
কলেজের দিনগুলিতে ছাত্রনেতা হিসাবে পরিচিত ছিলেন রামেশ্বর। অজানা শহরে এই রাজনীতির সূত্রেই সামান্য কিছু পরিচয় পরিচিতি তাঁর ঘটে। হায়দরাবাদের এক প্রান্তে দিলসুখনগর এলাকায় থাকতে শুরু করেন রামেশ্বর। একটি হোমিওপ্যাথি ক্লিনিক গড়ে তোলেন এবং সেখানেই রোগী দেখতে থাকেন। ৮০-র দশক। রিয়েল এস্টেটের বাজার শুরু হচ্ছে দেশে। হোমিওপ্যাথির চেম্বারে আসা রোগীদের থেকেই রিয়েল এস্টেটের গল্প শুনে আগ্রহ বাড়তে থাকে রামেশ্বরের। রোগীদের অনেকেই তাঁকে রিয়েল এস্টেটের ব্যবসাতে যুক্ত হতে বলেন। একটা 'রিস্ক' নিয়ে দেখার ইন্ধন জুগিয়ে দেন সকলে।
একটি জমিতে ৫০,০০০ টাকার বাজি ধরেন রামেশ্বর রাও। ব্যাস! হঠাৎ যেন বদলে যায় সবটা! মাত্র ৩ বছরে তিনি বিনিয়োগের তিনগুণ রিটার্ন পান। রামেশ্বর বুঝতে পারেন, এই পথে এগোলে নিজের স্বপ্নের পথে এগোবেন। রিয়েল এস্টেটে পাকাপাকিভাবে ঢুকে যান রামেশ্বর, হোমিওপ্যাথির অনুশীলন ছেড়ে দেন। ১৯৮১ সালে, তিনি তাঁর প্রথম কোম্পানি মাই হোম কনস্ট্রাকশন শুরু করেন।
পরবর্তী কয়েক দশকে, রামেশ্বর রাওয়ের নাম উচ্চারিত হতে থাকে শহরের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের সঙ্গেই। আবাসিক সমিতি এবং বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ থেকে রামেশ্বর আস্তে আস্তে সিমেন্ট উৎপাদনে এগোন। তাঁর ফার্ম মহা সিমেন্টের বার্ষিক ব্যবসা ৪,০০০ কোটি টাকার। দক্ষিণ ভারতের শীর্ষস্থানীয় সংস্থাগুলির মধ্যে একটি এই মহা সিমেন্ট। চার ছেলে এবং চার পুত্রবধূই এখন সামলান রামেশ্বরের বিশাল সাম্রাজ্য! স্বপ্নকে ছুঁয়েছেন শুধু না, তাকে ছাড়িয়ে অনেকখানি উঠে গিয়েছেন রামেশ্বর। সবটুকুর নেপথ্যে একটি ৫০,০০০ টাকার 'রিস্ক'!

Whatsapp
