বাড়বে আইফোনের দাম! ট্রাম্পের সেকেন্ডারি শুল্কের ফলে বিশ্ব অর্থনীতিতে কী প্রভাব পড়বে?

Trump : সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্রের পর রাশিয়া বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম তেল উৎপাদনকারী দেশ। জাহাজ ট্র্যাক করে তৈরি করা ব্লুমবার্গের এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, এ বছর রাশিয়ার তেল রফতানির পরিণাম কমছে।

রাশিয়ায় উপর সবচেয়ে বেশি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু তবুও তারা ইউক্রেনে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলছেন, এই পরিস্থিতির পরিবর্তন চান তিনি। তাই এই দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক রাখা সমস্ত দেশের উপর চড়া শুল্ক আরোপ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বলাই বাহুল্য, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ বিশ্ব অর্থনীতি এবং ভূ-রাজনীতির ক্ষেত্রে জটিল ধাক্কা।
দেখাযাক এর ফলে কী প্রভাব পড়বে?

ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন, যদি আগামী ৮ অগাস্টের মধ্যে  রাশিয়া ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধ বিরতিতে রাজি না হয়, তবে এই দেশের সঙ্গে বাণিজ্য করা যে কোনো দেশের উপরই নতুন সেকেন্ডারি শুল্ক আরোপ করা হবে। আর রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যিক সম্পর্ক ভালো। এর জন্য ভারতের উপর প্রথমেই ২৫% শুল্ক আরোপ করেছিলেন ট্রাম্প। এবার আরও ২৫% শুক্ল চাপালেন। অর্থাৎ ভারতের উপর দু’দফায় মোট ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

রাশিয়া সবচেয়ে বেশি রফতানি করে তেল ও গ্যাস। আর চীন, ভারত ও তুরস্ক মস্কোর সবচেয়ে বড় ক্রেতা। রাশিয়ার কাছ থেকে সামরিক সরঞ্জাম ও তেল কেনে ভারত। এটিই ট্রাম্পের মাথাব্যথার কারণ। রাশিয়ার তেল কেনার জন্য ভারতের উপর অতিরিক্ত জরিমানা আরোপ করেছেন ট্রাম্প। সেন্টার ফর রিসার্চ অন এনার্জি অ্যান্ড ক্লিন এয়ার জানিয়েছে, ২০২২ সালে ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধর পর থেকে ভারত রাশিয়ার তেলের দ্বিতীয় বৃহত্তম ক্রেতা হয়ে উঠেছে।

আরও পড়ুন- অপারেশন সিঁদুর: ভারতের হারানো যুদ্ধবিমানের সংখ্যা নিয়ে কেন মাথাব্যথা ট্রাম্পের?

ট্রাম্প প্রশাসন আগেও সেকেন্ডারি শুল্ক আরোপ করেছে। এর আগে ভেনেজুয়েলার তেল ক্রেতাদের উপর সেকেন্ডারি শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন রাশিয়ার বিরুদ্ধে সেকেন্ডারি শুল্ক আরোপ করা হলে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব পড়বে।

সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্রের পর রাশিয়া বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম তেল উৎপাদনকারী দেশ। তবে জাহাজ ট্র্যাক করে তৈরি করা ব্লুমবার্গের এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, এ বছর রাশিয়ার তেল রফতানির পরিণাম কমছে। যদি আবার এই শুল্ক কার্যকর হয় তবে বিশ্ব বাজারে রাশিয়ার তেল ও গ্যাসের সরবরাহ আরও কমবে। এর ফলে তেলের দাম বেড়ে যেতে পারে বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।

যদি সেকেন্ডারি শুল্ক আরোপ করা হয় তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের সংস্থাগুলোকে ভারতের পণ্য আমদানি করার সময় শতভাগ শুল্ক দিতে হবে। এই নীতির উদ্দেশ্য হলো, যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীরা যাতে অন্য কোথাও থেকে সস্তায় পণ্য কিনে নেয়। ফলে ভারতের রাজস্ব কমবে।

এই সেকেন্ডারি শুল্ক চাপানোর ফলে আমেরিকানরা ভারতের মোবাইল ফোন কেনার ক্ষেত্রে বড় ধাক্কা খাবে। মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানি অ্যাপল ভারতে তাদের আইফোন উৎপাদনের বড় অংশ অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে। বিশেষ করে সেগুলোই স্থানান্তর করা হচ্ছে যেগুলো তারা যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি করতে চায়। বিশ্লেষকরা বলছেন, যদি এসব পণ্য নতুন চুক্তিতে পড়ে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতাদের এই ফোন দ্বিগুণ দামে কিনতে হতে পারে। কারণ আমদানি শুল্ক মূলত সংস্থার উপর চাপানো হয় আর এই সংস্থাগুলি সাধারণত সব খরচই গ্রাহকের থেকে আদায় করে।

আরও পড়ুন- পুতিন কাছে এলেন বলেই ট্রাম্প দূরে গেলেন?

অন্যদিকে, রাশিয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস ও মেশিনারির মতো পণ্য অন্য কোনো দেশ থেকে পাওয়া খুব কঠিন। ফলে এই চুক্তি হলে আমেরিকানদেরও বেশি টাকা দিয়ে কিনতে হবে। আবার ফিনল্যান্ডভিত্তিক সেন্টার ফর রিসার্চ অন এনার্জি অ্যান্ড ক্লিন এয়ারের এক বিশ্লেষণে দেখা গিয়েছে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং তুরস্ক এখনও রাশিয়ার সবচেয়ে বড় জ্বালানি ক্রেতা। রাশিয়ান জ্বালানিতে শতভাগ শুল্ক আরোপ করা হলে ইইউ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি হওয়া পণ্যের পরিমাণ কমে যেতে পারে বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।

তবে ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে, ভারত-আমেরিকার মধ্যে বাণিজ্যচুক্তি চূড়ান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম। এখনও পর্যন্ত দু’দেশের মধ্যে পাঁচ দফায় আলোচনা হয়েও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়নি, আরও আলোচনা হওয়ার কথা। চুক্তি হওয়ার আগে অন্তর্বর্তী সমঝোতা করতে চাইছে দুই দেশ। তাই মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধিদের ভারতেও আসার কথা রয়েছে। আগেই জানা গিয়েছিল, আমেরিকা চায় ভারত কৃষিপণ্য, দুধ এবং দুগ্ধজাত পণ্যের বাজারে তাদের সুবিধা করে দিক। কিন্তু ভারত তাতে রাজি হয়নি। এখনো দেখার, ভারত-আমেরিকার মধ্যে চূড়ান্ত বাণিজ্যচুক্তি কী হয়?

 

More Articles