ইরান-ইজরায়েল সংঘর্ষ! কী প্রভাব পড়বে ভারতে?
Iran-Israel conflict: রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের দাবি, দীর্ঘ সময় ধরে সংঘর্ষ চললে খনিজ তেলের দাম বাড়বে। ইরান-ইজরায়েল সংঘর্ষে বন্ধ হতে পারে উপসাগরীয় দেশ লাগোয়া সমুদ্র বাণিজ্যের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা।
শুক্রবার সকালে ইরানের বিরুদ্ধে অপারেশন ‘রাইজিং লায়ন’ অভিযান চালায় ইজরায়েল। ইজরায়েলি হামলার পর শুক্রবার রাতে ইরানও পাল্টা হামলা চালায়। তাদের অভিযানের নাম ‘অপারেশন ট্রু প্রমিস ৩’। ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র প্রত্যাঘাত চলস ইজরায়েলের গুরুত্বপূর্ণ শহর তেল আভিভের দক্ষিণে। এর পরেই আবার পাল্টা হামলার হুঁশিয়ারি দেয় ইজরায়েল। পশ্চিম এশিয়ায় ফের যুদ্ধ পরিস্থিতি। তীব্র হচ্ছে ইরান-ইজরায়েল সংঘর্ষ। বিশ্ব রাজনীতির পাশাপাশি অর্থনীতিতে পড়েছে তার প্রভাব। এই দ্বন্দ্বে নয়াদিল্লির কপালেও পড়েছে চিন্তার ভাঁজ। প্রশ্ন উঠছে অবিরত, ইরান-ইজরায়েল দ্বন্দ্বে কী প্রভাব পড়তে পারে ভারতে?
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের দাবি, দীর্ঘ সময় ধরে সংঘর্ষ চললে খনিজ তেলের দাম বাড়বে। ইরান-ইজরায়েল সংঘর্ষে বন্ধ হতে পারে উপসাগরীয় দেশ লাগোয়া সমুদ্র বাণিজ্যের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা। তার ফলে বাড়তে পারে নানা পণ্যের দ্রব্যমূল্য।
অয়েল প্রাইস ডট কমের তথ্য অনুযায়ী, ১৩ জুন ভোরে ইরান-ইজরায়েল সংঘর্ষ শুরু হতেই বিশ্ব বাজারে ‘তরল সোনা’র দাম বেড়েছে প্রায় ৯%শতাংশ। এক দিনেই প্রায় পাঁচ ডলার বেড়ে ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দাম বর্তমানে প্রতি ব্যারেলে ৭৪ থেকে ৭৫ টাকার মধ্যে হয়ে গিয়েছে। ওপেক বাক্সেটে এর দাম ৭০ থেকে ৭২ টাকা। যুদ্ধ আরও ভয়াবহ রূপ নিলে ব্যারেল প্রতি অশোধিত তেলের দাম ৯০ থেকে ৯৫ ডলার ছাড়াতে পারে বলেও জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
পশ্চিমি গণমাধ্যমগুলির দাবি, একদিনে প্রায় ৩৩ লক্ষ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল উত্তোলন করে ইরান। এটি বিশ্বব্যাপী তরল সোনা উৎপাদনের প্রায় ৩%। তেহরান এর মধ্যে দৈনিক ১৫ লক্ষ ব্যারেল তেল রফতানি করে থাকে। এর মূল ক্রেতা চিন এবং তুরস্ক। সাবেক পারস্য দেশ থেকে ৮০ শতাংশ অশোধিত তেল আমদানি করে বেজিং। যুদ্ধে পরিস্থিতির মধ্যে ইরান খনিজ তেলের সরবরাহ বন্ধ করলে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি সঙ্কটের মুখে পড়বে।
তবে, ইরান থেকে আর খনিজ তেল কেনে না ভারত। ভারতে আমদানি করা তরল সোনার ৩৬% আসে রাশিয়া থেকে। ২০২২ সাল থেকে ভারতকে সস্তা দরে অপরিশোধিত তেল বিক্রি করছে রাশিয়া।তখন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হয়েছিল। দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্থানে রয়েছে ইরাক এবং সৌদি আরব।
ইজরায়েল-ইরান সংঘাতে ভারতের পশ্চিম এশিয়ার তেল আমদানি সমস্যায় পড়লেও দেশের অন্দরে পেট্রল-ডিজেলের দাম বৃদ্ধির সম্ভাবনা কম বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ, মস্কো থেকে সস্তায় তরল সোনা কিনবে ভারত। এতে মোদি সরকারের নির্ভরশীলতা বাড়বে রাশিয়ার উপর। তবে ভবিষ্যতে ক্রেমলিনের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র থেকে তেল আমদানি বৃদ্ধি করতে পারে ভারত, যা এখন রয়েছে মাত্র ৩%।
তবে এই দ্বন্দ্বে ভারতের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ, পারস্য উপসাগর এবং হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দেওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। এতে পশ্চিম এবং মধ্য এশিয়ায় পণ্য পরিবহণ করতে পারবে না ভারত। অন্যদিকে, ইরান মদতপুষ্ট হুথিরা লোহিত সাগরের রাস্তা বন্ধ করে দিলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। তখন আর সুয়েজ খাল ব্যবহার করে ভূমধ্যসাগরে পৌঁছোতে পারবে না ভারতীয় জাহাজ। এতে ইউরোপে ভারতের বাজার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
অন্যদিকে, পাকিস্তানকে এড়াতে মধ্য এশিয়ায় বাণিজ্যে করতে দক্ষিণ ইরানের চাবাহার বন্দরটি তৈরি করেছে ভারত। কেন্দ্র সরকার এখানে বিপুল অঙ্কের বিনিয়োগ করেছে। বর্তমানে এই রাস্তা রেলপথের মাধ্যমে যুক্ত করার কাজ করছিল ভারত। আবার রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যে করতেও ৭,২০০ কিলোমিটার লম্বা ‘আন্তর্জাতিক উত্তর-দক্ষিণ পরিবহণ করিডর’ ব্যবহার করে ভারত। এটি চাবাহার বন্দরের উপর দিয়ে গিয়েছে। যুদ্ধে ইজরায়েলি বায়ুসেনা এই এলাকাকে নিশানা করলে সমস্যায় পড়বে ভারত।
উল্লেখ্য, আরবের একাধিক দেশে আমেরিকার সামরিক ঘাঁটি রয়েছে। সেগুলিকেও এ বার নিশানা করা হবে বলে স্পষ্ট জানিয়েছেন সাবেক পারস্য দেশের সেনাকর্তারা। বিশ্লেষকদের মতে, এই সংঘাত পশ্চিম এশিয়ার আরও একাধিক জায়গায় ছড়িয়ে পড়তে পারে। ভারতের ইরান এবং ইজরায়েল উভয় দেশের সঙ্গেই কৌশলগত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। অন্যদিকে, রাশিয়া এবং চিনের প্রচ্ছন্ন সমর্থন রয়েছে তেহরানের দিকে। আর আমেরিকা সমর্থন রয়েছে করছে ইজরায়েলকে। এই পরিস্থিতি ভারত কী ভাবে সামাল দেবে এবং এরপর কী হতে পারে, তাই এখন দেখার।