ইরান-ইজরায়েল: কার সামরিক সক্ষমতা বেশি?

Israel-Iran conflict: গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ইরানের সামরিক সক্ষমতা ইজরায়েলের থেকে  তিন গুণ বেশি। তবে দুটি দেশই বিশ্বের সামরিক শক্তিধর দেশেরগুলির মধ্যে শীর্ষে থাকা কুড়িটি দেশে রয়েছে।

শুক্রবার ভোররাতে ইজরায়েল সুপরকল্পিত ভাবে ইরানের বহু জায়গায় একযোগে আক্রমণ শুরু করে।  ইরানের বেশ কিছু সামরিক ঘাঁটি, পরমাণবিক ঘাঁটি ধ্বংস হওয়ার খবর ফুটে উঠতে থাকে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায়। অভিযানে ইরানের ইসলামিক বিপ্লবী গার্ড কর্পস (IRGC)-এর প্রধান জেনারেল হোসেইন সালামি-সহ অন্তত তিনজন শীর্ষ জেনারেল নিহত হওয়ার খবর আসে। ঠিক তার পরেই ইরানের শীর্ষ নেতা আলি খামেনেই প্রত্যাঘাতের হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। এর কয়েক ঘণ্টা পরই তেল আভিভে মিসাইল চালায় তেহরান।  শনিবার সকালে দু'দফায়  প্রায় ১০০ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করেছে ইরান। ইরানের পাল্টা হামলায় ইজরায়েলে এখনও পর্যন্ত অন্তত ৬৩ জন আহত হয়েছেন বলে খবর। এ ঘটনায় মধ্যপ্রাচ্য-সহ পুরো বিশ্বের নজর এখন ইরান-ইজরায়েল পরিস্থিতির দিকে। প্রশ্ন উঠছে, এই আঘাত প্রত্যাঘাতের শেষ কোথায়? কার বাহুবল বেশি? ইরান-ইজরায়েলের মধ্যে সামরিক শক্তিতে কে এগিয়ে?

গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ইরানের সামরিক সক্ষমতা ইজরায়েলের থেকে  তিন গুণ বেশি। তবে দুটি দেশই বিশ্বের সামরিক শক্তিধর দেশেরগুলির মধ্যে শীর্ষে থাকা কুড়িটি দেশের মধ্যে রয়েছে। সামরিক সক্ষমতার দিক থেকে ইরানের অবস্থান ১৪তম আর ইজরায়েলের অবস্থান ১৭তম।

সামরিক শক্তিতে খরচ

ইরান ও ইজরায়েল দুই দেশই প্রতিরক্ষা খাতে প্রচুর অর্থ ব্যয় করে। তবে বাৎসরিক সামরিক বাজেটে ইরানের তুলনায় ইজরায়েল দ্বিগুণেরও বেশি খরচ করেছে। ইজরায়েলের প্রতিরক্ষা বাজেট হলো ২,৪৪০ কোটি ডলার। অন্যদিকে, সেখানে ইরানের বাজেট ৯৯৫ কোটি ডলার।

সৈন্যসংখ্যা

গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার-এর তথ্য অনুযায়ী, সৈন্য সংখ্যায় এগিয়ে রয়েছে ইরান। ইরানের ১১ লাখ ৮০ হাজার সেনা আছে। অন্যদিকে, ইজরায়েলের সেনা সংখ্যা ৬ লাখ ৭০ হাজার। এর মধ্যে ইরানের হাতে অতিরিক্ত সেনা (রিজার্ভ) আছে সাড়ে তিন লাখ  আর ইজরায়েলের অতিরিক্ত সেনা (রিজার্ভ) আছে ৪ লাখ ৬৫ হাজার।

যুদ্ধবিমান

ইরানের মোট সামরিক বিমানের সংখ্যা ৫৫১টি আর ইজরায়েলের ৬১২টি। ইরানের কাছে যুদ্ধ বিমান আছে ১৮৬টি আর ইজরায়েলের কাছে যুদ্ধবিমান আছে ২৪১টি। ইরানের অ্যাটাকিং বিমান সংখ্যা ২৩টি, অন্যদিকে ইজরায়েলের অ্যাটাকিং বিমান সংখ্যা ৩৯টি। ইরানের পরিবহন বিমান সংখ্যা ৮৬টি, ইজরায়েলের ১২টি। ইরানের প্রশিক্ষণ বিমান ১০২টি, আর ইজরায়েলের ১৫৫টি।

হেলিকপ্টার

গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার-এর তথ্য বলছে, ইরানের হেলিকপ্টার আছে ১২৯টি আর ইজরায়েলের ১৪৬টি। অ্যাটক হেলিকপ্টারের ক্ষেত্রে ইজরায়েল বেশি শক্তিশালী। ইজরায়েলের কাছে অ্যাটাক হেলিকপ্টার রয়েছে ৪৮টি। অন্যদিকে, ইরানের অ্যাটক হেলিকপ্টারের সংখ্যা ১৩টি।

ট্যাংক ও সাঁজোয়া গাড়ি

গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার- এর তথ্য অনুযায়ী, ট্যাংক ও সাঁজোয়া গাড়ি-র ক্ষেত্রে বেশি শক্তিশালী ইরান। ইসরায়েলের ট্যাংক আছে ১,৩৭০টি আর ইরানের ১,৯৯৬টি। ইরানের কাছে সাঁজোয়া গাড়ি আছে  ৬৫ হাজার ৭৬৫টি আর ইজরায়েলের আছে ৪৩ হাজার ৪০৩টি।

এছাড়া কামান জাতীয় সমরাস্ত্র সক্ষমতায় এগিয়ে ইরান। দেশটির রকেট কামান জাতীয় সমরাস্ত্র এমএলআরএস এর সংখ্যা ৭৭৫টি এবং সেলফ প্রপেলড কামান জাতীয় সমরাস্ত্রর সংখ্যা ৫৮০টি। অন্যদিকে, ইজরায়েলের সেফল প্রপেলড কামান জাতীয় সমরাস্ত্রর সংখ্যা ৬৫০টি এবং এমএলআরএস বা রকেট কামান জাতীয় সমরাস্ত্রর সংখ্যা ১৫০টি।

নৌবাহিনী

গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার জানিয়েছে, নৌশক্তিতে এগিয়ে ইরান। দেশটির ১০১টি যুদ্ধজাহাজ রয়েছে। তার মধ্যে ৭টি ফ্রিগেট এবং ২১টি টহল জাহাজ। ইসরায়েলের যুদ্ধজাহাজ সংখ্যা ৬৭টি। দেশটির টহল জাহাজ আছে ৪৫টি এবং এদের কোনো ফ্রিগেট নেই। সাবমেরিনের দিক থেকেও ইরান শক্তিশালী। ইরানের ১৯টি সাবমেরিন আছে।  ইসরায়েলের কাছে সাবমেরিন রয়েছে ৫টি।

পারমাণবিক শক্তি

সুইডেনের গবেষণা সংস্থা স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এসআইপিআরআই)- এর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের ৯টি দেশের কাছে প্রায় ১২ হাজার ৫১২টি পারমাণবিক অস্ত্র আছে। দেশগুলো হলো- যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, আমেরিকা, ফ্রান্স, চিন, ভারত, পাকিস্তান, উত্তর কোরিয়া এবং ইজরায়েল। ইরানের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে পারমাণবিক অস্ত্র কখনোই ছিল না। কিন্তু আমেরিকা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বেশ কয়েকবার দাবি করেছে যে ইরান তাদের ইউরেনিয়াম ব্যবহার করে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে। ইরান দাবি করে তাদের পরমাণু কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ। গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার তাদের রিপোর্টে উল্লেখ করেনি কোন দেশের কাছে কত পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে।

More Articles