সত্যিই ড্রাগ মাফিয়াকে বারাসাত থেকে লোকসভা প্রার্থী করেছে বিজেপি?
BJP Barasat Candidate Swapan Majumder: স্বপন মজুমদারকে অসমে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ২০১৬ সাল থেকে অসম বিজেপি শাসিত রাজ্য।
মানুষের হয়ে 'কাজ' করতে, সংসদে গিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে শেষে প্রার্থী হয়েছেন ড্রাগ মাফিয়া! পশ্চিমবঙ্গের আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে বারাসাত আসনে বিজেপি প্রার্থী স্বপন মজুমদারের মনোনয়ন ঘিরে ঠিক এই অভিযোগই উঠেছে। অভিযোগ স্বপন মজুমদার একটি আন্তর্জাতিক মাদক চোরাচালান চক্রের সঙ্গে জড়িত! গ্রেফতারও হয়েছেন তিনি। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, যে বিজেপি দুর্নীতি নিয়ে এত সরব, যে বিজেপি ইডি-সিবিআই দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীদেরও গ্রেফতার করে নেয় নিমেষে সেই বিজেপি একজন ড্রাগ মাফিয়া কেন প্রার্থী করল? সত্যিই কি স্বপন মজুমদার একজন ড্রাগ মাফিয়া?
স্বপন মজুমদার উত্তর ২৪ পরগনা জেলার দীর্ঘদিনের বিজেপি নেতা। বর্তমানে বনগাঁ দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়ক তিনি। ২০১৭ সালে গুয়াহাটিতে মাদক পাচারের মামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে হাওড়াগামী এক ট্রেন থেকে স্বপন মজুমদারকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। পুলিশ জানিয়েছিল, এই বিজেপি নেতার কাছে বিপুল পরিমাণ হেরোইন রয়েছে।
গত বিধানসভা নির্বাচনের সময় জমা দেওয়া হলফনামায় স্বপন মজুমদার এনডিপিএস আইনের এই মামলার কথা প্রকাশও করেন। তাঁর অভিযোগ, পুরো ঘটনাটিই আসলে তৃণমূল কংগ্রেসের সাজানো ষড়যন্ত্র। স্বপন বলছেন, “আমি ট্রেনে ওঠার আগেই পুলিশ কামরায় একটি ব্যাগ রেখেছিল এবং আমাকে ফাঁদে ফেলে। নয় মাস জেলে ছিলাম। পরে জামিনে মুক্তি পাই। আমি পেশায় একজন ঠিকাদার। আমি ২০১৪ সাল থেকে পূর্ণ সময়ের বিজেপি কর্মী।" স্বপন মজুমদারের ব্যাখ্যা, বনগাঁয় তৃণমূলের খুব একটা দাপট নেই, তাই এসব 'রটিয়ে' হাওয়া গরম করতে চাইছে তৃণমূল।
আরও পড়ুন- বাঙালি বিদ্বেষী মোদি-বিশ্বস্ত সঞ্জীব সান্যাল আসলে কে?
মজার ব্যাপার হলো, স্বপন মজুমদারকে অসমে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ২০১৬ সাল থেকে অসম বিজেপি শাসিত রাজ্য। সরকারি রেল পুলিশের অভিযোগ ছিল, স্বপন মজুমদার মণিপুর এবং নাগাল্যান্ডের সীমান্ত অঞ্চলের এক আন্তর্জাতিক অপরাধ চক্রের সদস্য। এই সিন্ডিকেট প্রেসক্রিপশনের ওষুধ, ট্যাবলেট, নিষিদ্ধ ওষুধ, সোনাসহ বিভিন্ন অবৈধ পদার্থ পাচারে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। রেল পুলিশ জানিয়েছিল, স্বপন মজুমদার মণিপুর থেকে হেরোইন এনে কলকাতায় বিক্রি করেছিলেন।
গুয়াহাটি জিআরপির তৎকালীন ইনচার্জ বিনু হাজারিকা স্বপন মজুমদারকে গ্রেফতার অভিযানের নেতৃত্বে ছিলেন। তখনও বিনু হাজারিকা দাবি করেছিলেন যে, গ্রেফতারি এড়াতে বিজেপির সঙ্গে তাঁর রাজনৈতিক সম্পর্ককে ব্যবহার করার চেষ্টা করেছিলেন স্বপন। পরে দায়রা আদালত তাকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয়। নয় মাস কারাভোগের পর জামিন পান স্বপন মজুমদার। ২০১৬ সালে স্বপন মজুমদার বনগাঁ দক্ষিণ থেকে বিজেপি প্রার্থী হিসাবেই ভোটে লড়েন কিন্তু সেবার তৃতীয় স্থানে ছিলেন তিনি ভোটের নিরিখে।
এদিকে ড্রাগ মাফিয়া বিষয়টি সামনে আসতেই স্বপন মজুমদারকে এড়িয়ে যাচ্ছেন বিজেপির দলীয় কর্মীরাই। স্থানীয় বিজেপি নেতারা বলতে শুরু করেন ড্রাগ মাফিয়ার হয়ে তারা প্রচারে নামবেন কীভাবে! প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে অবধি গিয়েছেন বিজেপিরই দুই নেতা।
বিজেপি এখনও ৪২ টি আসনে প্রার্থী দিতে পারেনি। আসানসোলের মতো কেন্দ্রে পবন সিং নামের ভোজপুরি গায়ককে প্রার্থী করা হলেও তিনি লড়তে রাজি হননি। সেই থেকে আসানসোল কেন্দ্রে কোনও প্রার্থীই দিতে পারেনি বিজেপি। বর্তমান বিধায়কদের প্রার্থী করা হয়েছে লোকসভাতে। এমন অবস্থায় বনগাঁর মতো আসনে সত্যিই 'ড্রাগ' পাচারের অভিযোগ থাকা একজন নেতাকে, গ্রেফতার হওয়া এক ড্রাগ পাচারকারীকে কেন প্রার্থী করল বিজেপি? দলের অন্তর্দ্বন্দ্বে পড়ে এবার কি বনগাঁ আসনে প্রার্থী বদলাবে বিজেপি? ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে তাহলে ড্রাগ ইস্যু কি মানুষের সামনে এনে ভোট টানতে পারেনি তৃণমূল?