সংবিধান অমান্য করছে খোদ ইডি! কেন শীর্ষ আদালতের প্রশ্নের মুখে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা?

Enforcement Directorate: বিরোধীশাসিত রাজ্যে এবং বিরোধী দল ও তাদের নেতাদের দমাতে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার অভিযোগ উঠেছে নরেন্দ্র মোদি সরকারের বিরুদ্ধে।

“সংবিধানের তোয়াক্কা করছে না, সমস্ত সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে”, ইডিকে কড়া ধমক দিল দেশের শীর্ষ আদালত। বারেবারেই দেশের শাসক সরকারের বিরুদ্ধে ইডি সহ নানা কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। এবার কেন শীর্ষ আদালতের প্রশ্নের মুখে পড়ল এই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাটি?

তামিলনাড়ুর একটি সরকারি সংস্থার সদর দফতরে ইডি হানার পর, এই নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি বি আর গভাই। প্রধান বিচারপতি বলেন, “ইডি সমস্ত সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। একটি সরকারি সংস্থার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা মানে সংবিধান এবং যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে গুরুত্ব না দেওয়া।”

ঠিক কী ঘটনার প্রেক্ষিতে সুপ্রিম আদালতের এই বক্তব্য? ‘তামিলনাড়ু স্টেট মার্কেটিং কর্পোরেশন’ (তাসম্যাক)-এর বিরুদ্ধে প্রায় এক হাজার কোটি টাকার আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। সম্প্রতি তারই তদন্তভার ইডিকে দেয় মাদ্রাজ হাইকোর্ট। এরপরই তাসম্যাকের দফতরে হানা দেয় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। তার বিরুদ্ধেই সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল তামিলনাড়ু সরকার। ২৩ মে সেই মামলার শুনানি ছিল প্রধান বিচারপতি বি আর গভাই এবং বিচারপতি অগাস্টিন জর্জ মাসিহের বেঞ্চে।

সেই শুনানি চলাকালীন প্রধান বিচারপতি বলেন, “কীভাবে একটা সংস্থার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হতে পারে? কোনও ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হওয়া উচিত ছিল। একটা সংস্থার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা! ইডি সমস্ত সীমা পার করছে।”

এদিন শুধু কড়া ধমক নয়, ইডির তদন্তে স্থগিতাদেশও দেয় সুপ্রিম কোর্ট। তারই সঙ্গে ওই সংস্থার বিরুদ্ধে কী অভিযোগ রয়েছে, তার কী কী প্রমাণ ইডির হাতে এসেছে, এই বিষয়ে শীর্ষ আদালত হলফনামা জমা দিতে বলেছে ইডিকে।

আরও পড়ুন- মানব পাচারকারী দালালদের স্বর্গরাজ্য! মোদির গুজরাত নিয়ে ভয়াবহ তথ্য ইডির

উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, শীর্ষ আদালতের ইডির বিরুদ্ধে এমন কড়া মন্তব্য এবং তাদের তদন্তে স্থগিতাদেশ দেওয়া এক বড় দিকনির্দেশ করেছে। কারণ সাম্প্রতিক অতীতে, বিরোধীশাসিত রাজ্যে এবং বিরোধী দল ও তাদের নেতাদের দমাতে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার অভিযোগ উঠেছে নরেন্দ্র মোদি সরকারের বিরুদ্ধে।

অথচ শীর্ষ আদালতই একসময় আর্থিক তছরুপ মামলায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে বড় ক্ষমতা দিয়েছিল। ২০২২ সালের ২৭ জুলাই, এ.এম. খানউইলকার, দীনেশ মহেশ্বরী ও সি.টি. রবিকুমারের বেঞ্চ ইডিকে ছাড়পত্র দেয় যে, আর্থিক তছরুপের মামলায় গ্রেফতার, সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত বা তল্লাশি চালাতে পারবে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট।

প্রসঙ্গত, কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক সূত্রের তথ্যানুযায়ী, কেন্দ্রে বিজেপি ক্ষমতায় আসার আগে ন’বছরে ১১২টি তল্লাশি অভিযান চালিয়েছিল ইডি। অথচ নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসার পর গত আট বছরে ৩,০১০টি তল্লাশি অভিযান চালিয়েছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। বিরোধীদের দমন করতে ইডিকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার যে অভিযোগ বারবার নরেন্দ্র মোদি সরকারের উপর উঠেছে, এই পরিসংখ্যান কি তাহলে তারই ইঙ্গিত দেয়?

More Articles