সোশ্যাল মিডিয়া তুলকালাম! আফ্রিকার নেতা ত্রাওরে সত্যিই মসিহা? যা বলছে ইতিহাস

Ibrahim Traoré Burkina Faso: ক্যাপ্টেন ইব্রাহিম ত্রাওরে, বুরকিনা ফাসোর অন্তর্বর্তীকালীন নেতা, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে লেফটেন্যান্ট কর্নেল পল হেনরি দামিবার বিরুদ্ধে পরিচালিত এক অভ্যুত্থানের পর ক্ষমতায় আসেন।

সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে তাঁর বক্তব্যের একটি এআই নির্মিত ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। আফ্রিকান যুবক, তীক্ষ্ণ চোখ, স্পষ্ট বক্তব্য, শিহরণ জাগানো উচ্চারণ, প্রত্যয়ী অভিব্যক্তি। বছর ৩৭-এর বুরকিনা ফাসোর সামরিক শাসক ক্যাপ্টেন ইব্রাহিম ত্রাওরের ক্যারিশ্মা ছড়িয়ে পড়েছে আফ্রিকা ছাড়িয়ে, সারা বিশ্বে। অনেকেই তাঁকে দেখছেন থমাস সাঙ্কারার মতো আফ্রিকান বীরদের পদাঙ্ক অনুসরণকারী হিসেবে। মার্ক্সবাদী এই বিপ্লবীকে 'আফ্রিকার চে গেভারা' বলেও ডাকা হতো। পশ্চিমি সাম্রাজ্যবাদ এবং নব্য-উপনিবেশবাদের কবল থেকে জাতিকে মুক্ত করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ যুবক ত্রাওরের মধ্যে বিপ্লবী চে গেভারার ছায়া দেখছেন অনেকেই। ত্রাওরের প্রভাব ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে আফ্রিকা মহাদেশজুড়ে। সহজ প্রশ্ন করেন ত্রাওরে, সহজ জিজ্ঞাসা উস্কে দেন। কেন এত সম্পদ সমৃদ্ধ মহাদেশ এখনও এত দারিদ্র্যের মধ্যে পড়ে রয়েছে, ত্রাওরের মূলগত প্রশ্ন এখানেই। কিন্তু পাশাপাশি প্রশ্নও জাগছে, ক্ষমতায় আসার পর কেন পশ্চিম আফ্রিকার দেশ বুরকিনা ফাসোতে বাড়ছে হিংসা? কেন স্কুলে যেতে পায় না সেখানকার শিশুরা? কে এই যুবক? কীভাবে সারা মহাদেশকে নিজের অধিকার বুঝে নেওয়ার লড়াইয়ের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন তিনি? কেনই বা তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ এত। সত্যিই কি বিপ্লবী তিনি?

এই সপ্তাহেই জিহাদি গোষ্ঠী এবং সরকারি বাহিনীর হাতে শত শত বুরকিনা ফাসোর নাগরিকদের হত্যার খবর প্রকাশিত হয়। তারপরেই বুরকিনা ফাসোর জুন্টা নেতা ক্যাপ্টেন ইব্রাহিম ত্রাওরের ছবি রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। কেন রাশিয়া? কারণ সেখানেই তিনি প্যান-আফ্রিকানিজম এবং আফ্রিকা মহাদেশের তরুণদের মনকে মুক্ত করার কথা বলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসি জার্মানির পরাজয়ের ৮০ তম বার্ষিক উপলক্ষ্যে মস্কোতে ছিলেন ত্রাওরে আফ্রিকার সবচেয়ে কম বয়সি নেতা। পাশাপাশি, রাশিয়া তাঁর বিশেষ বন্ধুও।

আরও পড়ুন- গাজায় গণহত্যার দলিল হাতে আন্তর্জাতিক আদালতে দক্ষিণ আফ্রিকার সওয়াল, ন্যায়বিচার পাবে প্যালেস্টাইন?

২০২২ সালে এক অভ্যুত্থানের পর সেই বছরের সেপ্টেম্বরে ক্ষমতায় আসেন ত্রাওরে। তারপর থেকেই পশ্চিমিদের, বিশেষ করে প্রাক্তন ঔপনিবেশিক শাসক ফ্রান্সের থেকে নিজেদের স্বাধীন করা ও আত্মনির্ভরতার বার্তা দিতে থাকেন। গত এপ্রিলের শেষ দিকে এই দেশটির রাজধানী ওয়াগাডুগুতে এক সংহতি মিছিলের পর ত্রাওরের জনপ্রিয়তা এক নতুন শিখর ছোঁয়। আফ্রিকায় মোতায়েন মার্কিন সামরিক বাহিনীর প্রধান জেনারেল মাইকেল ল্যাংলি অভিযোগ করেন, বুরকিনা ফাসোর নেতা ত্রাওরে দেশের সোনার অপব্যবহার করছেন। ত্রাওরের প্রতি সংহতি জানিয়েই ওই মিছিল ডাকা হয়।

ইব্রাহিম ত্রাওরে

২০২২ সালের অভ্যুত্থানের পর, ত্রাওরে সেই দেশটির মারাত্মক নিরাপত্তা সংকটের অবসান ঘটানোর এবং দেশের সমৃদ্ধ খনিজ সম্পদকে নিজের ২৪ মিলিয়ন নাগরিকের সুবিধার জন্য কাজে লাগানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। নাইজার এবং মালির মতো অভ্যুত্থানে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলির পাশাপাশি, বুরকিনা ফাসো তখন থেকেই Economic Community of West African States (ECOWAS) -এর আঞ্চলিক ব্লকের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। অভিযোগ, ECOWAS তরুণ আফ্রিকান নাগরিকদের নয়, নেতাদের স্বার্থ মেনেই চলে। দেশটি ফ্রান্সের মতো দীর্ঘস্থায়ী পশ্চিমি বন্ধুদের সঙ্গেও সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। ফ্রান্সের সামরিক বাহিনীই বহু বছর ধরে সরকারকে নিরাপত্তা সহায়তা প্রদান করে আসছিল।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশে এবং বিদেশে আফ্রিকান তরুণদের মধ্যে এই চেতনার ক্রমেই প্রসার ঘটছে যে তাদের এই মহাদেশের অগ্রগতির অভাব সম্পর্কে কিছু করা উচিত। আর ত্রাওরে সেই চেতনার মুখ হয়ে উঠছেন। তবে, একাংশের রাজনীতিবিদরা এও বলছেন যে, ত্রাওরে যে নিরাপত্তা সংকট সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তার উন্নতি তো হয়ইনি, বরং অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে। দেশটির সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন ধীর হয়ে গিয়েছে এবং বেশিরভাগ নাগরিকই দেশের খনিজ সম্পদ থেকে উপকৃত হচ্ছেন না। পশ্চিম আফ্রিকায় বিশেষজ্ঞ নাইজেরিয়ার বেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং নিরাপত্তা বিষয়ক অধ্যাপক গবারা আওয়ানেন বলছেন, বুরকিনা ফাসোতে "বাস্তবে কোনও অগ্রগতি হয়নি। এর বেশিরভাগটাই কেবল প্রচার।”

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ACLED-এর তথ্য বলছে, ২০২২ সালের অভ্যুত্থানের আগের বছর সরকার এবং সশস্ত্র গোষ্ঠী উভয়ের হাতেই ২,৮৯৪ জন নিহত হন। তবে অভ্যুত্থানের বছরে এই সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি হয়ে কমপক্ষে ৭,২০০ জনে পৌঁছেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন যে, হামলাগুলি এতটাই তীব্র আকার ধারণ করেছে যে ওয়াগাডুগু এখন তীব্র হুমকির মুখে, দেশের ৬০% এরও বেশি সরকারি নিয়ন্ত্রণের বাইরে। হিংসার ফলে কমপক্ষে ২১ লক্ষ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন এবং প্রায় ৬৫ লক্ষ মানুষের বেঁচে থাকার জন্য এখন মানবিক সাহায্যের প্রয়োজন।

আরও পড়ুন- সিপাহি বিদ্রোহে ব্রিটিশদের নাকানিচোবানি খাইয়েছিলেন এই আফ্রিকান নারী

তাহলে ত্রাওর এত জনপ্রিয় কেন? সেনেগালের টিমবুকটু ইনস্টিটিউট ফর পিস স্টাডিজের বাবাকার এনদিয়ায়ের ব্যাখ্যা, ত্রাওরকে ঘিরে বর্তমান উন্মাদনার জন্য মূলত তাঁর জনপ্রিয়তা এবং রাশিয়া সমর্থিত প্রচারই দায়ী। এনদিয়ায়ে বলছেন, “আফ্রিকায়, ঐতিহ্যবাহী নেতৃত্বের প্রতি গভীর হতাশা রয়েছে, মাঝখান থেকে বলির পাঁঠা হয়েছে পশ্চিমি শক্তি, তাই পশ্চিমিদের প্রতি পুঞ্জীভূত ক্ষোভ রয়েছে।”

ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ত্রাওরে

ক্যাপ্টেন ইব্রাহিম ত্রাওরে, বুরকিনা ফাসোর অন্তর্বর্তীকালীন নেতা, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে লেফটেন্যান্ট কর্নেল পল হেনরি দামিবার বিরুদ্ধে পরিচালিত এক অভ্যুত্থানের পর ক্ষমতায় আসেন। ত্রাওরে ক্ষমতায় থাকার পর থেকে, বুরকিনা ফাসো আঞ্চলিক সংস্থা ECOWAS থেকে তিনটি পশ্চিম আফ্রিকান রাজ্যকে প্রত্যাহারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বুরকিনা ফাসো, নাইজার এবং মালি একটি বিকল্প, সাহেল স্টেটস জোট গঠন করেছে।

১৯৮৮ সালে বুরকিনা ফাসোর ছোট শহর বোন্ডোকুইতে জন্ম ত্রাওরের। ওয়াগাডুগু বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর শিক্ষা সম্পন্ন করার পর, ত্রাওরে ২০১০ সালে ২২ বছর বয়সে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। বুরকিনাবে সশস্ত্র বাহিনীর অফিসার স্কুল জর্জেস নামোয়ানো মিলিটারি আকাডেমিতে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ২০১২ সালে সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট হিসেবে স্নাতক হন এবং ২০১৪ সালে লেফটেন্যান্ট পদে পদোন্নতির পর মালি-তে (মিনুসমা) জাতিসংঘের বহুমাত্রিক সমন্বিত স্থিতিশীলতা অভিযানে শান্তিরক্ষী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ত্রাওরে একটি বিশেষ সন্ত্রাস দমন বিভাগের অংশ হিসেবে উত্তর বুরকিনা ফাসোতে এক অভিযানে অংশ নেন। ২০২০ সালে ৩২ বছর বয়সে তাঁর ক্যাপ্টেন হিসেবে পদোন্নতি হয়।

২০২২ সালের জানুয়ারিতে কাবোরের বিরুদ্ধে একটি অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন দামিবা। তারপর তিনি ত্রাওরেকে বুরকিনা ফাসোর উত্তর মধ্য অঞ্চলে একটি আর্টিলারি রেজিমেন্টের প্রধান হিসেবে নিযুক্ত করেন। ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয়ে যায় যে দামিবা জুন্টার মধ্যে জনপ্রিয়তা হারাচ্ছেন। তখন ত্রাওরে এবং একদল অধস্তন আধিকারিক একটি অভ্যুত্থান সংগঠিত করেন। সেই অভ্যুত্থানে ১১ জন সৈন্য এবং বহু নাগরিকের প্রাণ যায়।

পল হেনরি দামিবা

১৯৮০-এর দশকে, ঠান্ডা যুদ্ধের সমাপ্তির কাছাকাছি সময়ে, বুরকিনা সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে আদর্শগত বিভাজনের সময় থমাস সাঙ্কার ক্ষমতায় আসেন। সাঙ্কারার সমর্থক আধিকারিকরা ১৯৮৩ সালে একটি অভ্যুত্থান পরিচালনা করেছিলেন। মার্ক্সবাদী বিপ্লবী হিসেবে পরিচিত সাঙ্কারা রাজনৈতিক সংস্কার আনার চেষ্টা করেছিলেন। জনসাধারণের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ বৃদ্ধি, নারীর ক্ষমতায়ন, পরিবেশগত অবক্ষয়ের মোকাবিলা এবং বৈষম্য হ্রাস করার ছিল তাঁর নীতি। তবে ত্রাওরের অবস্থান অনেক বেশি অনিশ্চিত। বেশিরভাগ সামরিক কর্মকর্তাই তাঁর অভ্যুত্থানে বা দামিবার নেতৃত্বে পরিচালিত অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণ করেননি। অর্থাৎ বুরকিনা ফাসোর সশস্ত্র বাহিনী এখনও খণ্ডিতই।

নিজের অবস্থানকে শক্তিশালী করার জন্য, ত্রাওরে একটি পুনর্গঠন অভিযান শুরু করেছেন। এর মধ্যে কর, খনি এবং জনসাধারণের রাজস্বের অন্যান্য উৎস থেকে প্রাপ্ত রাজস্ব প্রতিরক্ষা তহবিলে ঢোকানোর কথা বলা হয়েছে। তিনি জুন্টার পৃষ্ঠপোষকতায় সাধারণ স্বেচ্ছাসেবকদের হিংসাত্মক চরমপন্থীদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য একত্রিত করেছেন। শোনা গিয়েছে, যুদ্ধের প্রথম সারিতে স্বেচ্ছাসেবকদের পাঠানোর জন্য জোর করে সৈন্য নিয়োগও করা হয়েছে।

মনে রাখতে হবে, পশ্চিম আফ্রিকার তরুণদের ক্ষমতা দখলের ইতিহাস রয়েছে। ১৯৮০-এর দশকে ঘানার জন জেরি রাওলিংস, লাইবেরিয়ার স্যামুয়েল ডো এবং বুরকিনা ফাসোতে থমাস সাঙ্কারা এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। আফ্রিকায় পশ্চিমি ধাঁচের গণতন্ত্রের ব্যর্থতার বিরুদ্ধে স্থাপন করা সেই ইতিহাসই ত্রাওরের মতো ব্যক্তিদের প্রতিমূর্তি স্থাপনের পরিস্থিতি তৈরি করতে সাহায্য করেছে বলে মত বিশ্লেষকদের।

তবে, আফ্রিকার কনিষ্ঠ এই শাসককে ঘিরে যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে তা শুধুই প্রচারের ভরসায়— এমনটাও ভাবা ভুল। আফ্রিকার বিশ্লেষক এবং টাফ্টস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক চিডি ওডিনকালুর মতে, “ত্রাওরে একটি বিপ্লবী বার্তা প্রকাশ করেছেন। তাদের নিজস্ব দেশে ‘গণতন্ত্র’-র নামে যা চলছে, সেই থেকে হতাশ হয়ে পড়া তরুণ জনগোষ্ঠীর কাছে এই বার্তার আবেদন গভীর।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মত, ত্রাওরে হয়তো সাধারণ মানুষের কাছে ততটা জনপ্রিয় নন যতটা তাঁকে দেখানো হয়। সমালোচকদের দমন, একাধিক অভ্যুত্থানের প্রচেষ্টা, বাড়তে থাকা হিংসা এবং মানবিক সংকট ত্রাওরের জনপ্রিয়তা নিয়ে বাস্তবে প্রশ্ন তোলে।

থমাস সাঙ্কারা

আরও পড়ুন- বিশ্বজুড়ে ‘ভাইরাল’ চে গেভারার এই ছবিটিই! কীভাবে তোলা হয়েছিল এই ছবি?

২০২২ সালের সেপ্টেম্বরের অভ্যুত্থান রাশিয়ার হস্তক্ষেপ ছিল বলেই বিশ্লেষকদের ব্যাখ্যা। সেই সময় সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে ফ্রান্স এবং অন্যান্য পশ্চিমি দেশগুলির বিরুদ্ধে বিভেদমূলক বক্তব্য প্রচার করে আফ্রিকার তরুণদের উত্তেজিত করার অভিযোগ আছে রাশিয়ার বিরুদ্ধে। অভ্যুত্থানের পরপরই নিজের সমর্থন বৃদ্ধির লক্ষ্যে, ত্রাওরে ফরাসি-বিরোধী মনোভাব জাগিয়ে তোলার লক্ষ্যে দেশের অনেক দুর্দশার জন্য ফরাসিদের দায়ী করেন এবং দামিবাকে ঘনিষ্ঠ ফরাসি মিত্র হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টাও করেন। কয়েক মাসের মধ্যে, ত্রাওরে বুরকিনা ফাসো থেকে ফরাসিদের নিরাপত্তা সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহারের দাবি জানান।

ফরাসিদের প্রত্যাহারের পর দেখা যায়, রাশিয়ান ভাড়াটে সৈন্যদের ত্রাওরেকে সুরক্ষা প্রদান করছে এবং মালি সীমান্তের কাছে অভিযানে সাহায্যও করছে। তবে, মাত্র ১০০-৩০০ রুশ বাহিনী বুরকিনা ফাসোতে গেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ত্রাওরের কর্মকাণ্ড দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতি করতে পারেনি। ২০২২ সালের অক্টোবরে ক্ষমতায় আসার পর থেকে ইসলামপন্থী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলির সঙ্গে যুক্ত কমপক্ষে ৩,০৫৯টি হিংসার ঘটনা ঘটেছে। অভ্যুত্থানের আগের দুই বছরের তুলনায় এটি ২০% বৃদ্ধি। এই সন্ত্রাসী হিংসায় জড়িত মৃত্যুর সংখ্যা ২০২২ সালে ছিল ৩,৬২১ জন, তা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে ২০২৪ সালে ৬,৩৮৯ জনে দাঁড়িয়েছে।

ত্রাওরের ক্ষমতা দখলের পর থেকে জুন্টা বেশ কয়েকটি অভ্যুত্থানের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করার দাবি করেছে। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে দেশটির সবচেয়ে ভয়াবহ গণহত্যার মাত্র কয়েক সপ্তাহ পরে একটি ব্যর্থ ষড়যন্ত্র শুরু হয়। সহিংস চরমপন্থীরা বারসালোঘো শহরের বাইরে শত শত নাগরিককে হত্যা করে। ইসলামপন্থী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলির হাতে নাগরিকদের মৃত্যুর সংখ্যা ২০২২ সালে ৭২১ জন থেকে বেড়ে ২০২৪ সালে ১,১৫১ জনে দাঁড়িয়েছে। সংঘাত এবং নিরাপত্তাহীনতার কারণে ১০ লক্ষেরও বেশি পড়ুয়া স্কুলে যেতে পারে না। তাই ত্রাওরেকে একজন সাহসী সংস্কারক এবং ত্রাণকর্তা হিসেবে তুলে ধরার প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, প্রশ্ন থেকেই যায় যা দেখানো হয়, সবটাই কি সত্য?

More Articles