'অপারেশন সিঁদুর' ভোটের অস্ত্র! বুঝিয়ে দিলেন মোদি
Operation Sindoor: শুভেন্দু অধিকারী সুকান্ত মজুমদারদের ভাষণেও সিঁদুর প্রসঙ্গই প্রাধান্য পেল। এছাড়া তৃণমূলের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িকতার অভিযোগে তুললেন দুই নেতা।
পশ্চিমবঙ্গে এসে অপারেশন সিঁদুর, মুর্শিদাবাদ-মালদহের দাঙ্গা, রাজ্য সরকারের নির্মমতা নিয়ে সোচ্চার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি বলেন, "পহেলগাঁও ঘটনার পর আপনাদের প্রবল রাগ হয়েছিল। সেই রাগই আমাদের শক্তি। যারা পেহেলগাঁও ঘটিয়েছে, তাদের সিঁদুরের শক্তি বুঝিয়েছে ভারতীয় সেনা। পাকিস্তান কল্পনাই করতে পারেনি। অপারেশন সিঁদুর এখনও শেষ হয়নি। তিনবার ঘরে ঢুকে মেরেছি। হামলা হলে শত্রুদের আবার বড়ো মূল্য দিতে হবে।" শুভেন্দু অধিকারী, সুকান্ত মজুমদারদের ভাষণেও সিঁদুর প্রসঙ্গই প্রাধান্য পেল। এছাড়া তৃণমূলের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িকতার অভিযোগ তুললেন দুই নেতা। আজ (২৯ মে, বৃহস্পতিবার) আলিপুরদুয়ারে প্রধানমন্ত্রী মোদির সফর ঘিরে বিজেপি-তৃণমূল তরজাও তুঙ্গে।
অপারেশন সিঁদুর-এর পর এবং ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের একবছর আগে এটিই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রথম পশ্চিমবঙ্গ সফর। আজ প্রশাসনিক মঞ্চ থেকে আলিপুরদুয়ার এবং কোচবিহার জেলার জন্য পাইপ লাইনে রান্নার গ্যাস সরবরাহ প্রকল্পের শিলান্যাস করেন মোদি। তার পরে পৌঁছান 'পরিবর্তন সংকল্প সভা'র মঞ্চে। সভার নামেই কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য অনেকটা স্পষ্ট হয়ে যায়। আলিপুরে মোট ৩২ মিনিট বক্তব্য রাখেন মোদি। ১৮ মিনিটে পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল সরকারকে আক্রমণ, ৮ মিনিট অপারেশন 'সিঁদুর'-এর প্রসঙ্গ, বাকি ৬ মিনিট সম্ভাষণ-সহ আনুষঙ্গিক বিষয়ে বক্তব্য রেখেছেন। সভা থেকে প্রধানমন্ত্রী পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভার নির্বাচনে দলের স্লোগানো তৈরি করে দিয়েছেন, "বাংলার নির্মম সরকার, আর নেই দরকার।"
প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে বারবারই পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে 'নির্মম সরকার' বলে আক্রমণ করেছেন। এতেই বোঝা যায়, তাঁর নজর এখন বিধানসভা নির্বাচনের দিকে। ভাষণের শেষে পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি কর্মীদের ভোটের ময়দানে নেমে পড়ার কথাও বলেন। তিনি বলেন, "পশ্চিমবঙ্গ এই মুহূর্তে নানা সঙ্কটের মধ্যে রয়েছে। প্রথম সঙ্কট, ছড়িয়ে পড়া হিংসা ও অরাজকতা। দ্বিতীয় সঙ্কট, মা-বোনেদের নিরাপত্তার অভাব। তৃতীয় সঙ্কট, যুবকদের মধ্যে নিরাশা এবং বেকারত্বের যন্ত্রণা। চতুর্থ সঙ্কট, ঘোর দুর্নীতি এবং এতে এখানকার প্রশাসনের উপরে জনগণের বিশ্বাস কমতে থাকা। পঞ্চম সঙ্কট, গরিবের অধিকার ছিনিয়ে নিতে থাকা ক্ষমতাসীন স্বার্থপর রাজনৈতিক দল।"
মালদহ এবং মুর্শিদাবাদের ঘটনায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে তোষণের অভিযোগ তোলেন প্রধানমন্ত্রী। তৃণমূলের বিধায়ক, কাউন্সিলর, স্থানীয় নেতারা ওই হিংসার নেতৃত্ব দিয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর কথায়, "বাংলার মানুষের এখন একমাত্র আশ্রয় আদালত। সব বিষয়ে আদালতকে হস্তক্ষেপ করতে হয়।" এরপরে মোদি নিজেই স্লোগান তোলেন, "বাংলার চিৎকার, লাগবে না নির্মম সরকার।" তিনি বলেন,"বাংলায় নির্মম সরকার চলে। মুর্শিদাবাদ ও মালদহে বেছে বেছে হামলা চালানো হয়েছে। দলের লোকেদের হিংসা করতে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে।"
চাকরিহারা শিক্ষকরা প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করার অনুমতি পাননি ঠিকই তবে ভাষণে শিক্ষক দুর্নীতি প্রসঙ্গও উঠে আসে। মোদির তোপ, "দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারের সবচেয়ে কুপ্রভাব যুবসমাজের উপরে পড়ে, গরিব আর মধ্যবিত্তের উপরে পড়ে। দুর্নীতির প্রভাব কী ভাবে পড়ে তা আমরা শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির ক্ষেত্রে দেখেছি।" তাঁর কথায়, হাজার হাজার শিক্ষককে শেষ করে দিয়েছে, তাঁদের পারিবারকে শেষ করে দিয়েছে, তাদের সন্তানদের অসহায় করে দিয়েছে। এটা শুধু কয়েক হাজার শিক্ষকের ভবিষ্যৎ নিয়ে খেলা নয়। পশ্চিমবঙ্গের পুরো শিক্ষা ব্যবস্থাকে শেষ করে দেওয়া হচ্ছে।" প্রধানমন্ত্রীর দাবি, "কিন্তু এত কিছুর পরেও নিজেদের ভুল মানতে রাজি নন, উল্টে দেশের বিচারব্যবস্থাকে দোষী বানাচ্ছেন।"
পশ্চিমবঙ্গের সরকারের দুর্নীতির অভিযোগে চা বাগান শ্রমিকদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের কথাও বলেন। তিনি বলেন, "পিএফ নিয়ে যা হয়েছে তা লজ্জার। গরিবের কষ্টের টাকায় ডাকাতি করা হচ্ছে। তৃণমূল সরকার দোষীদের বাঁচানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে।" প্রধানমন্ত্রী দাবি করেন, তৃণমূল সরকারের ভুল নীতির জন্যই লাগাতার চা বাগান বন্ধ হচ্ছে এবং চা শ্রমিকেরা কাজ হারাচ্ছেন।
বিভিন্ন কেন্দ্রীয় সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প পশ্চিমবঙ্গে চালু হতে দেওয়া হয়নি বলে আবারো অভিযোগ তুলেছেন তিনি। তিনি বলেছেন, "এসসি, এসটি, গরিব এবং মহিলাদের জন্য সারা দেশে যেসব প্রকল্প চালু আছে সেগুলো এই রাজ্যে কার্যকারী হতে দেয় না।" প্রধানমন্ত্রীর দাবি, পশ্চিমবঙ্গবাসী 'আয়ুষ্মান ভারত' প্রকল্পের সাহায্য পায় না বলে দিল্লি, চেন্নাই বা বেঙ্গালুরুতে গিয়ে টাকা দিয়ে চিকিৎসা পেতে হয়।
প্রধানমন্ত্রী এও বলেছেন যে, ২০২২ সালে যখন আদিবাসী মহিলাকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী করা হলো, সেই সময়ও তৃণমূল সরকার তার বিরোধিতা করেছিল। দাবি করেছেন, আদিবাসী সমাজের প্রতি তৃণমূল সরকারের কোনো সহানুভূতি নেই।
অন্যদিকে, প্রধানমন্ত্রী মোদির ভাষণ শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ পরেই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাংবাদিক সম্মেলন করে পাল্টা জবাব দেন। বলেন, অপারেশন সিঁদুর নামটা ওরা দিয়েছেন রাজনৈতিক লাভ পেতে। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, "প্রধানমন্ত্রী বলছেন অপারেশন সিঁদুরের মতো অপারেশন পশ্চিমবঙ্গে করবেন। বাংলার মা-বোন, মাটিকে, জঙ্গিদের সঙ্গে মিলিয়ে দেবেন? প্রধানমন্ত্রী বাংলার ইজ্জত নিয়ে খেলা করছেন।
উল্লেখ্য, আলিপুরদুয়ার-সহ গোটা উত্তরবঙ্গে আদিবাসী জনসংখ্যাই বেশি। রাজনীতিবিদরা বলছে, সেই কথা মাথায় রেখেই প্রধানমন্ত্রী আজ ভাষণ রেখেছেন। আজকের সভার পর এও স্পষ্ট হয়ে গেল যে, অপারেশন সিঁদুর আগামী দিনের ভেটের অস্ত্র।