ইরান-ইজরায়েল সংঘাত থেকে কি সুযোগ খুঁজছে রাশিয়া?

Iran-Israel conflict: প্রো-ক্রেমলিন রাশিয়ার সাবেক সংসদ সদস্য বলেছেন, সম্প্রতি যদিও রাশিয়া  ইরানের সঙ্গে একটি কৌশলগত অংশীদারিত্ব চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে, তবে মনে হয় না রাশিয়া এই সংঘাতে জড়াবে।

দিন কয়েক আগে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠকে ইসরায়েলের অব্যাহত হামলার নিন্দা জানিয়েছে রাশিয়া। তারা অবিলম্বে উত্তেজনা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। ইরান-ইজরায়েল সংঘাতের আজ চতুর্থ দিন। যুদ্ধ এখনও চলছে। ইরানের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত রাশিয়া। প্রশ্ন উঠছে, ইরানকে কি সহায়তা করবে রাশিয়া?

ইজরায়েলের ইরান হামলা নিয়ে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনগুলো খুব বেশি প্রতিবেদন করেনি। রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত দুটি প্রধান চ্যানেল- রাশিয়া চ্যানেল ১ এবং চ্যানেল ওয়ান প্রতিবেদন করেছে, ইজরায়েল শুধু পারমাণবিক ঘাঁটিগুলিতেই নয়, বেসামরিক এলাকাও টার্গেট করেছে। রাশিয়া চ্যানেল ১-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রথমবারের মতো ইরানের আবাসিক এলাকা আক্রমণ করা হয়েছে। উল্লেখিত দুটি চ্যানেলই দাবি করা হয়েছে, এসব এলাকায় ইরানের উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তারা অবস্থান করায় এগুলো টার্গেট করে ইজরায়েল। তবে সামরিক কর্মকর্তা ও পরমাণু বিজ্ঞানী ছাড়াও ইজরায়েলের হামলায় ২২০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে কমপক্ষে ৭০ জন নারী ও শিশু রয়েছে।

অন্যদিকে, রাশিয়ান ফেডারেশন এবং ইসলামিক রিপাবলিক অব ইরানের মধ্যে চলতি বছর ১৭ জানুয়ারি স্বাক্ষরিত হওয়া চুক্তিতে "সামরিক সহযোগিতার উন্নয়ন"-এর বিষয়টিও রয়েছে। তবে এ বছর এপ্রিল মাসে রাশিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রেই রুডেনকো বলেছিলেন, "যদি ইরান যুদ্ধে জড়ায়, তবুও রাশিয়া সামরিক সহায়তা দিতে বাধ্য নয়।"

১৬ জুন সকালে রুশ সংবাদপত্রগুলির প্রধান শিরোনাম জুড়ে উঠে এসেছিল মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাতের সব খবর। রাশিয়ার দৈনিক ট্যাবলয়েড পত্রিকা মস্কভস্কি কোমসোমোলেতস-এর শিরোনাম ছিল- “যত নিষ্ঠুরই শোনাক, কৌশলগত দৃষ্টিতে ইরান‑ইজরায়েল সংঘাত থেকে রাশিয়ার জন্য কিছু ‘প্লাস পয়েন্ট’ আছে।” ‘প্লাস পয়েন্ট’ বলতে এখানে বোঝানো হয়েছে তেলের দাম বেড়ে যাওয়া এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধ নিয়ে সচেতনতা কমার বিষয়টি। ট্যাবলয়েডটি দাবি করে, “কিয়েভকে সবাই ভুলে গেছে।”

ব্যবসা-বাণিজ্য বিষয়ক দৈনিক কোমেরসান্ত লিখেছে, “মধ্যপ্রাচ্যে যে কোনো উত্তেজনা ইউক্রেন থেকে দৃষ্টি ঘুরিয়ে দেবে এবং সামরিক সহায়তা দেওয়ার ক্ষেত্রেও পশ্চিমাদের অগ্রাধিকার বদলে দিতে পারে।” ওই প্রতিবেদনে আরও লেখা হয়েছে, “রাশিয়া নিরপেক্ষ মধ্যস্থতাকারী হতে পারে। সংকট পুরোপুরি কাটাতে না পারলেও অন্তত উত্তেজনা কমাতে সাহায্য করতে পারে।” তবে কোমেরসান্ত এও বলে সতর্ক করেছে যে, “উত্তেজনা বাড়তে থাকলে মস্কোর জন্য যেমন বড় ধরণের ঝুঁকি রয়েছে তেমনি ব্যয় বাড়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। বাস্তবতা হলো, পাঁচ মাস আগে যে দেশের সঙ্গে রাশিয়া কৌশলগত অংশীদারিত্ব চুক্তি করেছিল, সেই দেশটির ওপর ইজরায়েলের ব্যাপক হামলা আটকাতে রাশিয়া অপারগ।”

অন্যদিকে, ইরান থেকে আর খনিজ তেল কেনে না ভারত। ভারতে আমদানি করা তরল সোনার ৩৬% আসে রাশিয়া থেকে। ২০২২ সাল থেকে ভারতকে সস্তা দরে অপরিশোধিত তেল বিক্রি করছে রাশিয়া। তখন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হয়েছিল। দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্থানে রয়েছে ইরাক এবং সৌদি আরব। ইজরায়েল-ইরান সংঘাতে ভারতের পশ্চিম এশিয়ার তেল আমদানি সমস্যায় পড়লেও দেশের অন্দরে পেট্রল-ডিজেলের দাম বৃদ্ধির সম্ভাবনা কম বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ, মস্কো থেকে সস্তায় তরল সোনা কিনবে ভারত। এতে মোদী সরকারের নির্ভরশীলতা বাড়বে রাশিয়ার উপর।

প্রো-ক্রেমলিন রাশিয়ার সাবেক সংসদ সদস্য বলেছেন, সম্প্রতি যদিও রাশিয়া  ইরানের সঙ্গে একটি কৌশলগত অংশীদারিত্ব চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে, তবে মনে হয় না রাশিয়া এই সংঘাতে জড়াবে। আবার সম্প্রতি ইউক্রেন থেকে মধ্যপ্রাচ্যে হাজার হাজার বিমান প্রতিরক্ষা শেল সরিয়ে নিয়েছে। এতে আন্দাজ করা যায় যে আমেরিকা হয়তো দ্বিমুখী খেলা খেলছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকেই অবশ্য বলছেন, সবকিছুই খুব অনিশ্চিত। অনেকে দাবি করছেন, রাশিয়া ইরানের বন্ধু এবং রাজনৈতিক মিত্র, কিন্তু সামরিক মিত্র নয়। বিশ্লেষকদের মতে, রাশিয়া একমাত্র যা করতে পারে তা হলো, রাজনৈতিক সমাধানে মধ্যস্থতা করা। তবে তা এখনই হওয়ার সম্ভবনা নেই। এই পরিস্থিতি রাশিয়া কী ভাবে সামাল দেবে এবং এরপর কী হতে পারে, তাই এখন দেখার।

More Articles