ট্যুইটারও কি ডানপন্থীদের দিকেই ঝুঁকে?

আপনি কি নিয়মিত ট্যুইটার ব্যবহার করেন? দিনের বেশিরভাগ সময়টাই কি সোশ্যাল মিডিয়ায় চোখ বুলিয়েই সময় কাটে? ট্যুইটারের নিয়মিত ব্যবহারকারী মাত্রেই দেখে থাকবেন ট্যুইটার আপনাকে কোনও একটি বিশেষ কনটেন্ট দেখার জন্য আমন্ত্রণ পাঠাচ্ছে। অর্থাৎ আপনার অতীতের পছন্দ-অপছন্দ গুলিকে সযত্নে গুছিয়ে মনে রেখে দিয়েছে ট্যুইটার। এই অ্যালগরিদমের ওপরে দাঁড়িয়েই ট্যুইটার কাজ করে। মেশিন লার্নিং এই গোটা বিষয়টাকেই জলভাত করে দিয়েছে। ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপের পথে হেঁটেই ট্যুইটার ও ধীরে ধীরে শাসকের কণ্ঠ হয়ে উঠছে। 

মেশিন লার্নিং কী?

মেশিন লার্নিং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সেরই একটা অংশ। ফেসবুক, ট্য়ুইটার সহ সবকটি সোশ্যাল মিডিয়াই প্রতিদিন লক্ষাধিক মানুষ ব্যবহার করেন। প্রতিটি প্ল্যাটফর্মের ডেটার নিজস্ব ধরন আছে। মেশিন লার্নিংয়ের মাধ্যমে সহজেই ব্যবহারকারীর সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের ধরন দেখে তার পছন্দ- অপছন্দ গুলি সহজেই চিহ্নিত করা যায় যা রেজিস্টার হয় সেই নির্দিষ্ট সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের অ্যালগরিদমে।

সোশ্যাল মিডিয়া জায়ান্টগুলি যত মেশিন লার্নিং এর পথে হেঁটেছে তাতে যুক্ত হয়েছে পক্ষপাতের অসুখ। কখনও কোনও রাজনৈতিক দল আবার কখনও বা সরকার বিভিন্ন সময়ে দেখা গিয়েছে এইসব ক্ষেত্রেই সোশ্যাল মিডিয়া একটি নির্দিষ্ট পক্ষ বেছে নিয়েছে এবং সেই অনুযায়ী তাদের ব্যবহারকারীদের মতামতকে ও প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছে। ট্যুইটারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।

প্রায়শই ট্যুইটারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ ওঠে। যে কোনও দেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির অভিযোগ, টুইটার সচেতনভাবে তাদের কণ্ঠ স্তব্ধ করে দিয়েছে।  শাসকের প্রতি ট্যুইটারের পক্ষপাতিত্ব স্পষ্ট। লাগাতার এই অভিযোগের সামনে পড়ে ট্যুইটার নিজেদের ভূমিকা ঠিক কী এবং তা আদৌ কোনও বিশেষ রাজনৈতিক মতাদর্শের প্রতি দুর্বল কিনা তা বুঝতে একটি গবেষণা শুরু করে। সম্প্রতি সেই গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে।

গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, ট্যুইটার ব্যবহারকারীদের মধ্যে ৪ শতাংশ এই অ্যালগরিদমের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। যা সংখ্যায় প্রায় ৫ কোটি। আবার দেখা যাচ্ছে প্রায় ২ কোটি মানুষ ট্যুইটারের থেকে কোনও রকম বিশেষ কনটেন্ট দেখার আমন্ত্রণ পাচ্ছে না। এদেরকে গবেষণায় বলা হচ্ছে, ‘কন্ট্রোল গ্রুপ’।প্রাথমিক ভাবে কেবল নির্দিষ্ট কয়েকজন ব্যবহারকারীকে বেছে নিয়ে তাদের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে গবেষণা শুরুর হলে ও পরে অনলাইন সার্ভের মাধ্যমে আরও বেশি সংখ্যক মানুষের অভিজ্ঞতাকে ট্য়ুইটার গবেষণার কাজে লাগিয়েছে।

অ্যালগরিদম কীভাবে ট্যুইটারকে নিয়ন্ত্রণ করে?

ট্যুইটারের ফিডে যেসব ট্যুইট দেখা যায় তার মধ্যে কিছু ট্যুইট সুনির্দিষ্টভাবেই আগে থেকে নিয়মিত ফিডে দেখানোর ব্যবস্থা করা হয়। আবার কিছু ট্যুইট কোনও অটোমেটিক রেকমেন্ডেশন পায় না। কোন ট্যুইট নিয়মিত ফিডে দেখতে পাবেন ব্যবহারকারীরা তা নির্ধারিত হয় এই অ্যালগরিদমের সাহায্যেই।

গবেষণায় স্পষ্ট প্রায় সাতটি দেশের সব বড় রাজনৈতিক দলগুলির প্রায় ৩,৬৩৪ রাজনৈতিক কর্মীর ট্যুইট ট্যুইটারের অ্যালগরিদম দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। এই সাতটি দেশের তালিকায় আছে আমেরিকা, জাপান, ব্রিটেন, ফ্রান্স, স্পেন, কানাডা, জার্মানির মত দেশ।

ধরা যাক কোনও রাজনৈতিক দলের ট্যুইটের অ্যালগরিদমের বিস্তার ১০০ শতাংশ, সেক্ষেত্রে সেই নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের ট্যুইট অন্যান্য টুইটের থেকে বেশি বার ব্যবহারকারীরা ফিডে দেখতে পাবেন।    

যে পদ্ধতিতে গবেষকরা অ্যামপ্লিফিকেশনের বিস্তার নিয়ে কাজ করেন সেই পদ্ধতিকে বলে ‘লিঙ্গার ইম্প্রেশন’। এই ক্ষেত্রে কোনও টুইটের ৫০ শতাংশ যদি ০.৫ সেকেন্ড সময় ধরে দেখা যায় তাহলে ধরে নেওয়া হয় সেই ট্যুইটটি ব্যবহারকারীদের প্রভাবিত করতে শুরু করেছে। জার্মান ছাড়া বাকি প্রায় সব ক'টি দেশের ক্ষেত্রেই ট্যুইটারের অ্যালগরিদম ডানপন্থী রাজনীতির পক্ষ নিয়েছে। একটা পরিসংখ্যান দিলেই এই পক্ষপাতিত্বের অঙ্কটা সহজ হয়ে যাবে। কানাডায় যেখানে লিবারালসদের ট্যুইটার অ্যামপ্লিফিকেশনের পরিমাণ ৪৩ শতাংশ সেখানে কনজারভেটিভদের অ্যামপ্লিফেকেশনের পরিমাণ ১৬৭ শতাংশ। আবার গ্রেটব্রিটেনে লেবার পার্টির অ্যামপ্লিফেকেশনের হিসাব যেখানে ১১২ শতাংশ সেখানে কনজারভেটিভদের ১৭৬ শতাংশ। তফাতের দিকে চোখ বুলালেই সহজে অনুমান করা যাবে ট্যুইটারের অ্যালগরিদম ডানপন্থার দিকেই ঝুঁকে রয়েছে।

ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপের শাসকের কাছে আত্মসমর্পণের মাঝে আশার বিষয় এটাই ট্যুইটার নিজের অবস্থান নিয়ে নতুন করে ভাবছে। কিন্তু ব্যবসায়িক লাভের কথা ভাবলে ডানপন্থার হাত ধরাই অনেক সুবিধেজনক। সমীক্ষার পর ট্যুইটার কি এইবার নিজেদের অবস্থান বদলাবে?

More Articles