৪৪ দিনে প্রায় ৪৯৭ বার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন! এখনও কেন অশান্ত গাজা?

Gaza Under Fire: যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে বলা ছিল, গাজায় চিকিৎসা, খাদ্য, জ্বালানি ও অন্যান্য সহায়তা স্বাভাবিক ভাবে প্রবেশ করতে দিতে হবে। কিন্তু অভিযোগ, ইজরায়েল সীমান্তে বারবার বাধা দিচ্ছে।

গাজা আবারও রক্তাক্ত। যুদ্ধবিরতি চলছে কিন্তু হামলা থামছে না। গাজার সরকারি মিডিয়া অফিসের দাবি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর থাকার ৪৪ দিনের মধ্যেই ইজরায়েল প্রায় ৪৯৭ বার চুক্তি লঙ্ঘন করেছে। অভিযোগ, এই হামলাগুলোর বেশিরভাগই হয়েছে সরাসরি বেসামরিক এলাকায়। এই ৪৪ দিন ৩৪২ জন সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছেন— এর মধ্যে শিশু, মহিলা ও বয়স্কের সংখ্যাই বেশি।

আল জাজিরায় দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, একদিনেই ২৭টি নতুন হামলা চালিয়েছে ইজরায়েল। সে দিনই ২৪ জন নিহত এবং ৮৭ জন আহত হন। গাজার কর্মকর্তাদের অভিযোগ, এগুলি 'নিয়মিত ও পরিকল্পিত' হামলা; ইজরায়েল আন্তর্জাতিক মানবিক আইন স্পষ্টভাবে ভঙ্গ করছে। যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে বলা ছিল, গাজায় চিকিৎসা, খাদ্য, জ্বালানি ও অন্যান্য সহায়তা স্বাভাবিক ভাবে প্রবেশ করতে দিতে হবে। কিন্তু অভিযোগ, ইজরায়েল সীমান্তে বারবার বাধা দিচ্ছে।
ফলে হাসপাতালে সংকট বেড়েছে, অ্যাম্বুলেন্স পাওয়া যাচ্ছে না, শিশুদেরও চিকিৎসা করা সম্ভব হচ্ছে না।

আলজাজিরায় নাম প্রকাশ না করে এক সরকারি মুখপাত্রের কথা উল্লেখ করা হয়েছে,

'চুক্তির প্রতিশ্রুতি কোনোটাই মানা হয়নি।'

আরও পড়ুন

প্যালেস্টাইনকে স্বীকৃতি, ইজরায়েলকে অস্ত্র : ব্রিটেনের দ্বিমুখী নীতি

গাজার পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছে নতুন এক অভিযোগ। প্যালেস্টাইন প্রশাসনের দাবি, যুদ্ধবিরতির মাঝেই ইজরায়েল গাজা সীমান্তে একটি ‘হলুদ সীমা’ (Yellow Line) তৈরি করেছে— যা কার্যত নতুন নিয়ন্ত্রণরেখার মতো কাজ করছে। এই রেখার মধ্যে পড়ে গিয়েছে বহু গ্রাম, ঘরবাড়ি আর কৃষিজমি। ফলে হাজার হাজার মানুষ এখনও নিজেদের বাড়িতে ফিরতে পারছে না। ইজরায়েল বলছে, এটি কেবল নিরাপত্তার জন্য একটি অস্থায়ী পদক্ষেপ। কিন্তু স্থানীয়দের অভিযোগ, এটি নতুন করে দখলদারিত্বের পথ তৈরি করছে। উপকূলীয় এলাকার বড় অংশে নিজেদের উপস্থিতি বাড়িয়েছে ইজরায়েল।

এদিকে, একসময় যুদ্ধবিরতির মূল অংশ হিসেবে ধরা হয়েছিল বন্দি বিনিময় প্রক্রিয়া। কিন্তু বর্তমানে সেটিও পুরোপুরি বন্ধ। হামাস বলছে, ইজরায়েল চুক্তি ভঙ্গ করায় আলোচনায় অগ্রগতি নেই। অন্যদিকে ইজরায়েল দাবি করছে, হামাসের ‘বিদ্রোহী গোষ্ঠী’ তাদের উপর হামলা চালিয়ে পরিস্থিতিকে জটিল করছে। এই পারস্পরিক অবিশ্বাসের ফলে শান্তি প্রক্রিয়া এখন স্থবির।

গাজার ফরেনসিক বিভাগ বলেছে, ইজরায়েল আগে যে দেহগুলি ফেরত দিয়েছে, তাদের অনেকেরই হাত-পা নেই, গভীর আঘাতের দাগ আছে বা নির্যাতনের চিহ্ন স্পষ্ট। এসব দেহ এতটাই ক্ষতিগ্রস্ত যে পরিবারগুলো শণাক্তও করতে পারছে না। তাই ডিএনএ পরীক্ষা করার জন্য তারা আন্তর্জাতিক সাহায্য চেয়েছে।

আরও পড়ুন

যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা থেকে মুনাফা লুটছে মাইক্রোসফট, অ্যালফাবেট?

গাজার মিডিয়া অফিসের দাবি, ইজরায়েল কেবল হামলা চালাচ্ছে তা-ই নয়, বরং মানুষের জীবন, মানবিক সহায়তা, নিরাপত্তা, সবকিছুকেই ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে। গাজার পুনর্গঠনও অনিশ্চয়তায় ঘেরা। শহরের বড় অংশ ধ্বংসস্তূপ হয়ে পড়ে আছে, হাসপাতাল-স্কুল চালু করা কঠিন হয়ে পড়েছে। জাতিসংঘ বলছে, সহায়তা পৌঁছানো না গেলে কয়েক লক্ষ মানুষের জীবন আরও বিপদের মুখে পড়বে।

যুদ্ধবিরতি কাগজে কার্যকর হলেও গাজার বাস্তবতা যেন ঠিক উল্টো ছবি আঁকছে। প্রতিদিনের হামলা, সহায়তা আটকে যাওয়া, ‘হলুদ সীমা’র মতো নতুন নিয়ন্ত্রণরেখা তৈরি হওয়া এসব মিলিয়ে গাজার মানুষকে আরও অনিশ্চয়তার ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। শিশু, নারী, বৃদ্ধ কারও জীবনই নিরাপদ নয়। বন্দি বিনিময় বন্ধ, পুনর্গঠন আটকে, সীমান্ত অবরুদ্ধ সব মিলিয়ে যুদ্ধবিরতি যেন এখন এক প্রহসন। এ অবস্থায় সবচেয়ে বড় মূল্য দিচ্ছে গাজার সাধারণ মানুষ। গাজার আকাশে এখনও ধোঁয়া, রাস্তায় থাকছে হাজার মানুষ; আর শান্তি? সেটি এখনও অনেক দূরের এক স্বপ্নের মতো।

More Articles