আক্রমণ আরও তীব্র করছে ইজরায়েল! 'অপারেশন গিডিয়ন্স চ্যারিওটাস' অভিযানের উদ্দেশ্য কী?
Israeli strikes: ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু মে মাসের শুরুতে জানিয়েছিলেন, ইজরায়েল গাজায় 'তীব্র আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছে।' এর সাথে আরও জানানো হয়েছিল যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্র...
গাজায় বড় ধরনের সামরিক অভিযান চালানোর ঘোষণা করছে ইজরায়েল সেনাবাহিনী। এর উদ্দেশ্য হামাসকে পরাজিত করা এবং সেখানে থাকা ইজরায়েলি বাকি পণবন্দিদের মুক্ত করা। ইজরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী বা আইডিএফ তাদের হিব্রু ভাষায় পরিচালিত এক্স অ্যাকাউন্টে লিখেছে, তারা 'অপারেশন গিডিয়ন্স চ্যারিওটাস' নামে সামরিক অভিযান শুরু করতে চলেছে। যাতে তারা গাজার যে এলাকাগুলিকে দখলের জন্য লক্ষ্যবস্তু করেছিল তা দখলে নিতে পারে। ইজরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর এই ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই হামাস জানিয়েছে, গাজায় যুদ্ধবিরতির বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। জানা গিয়েছে, দোহায় ইজরায়েলের সঙ্গে এই আলোচনা শুরু হয়েছে। দুই পক্ষই কোনো রকম 'পূর্বশর্ত' ছাড়া সকল বিষয়ে আলোচনা করেছে। অন্যদিকে, ইজরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইজরায়েল কাৎজ জানান, ইজরায়েলি পণবন্দিদের মুক্তির বিনিময়ে একটি চুক্তির আলোচনা করতে আলোচকরা কাতারে এসেছেন। ইজরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী হিব্রু ভাষার এক্স পোস্টে অভিযানের নামে উল্লেখ করলেও ইংরেজি ভাষায় করা পোস্টে কোনো রকম নাম উল্লেখ করেনি। কেন ফের নতুন করে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে ইজরায়েল? 'অপারেশন গিডিয়ন্স চ্যারিওটাস' কী?
গাজায় হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইজরায়েলি হামলায় গত বৃহস্পতিবার (১৫ মে) থেকে প্রায় আড়াইশো জন নিহত হয়েছেন। এক্স-এ ইজরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী লিখেছে, 'যতক্ষণ না পর্যন্ত সকল পণবন্দিদের মুক্ত করা হচ্ছে ততক্ষণ না পর্যন্ত আমরা আমাদের অভিযান বন্ধ করব না।' পোস্টে আরও লেখা হয়, গত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গাজা উপত্যকায় ১৫০টিরও বেশি সন্ত্রাসী লক্ষ্যবস্তু আক্রমণ করা হয়েছে। দুই মাসের যুদ্ধবিরতির চুক্তি ভেঙে গত মার্চ মাসেই গাজায় মানবিক সাহায্যে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল ইজরায়েল।
আরও পড়ুন:
https://inscript.me/the-wartime-spies-who-used-knitting-as-an-espionage-tool/
কেন নতুন করে আক্রমণ ইজরায়েলের? গাজায় নতুন করে যুদ্ধবিরতির আলোচনার এবং অবরোধ প্রত্যাহারের আন্তজার্তিক চাপ বাড়া সত্ত্বেও ইজরায়েল নতুন করে হামলা করছে। শুধু তাই নয় সীমান্তে সাঁজোয়া বাহিনীও মোতায়েন করা হয়েছে। ইজরায়েলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইজরায়েল-এ বলা হয়েছে, 'অপারেশন গিডিয়ন্স চ্যারিওটাস'- একটি বাইবেলের নাম। অনেকেই মনে করছেন, নতুন করে আক্রমণ করার অর্থ হলো, তাদের হয়তো এতদিনের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। এই অভিযানের উদ্দেশ্য- গাজার দক্ষিণ অংশের বেসামরিক নাগরিকদের সরিয়ে নিয়ে ত্রাণ কার্যক্রমের উপর হামাসের যে নিয়ন্ত্রণ তা আটকানো এবং হামাসকে প্রতিহত করা।
ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু মে মাসের শুরুতে জানিয়েছিলেন, ইজরায়েল গাজায় 'তীব্র আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছে।' এর সাথে আরও জানানো হয়েছিল যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য সফর শেষ হলে, তারা এই অভিযান শুরু করবে। বলে রাখা ভালো, শুক্রবারই ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্য সফর শেষ করেছে।
আরও পড়ুন:https://inscript.me/how-pakistans-isi-sponsoring-terrorist-attacks-promoting-islamic-terrorism
গাজায় হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, এখনও পর্যন্ত ইজরাইলি হামলায় গাজায় ৫৩ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি মারা গেছেন। জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ফলকার টুর্ক বলেছেন, ইজরায়েলের সাম্প্রতিক সামরিক অভিযান আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করছে। তাঁর কথায়, 'এই সর্বশেষ বোমাবর্ষণ বাসিন্দাদের জোর করে অন্যত্র পাঠানো বিভিন্ন এলাকাগুলি পদ্ধতিগতভাবে ধ্বংস করা এবং মানবিক সহায়তার আটকনো- এই সকল কিছু মিলিয়ে গাজায় একটি স্থায়ী জনসংখ্যাগত পরিবর্তনের চেষ্টা চলছে বলে মনে হচ্ছে। এটি আন্তর্জাতিক আইন বিরোধী এবং জাতিগত নিধনের সমতুল্য।' মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানিয়েছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। সোমবার জাতিসংঘের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, গাজার জনগোষ্ঠী বর্তমানে চরম দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে রয়েছে। যদিও ইজরাইলি সরকার বরাবরই দাবি করে এসেছে, গাজায় কোন খাদ্য সংকট নেই।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালে ৭ই অক্টোবর হামাসের হামলায় ১২০০ জন নিহত হন এবং ২৫১জনকে পণবন্দি করে নিয়ে যায়। এর পরই ইজরায়েল গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে, যা এখনো চলছে। বর্তমানে হামাসের কাছে ৫৭ জন পণবন্দি রয়েছে। এখন ইজরায়েল আবারও নতুন করে আক্রমণ করছে। গত বৃহস্পতি বার থেকে আকাশপথে গাজায় টানা এই হামলা চলছে। রয়টার্সের তথ্য অনুযায়ী, গাজায় ইজরায়েলি হানায় আরও ১৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং আহত হয়েছেন প্রায় ৪৫০ জন। ইজরায়েল এবং প্যালেস্টাইনের যুদ্ধে প্রতি দিনই ক্ষতবিক্ষত হয়েছে গাজা ভূখণ্ড। সত্যি যদি মানবিক সহায়তা বন্ধ করা হয় মৃত্যুর হার আরও বাড়বে। পরিস্থিতি আরও ভয়ঙ্কর হবে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা অনেকেই মনে করেছিলেন, ট্রাম্পের পশ্চিম এশিয়া সফরের সময়ে ইজরায়েল-হামাস সংঘর্ষ বিরতিতে মীমাংসা হতে পারে। তবে এখনও তেমন কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। সত্যিই কী ইজরায়েলের এতদিনের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে? তাদের কূটনৈতিক প্রচেষ্টাই বা কী? সেই প্রশ্ন থাকছেই।