ইজরায়েলি হানাদারি! ইরানের যে বিশিষ্টজনের প্রাণ গিয়েছে

Iranian : ইজরায়েলি ডিফেন্স ফোর্সেস (আইডিএফ) জানিয়েছে, আইআরজিসি-র বিমানবাহিনীর বেশ কয়েকজন কমান্ডারের সাথে ভূগর্ভস্থ কমান্ড সেন্টারে বৈঠক করছিলেন তিনি। ইজরায়েলি হামলায় পুরো সেন্টারটি ধ্বংস হয়ে যায়।

১৩ জুন ইজরায়েলের হামলায় ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ বাঘেরি, রেভ্যুলেশনারি গার্ড-এর কমান্ডার হোসেইন সালামি-সহ বেশ কয়েকজন শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা এবং অন্তত ৬ জন পরমাণু বিজ্ঞানীর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে ইরান। সামরিক কর্মকর্তা ও পরমাণু বিজ্ঞানী ছাড়াও ইজরায়েলের হামলায় ২২০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে কমপক্ষে ৭০ জন নারী ও শিশু রয়েছে। ইরানের নিহত হওয়া হাই-প্রােফাইল কমান্ডারদের সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

মোহাম্মদ বাঘেরি

ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর সেনাপ্রধান ছিলেন মোহাম্মদ বাঘেরি। অর্থাৎ, তিনিই ছিলেন রেভলিউশনারি গার্ডস ও সেনাবাহিনী– এই দুই বাহিনীরই প্রধান। ১৯৮০ সালে যখন তাঁর ২০ বছর বয়সে সে সময় বাঘেরি আইআরজিসি-তে যোগ দেন। বাঘেরি এবং তাঁর ভাইয়ের আশির দশকে ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময় আইআরজিসি-র গোয়েন্দা বিভাগ প্রতিষ্ঠায় বড় ভূমিকা রয়েছে। অন্য কমান্ডারদের তুলনায় তাঁকে কম কট্টরপন্থী বলে মনে করা হতো। চলতি বছর এপ্রিল মাসে এক ভাষণে যুদ্ধ এড়িয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার কথা বলায় ইরানের মধ্যেই সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন তিনি। এখন তাঁর জায়গায় সশস্ত্র বাহিনীর নতুন প্রধান হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে আব্দোলরাহিম মৌসাভি-কে।

হোসেইন সালামি

ইরানের রেভলিউশনারি গার্ডস, আইআরজিসি-র কমান্ডার ইন চিফ ছিলেন হোসেইন সালামি।বাঘেরির মতো হোসেইন সালামিও ১৯৮০ সালে ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময় আইআরজিসি-তে যোগ দেন। পরবর্তীতে ২০০৯ সালে তিনি ডেপুটি কমান্ডার এবং ২০১৯ সালে বাহিনীর কমান্ডার হিসেবে নিযুক্ত হন। সালামি একজন সুবক্তা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ইজরায়েলের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের জন্যও তাঁর নাম ছিল। চলতি বছর মে মাসে এক ভাষণে তিনি বলেছিলেন, ইজরায়েল বা আমেরিকা ইরানে হামলা করলে তাদের জন্য 'নরকের দরজা খুলে দেওয়া হবে'। ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যমের খবর অনুযায়ী, এখন আইআরজিসি-র নতুন কমান্ডার হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে মোহাম্মাদ পাকপোর-কে।

গোলামালি রশিদ

আইঅরজিসি-র খাতাম-আল আনবিয়া সেন্ট্রাল হেডকোয়ার্টার্সের প্রধান ছিলেন গোলামালি রাশিদ। সেন্ট্রাল হেডকোয়ার্টার্স আইআরজিসি ও ইরানের সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযানগুলোর মধ্যে সমন্বয় করতো। ইরাক ও ইরানের যুদ্ধে সামনে থেকে লড়েছিলেন গোলামালি রশিদ। পরবর্তীতে ইরানের সেনাবাহিনীর উপ-প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি। আলি সাদমানি সেন্ট্রাল হেডকোয়ার্টার্সের প্রধান হয়েছেন বলে জানিয়েছে ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম।

আমির আলি হাজিযাদেহ

আইআরজিসি-র বিমান ও মহাকাশ সংশ্লিষ্ট বাহিনীর প্রধান ছিলেন আমির আলি হাজিযাদেহ।
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র কার্যক্রম সংশ্লিষ্ট কর্মসূচির একজন শীর্ষ কর্মকর্তা হিসেবেও নিযুক্ত ছিলেন তিনি। ইজরায়েলি ডিফেন্স ফোর্সেস (আইডিএফ) জানিয়েছে, আইআরজিসি-র বিমানবাহিনীর বেশ কয়েকজন কমান্ডারের সাথে ভূগর্ভস্থ কমান্ড সেন্টারে বৈঠক করছিলেন তিনি। ইজরায়েলি হামলায় পুরো সেন্টারটি ধ্বংস হয়ে যায়। আইডিএফের দাবি, সেখান থেকে ইজরয়েলের ওপর হামলার পরিকল্পনা করছিলেন তারা। আইডিএফের দাবি করেছে, ২০২৪ সালে অক্টোবর ও এপ্রিলে ইরান ইজরায়েলে যে মিসাইল হামলা করেছিল, তার নির্দেশদাতা ছিলেন আমির আলি হাজিযাদেহ। ২০২০ সালে তেহরানে ইউক্রেনিয়ান বিমানে আক্রমণ করা হয়, তার দায় স্বীকার করেছিলেন আমির আলি হাজিযাদেহ। ওই ঘটনায়  ১৭৬ জন বিমান যাত্রী নিহত হয়েছিলেন। এই  ঘটনার পর থেকে ইরানের নাগরিকদের কাছে হাজিযাদেহর গ্রহণযোগ্যতা অনেকটা কমে গিয়েছিল।

ফেরেইদুন আব্বাসি

ফেরেইদুন আব্বাসি ইরানের পরমাণু বিজ্ঞানী ছিলেন। ইরানের পরমাণু শক্তি কমিশনের প্রধান ছিলেন ২০১১ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত। এরপর ২০২০ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত সংসদ সদস্য ছিলেন।চলতি বছরের মে মাসে ইরানের টিভি চ্যানেল এসএনএন-এর সাথে সাক্ষাৎকারে পরমাণু অস্ত্র তৈরির পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছিলেন তিনি।

ইজরায়েলের হামলায় ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের খবর থেকে জানা গিয়েছে আরও কয়েকজন সুপরিচিত পরমাণু বিজ্ঞানী মারা গিয়েছেন।

মোহাম্মদ মেহদি তেহরানচি: তেহরানের আজাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ছিলেন।

আবদুল্লাহামিদ মিনৌচেহর: ইরানের শহিদ বেহেশতি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান ছিলেন।

আহমেদ রেজা জোলফাঘারি: শহিদ বেহেশতি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যপক ছিলেন।

আমিরহোসেইন ফেকহি: শহিদ বেহেশতি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যপক ছিলেন।

More Articles