জমিদখল থেকে লুঠতরাজ! ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে যে তাণ্ডব চালাচ্ছে ইজরায়েলি দখলদারেরা

Israel-Palestine conflict: কার্ফুর জেরে বাড়িতে বন্দি ফিলিস্তিনি। রাস্তায় বেরোলে ইজরায়েলি সেনার গুলি, আর সেই সুযোগ নিয়ে ইজরায়েলি জবরদখলকারীরা লুঠপাট চালাচ্ছে স্থানীয় মানুষের বাড়িতে।

সাময়িক যুদ্ধবিরতিতে রাজি হলেও ইজরায়েল যে শান্তির পথে নেই, তা গোড়া থেকেই পরিষ্কার করে দিয়েছে তারা। হামাসদের হাত থেকে অপহৃতদের উদ্ধার করতেই চারদিনের সাময়িক যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে নেতানিয়াহু সেনা। তেমন শর্তই দিয়েছিল হামাস। ইতিমধ্যেই হামাসের হাতে বন্দি বেশ কয়েকজন ইজরায়েলি নাগরিককে ফেরত পেয়েছে তারা। সেই সময়টুকু হামলা বন্ধ রেখেছে ইজরায়েলি সেনা। শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে সেই যুদ্ধবিরতি। তার আগের দিন পর্যন্ত লাগাতার হামলা চালিয়ে গিয়েছে তারা। স্কুল, হাসপাতাল, শরণার্থী শিবির, ইজরায়েলি সেনার নিশানা থেকে বাদ নেই কিছুই। এরই মধ্যে আবার গোদের উপর বিষফোঁড়া ইজরায়েলি সেটলার (জবরদখলকারী)-রা। ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক জুড়ে তাণ্ডব চালিয়ে যাচ্ছে তারাও।

অধিকৃত ওয়েস্টব্যাঙ্কে ইজরায়েলি জবরদখলকারীদের অত্যাচার ক্রমাগত বাড়ছে। যখনতখন গুলি চালানো থেকে শুরু করে ফিলিস্তিনিদের ঘরবাড়িতে ঢুকে ধ্বংসলীলা চালানো, বাদ নেই কিছুই। মাথার উপর ইজরায়েলি যুদ্ধবিমান, আর সামনে অত্যাচারি ইজরায়েলি দখলদারেরা। ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক জুড়ে বাসিন্দাদের যেন জলে কুমির ডাঙায় বাঘ। পরিস্থিতি এমন, জমিজিরেত ও ঘরদোর নিয়ে যেন আতঙ্কে-উৎকণ্ঠায় দিন কাটছে তাঁদের। যে কোনও সময় তাঁদের হাত থেকে সবটুকু সম্বল ছিনিয়ে নিতে পারে ইজরায়েলি জবরদখলকারীরা।

আরও পড়ুন: যুদ্ধ থামছে ঘোষণা করেও কেন গাজায় লাগাতার হামলা করছে ইজরায়েল

প্রায় প্রতিদিনই এলাকায় ঢুকে বাসিন্দাদের উপর অত্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে ইজরায়েলি  জবরদখলকারীরা। নৃশংস মারধর থেকে চুরি, ডাকাতি, জবরদখল কিছুই বাদ নেই। ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক সংলগ্ন শহরগুলিতে চলেছে লাগাতার হামলা। গত এক সপ্তাহে জেনিন শহরের শরণার্থী শিবিরগুলিকে নিশানা করে হামলা চালিয়েছে ইজরায়েলি বাহিনী। ওই হামলায় দশ জনের মৃত্য়ু হয়, জখম হয় অন্তত ২০ জন।

ইজরায়েলের স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, ৭ অক্টোবর থেকে শুরু করে এখনও পর্যন্ত শুধু ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে ২৩৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। জখম অন্তত ২৮৫০ জন। প্যালেস্টাইনের সঙ্গে ইজরায়েলের এই সাম্প্রতিক যুদ্ধে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত সেখানকার শৈশব। ইতিমধ্যেই মারা গিয়েছে প্রচুর শিশু। আর যারা বেঁচে রয়েছে, তাদের দিন কাটছে এক নজিরবিহীন আতঙ্ক ও দুঃস্বপ্নেও। বাড়ির বাইরে বেরিয়ে খেলাধুলোর মতো স্বাভাবিক জিনিসগুলো যেন ওদের কাছে এখন দূরের দ্বীপ। ক্রমাগত কানে ভেসে আসে একের পর এক হামলা, বিস্ফোরণ আর গুলির শব্দ। শরণার্থী শিবিরগুলিকে বারবার নিশানা করে চলেছে ইজরায়েলি সেনা।

খেলা বন্ধ। স্কুল বন্ধ। বহু রাস্তাই অবরোধ করে রেখেছে ইজরায়েলি সেনা। দু-একটা জায়গায় অনলাইনে ক্লাস হচ্ছে বটে। তবে যা পরিস্থিতি, গাজা ও প্যালেস্টাইনের অধিকাংশ জায়গাতেই নেট বন্ধ। ফলে পড়াশোনা, খেলাধুলা, এক কথায় স্বাভাবিক বেঁচে থাকার সমস্ত শর্ত লাটে।

Israeli settlers steal Palestinian farmers’ land in occupied West Bank

ওয়েস্ট ব্যাঙ্কের বাসিন্দাদের রাত কাটে না দুশ্চিন্তায়। কখন বাড়িতে এসে পড়বে ইজরায়েলি বোমা, তার চেয়েও বেশি দুশ্চিন্তা কখন যে ঘরে ঢুকে লুঠপাট চালাবে ইজরায়েলি বসতি স্থাপনকারীরা। মুরগির খামার থেকে শুরু করে জমিজিরেত, সবটুকু ছিনিয়ে নিয়ে চলে যাবে তারা। প্যালেস্টাইন জলপাই চাষের জন্য বিখ্যাত। সারা পৃথিবীতে রফতানি হওয়া জলপাইয়ের একটা বড় অংশ আসে এখান থেকেই। সেই জলপাই ক্ষেত, জমি, এখানকার সংস্কৃতির চিহ্নস্বরূপ। যা এই পরিস্থিতিতে বিপাকে।

Israeli settlers steal Palestinian farmers’ land in occupied West Bank

সেই ১৯৬৭ সাল থেকে ওয়েস্টব্যাঙ্ক দখল করে রেখেছে ইজরায়েল। ফিলিস্তিনিদের ভূখণ্ডে অবৈধ ভাবে জোরজাবস্তি বসবাস করে অন্তত ৭ লক্ষ ইজরায়েলি সেটলার। সেই জবরদখলকারীরা বছরের পর বছর ধরে স্থানীয় মানুষের উপরে নিপীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের জলপাই গাছ থেকে শুরু করে কৃষিজমি ছিনিয়ে নেওয়া, সম্পত্তি চুরি, সেসব বিনষ্ট থেকে ধ্বংস, এসব নিয়েই বেঁচে রয়েছেন ওয়েস্ট ব্যাঙ্কের ভূমিপুত্ররা। সাম্প্রতিক এই যুদ্ধ লাগার পর যেন নতুন করে সুযোগ পেয়ে গিয়েছে বসতি স্থাপনকারীরা। ইজরায়েলি সেনার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অত্যাচার বাড়িয়েছে তারাও।

কার্ফুর জেরে বাড়িতে বন্দি ফিলিস্তিনি। রাস্তায় বেরোলে ইজরায়েলি সেনার গুলি, আর সেই সুযোগ নিয়ে ইজরায়েলি জবরদখলকারীরা লুঠপাট চালাচ্ছে স্থানীয় মানুষের বাড়িতে। সশস্ত্র বসতি স্থাপনকারীরা আক্রমণ করছে খামারগুলিকে। ক্ষেতে গেলেই ছুটে আসছে গুলি। বন্দুকের মুখে লুঠ করা হচ্ছে জলপাই। কেড়ে নেওয়া হচ্ছে ফোন। বাড়ির ছেলেদের উপর চলে অকথ্য মার। নিজের বসভূমি ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য করছে তারা ফিলিস্তিনিদের।

আরও পড়ুন:কেন নির্বিচারে ফিলিস্তিনি শিশুদের জেল? কত বন্দি রয়েছে ইজরায়েলের কারাগারে?

নিজের দেশটা সম্পূর্ণ অচেনা হয়ে যাচ্ছে ক্রমশ ফিলিস্তিনিদের কাছে। সব দিক থেকে বাড়ছে অত্যাচার। ক্রমশ কোণঠাসা ফিলিস্তিনিদের শেষ করতে সব শক্তি লাগিয়ে দিচ্ছে ইজরায়েল। আইনকানুনের বালাই নেই। প্যালেস্টাইনের একাধিক জায়গা যেন বধ্যভূমি। যেখানে তাণ্ডব চালাচ্ছে ইজরায়েল। প্যালেস্টাইনকে কোণঠাসা করে চলছে তাণ্ডব। কখনও সেনাবাহিনীর রূপ নিয়ে, তো কখনও দখলদারেরর রূপ নিয়ে, প্যালেস্টাইনের মাটিকে সব রকম ভাবে রক্তাক্ত করে চলছে নেতানিয়াহুর পক্ষ। হিসেব মতো, যুদ্ধবিরতি শেষ হয়ে যাওয়ার কথা এবার। তার পর কি ফের হামলার মাত্রা বাড়িয়ে ভয়ঙ্কর রূপে দেখা দেবে ইজরায়েল? আতঙ্কে ঘুম আসছে না ফিলিস্তিনি সাধারণ মানুষের।

 

More Articles