রমজানে মৃত ৪১৩! যুদ্ধবিরতির মধ্যেও কেন গাজায় আবার হামলা ইজরায়েলের?

Israel Strike On Gaza Ceasefire: যুদ্ধবিরতির মাঝে রমজান মাসে যে বিমান হামলা হলো, তাতে নিহতদের বেশিরভাগ শিশু, মহিলা এবং বৃদ্ধ। হামলায় প্রায় ১৫০ জন আহত হয়েছেন।

গত ১৯ জানুয়ারি থেকে গাজায় যুদ্ধবিরতি শুরু হয়েছে। ঠিক দুই মাসের কাছাকাছি সময়ে এসে আবারও গাজায় বিশাল হামলা চালিয়েছে ইজরায়েল। মঙ্গলবার গাজায় এই হামলায় কমপক্ষে ৪১৩ জন নিহত হয়েছে। ইজরায়েলি সামরিক বাহিনীর দাবি, হামাসকে লক্ষ্য করেই এই হামলা চালানো হয়েছে। যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর থেকে যুদ্ধ-বিধ্বস্ত গাজা অঞ্চলে এটিই ছিল সবচেয়ে বড় হামলা। গাজার অসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থা বলেছে, রমজান মাসে যে বিমান হামলা হলো, তাতে নিহতদের বেশিরভাগ শিশু, মহিলা এবং বৃদ্ধ। হামলায় প্রায় ১৫০ জন আহত হয়েছেন।

উত্তর গাজা, গাজা শহর এবং মধ্য ও দক্ষিণ গাজা উপত্যকার দেইর আল-বালাহ, খান ইউনিস এবং রাফাহ সহ একাধিক স্থানে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। গাজা উপত্যকায় হামাসের পুলিশ এবং অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা পরিষেবার প্রধান মাহমুদ আবু ওয়াতফাও গাজা শহরে হামলায় নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্সেস (আইডিএফ) এক্স-এ একটি পোস্টে জানিয়েছে, তারা রাজনৈতিক উপরমহলের কথানুসারেই গাজা উপত্যকায় হামাস সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের অন্তর্গত সন্ত্রাসী লক্ষ্যবস্তুগুলিতে ব্যাপক হামলা চালাচ্ছে। ইজরায়েল গাজার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের কাছাকাছি সব স্কুলগুলিও বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে।

 

আরও পড়ুন-ইজরায়েলকে এত দিন ঢালাও অস্ত্রসাহায্য বাইডেনের, যুদ্ধ থামাতে চাইবেন ট্রাম্প?

প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় জানিয়েছে, ইজরায়েলেদের বন্দিদের মুক্তি দিতে হামাস বারবার অস্বীকার করেছে। পাশাপাশি, মার্কিন রাষ্ট্রপতির দূত স্টিভ উইটকফ এবং মধ্যস্থতাকারীদের তরফে সমস্ত প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানও করেছে। যার পরেই এই হামলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। জানা গেছে, ইজরায়েল এখন হামাসের বিরুদ্ধে আরও 'বর্ধিত সামরিক শক্তি' নিয়ে কাজ করবে।

হামাস অবশ্য বলেছে, নেতানিয়াহু আবার যুদ্ধ শুরু করে বন্দিদের 'বলিদান' দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। হামাসের এক কর্মকর্তা এক বিবৃতিতে বলেছেন, "নেতানিয়াহু আবার যুদ্ধ শুরুর যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা আখেরে বন্দিদের বলিদান এবং তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার সিদ্ধান্ত।” তাঁর মতে ইজরায়েলি নেতা আসলে অভ্যন্তরীণ সংকট থেকে বিশ্বে বিভ্রান্ত করার জন্যই এই যুদ্ধটিকে রাজনৈতিক 'লাইফবোট' হিসাবে ব্যবহার করছেন। পৃথক এক বিবৃতিতে, হামাস নেতানিয়াহুকে যুদ্ধবিরতির চুক্তি লঙ্ঘনের জন্য সম্পূর্ণরূপে দায়ী করেছে। হোয়াইট হাউসের একজন মুখপাত্র আবার বলেছেন, ইজরায়েল নতুন করে হামলা চালানোর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের পরামর্শ নিয়েছে।

 

আরও পড়ুন- ঝাঁ চকচকে হবে ধ্বংসস্তূপ! গাজাকে নিয়ে যা পরিকল্পনা ডোনাল্ড ট্রাম্পের

উল্লেখ্য, যুদ্ধবিরতি বিষয়ক আলোচনা স্থগিত হয়ে গিয়েছিল কারণ ইজরায়েল তিন-পর্যায়ের যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রথম ধাপের মেয়াদ বাড়াতে চেয়েছিল। হামাস তখন বলেছিল যে দ্বিতীয় ধাপে, যা ২ মার্চ শুরু হওয়ার কথা ছিল, তারা আবার বন্দিদের মুক্ত করা শুরু করবে

ইজরায়েল প্রথম পর্বটি এপ্রিলের মাঝামাঝি পর্যন্ত বাড়াতে চেয়েছিল। ইজরায়েল বলেছিল যে দ্বিতীয় ধাপে যে কোনও বদলের মধ্যে অবশ্যই গাজার 'সম্পূর্ণ নিরস্ত্রীকরণ' হতে হবে এবং হামাসকে অপসারণ করতে হবে। ২০০৭ সাল থেকে এই অঞ্চলটি নিয়ন্ত্রণ করছে হামাস।

 

গত সপ্তাহে হামাস জানায় যে, তারা আমেরিকান-ইজরায়েলি সৈনিক এডান আলেকজান্ডার এবং চারজন বন্দির মৃতদেহ হস্তান্তর করবে যদি ইজরায়েল চুক্তির দ্বিতীয় ধাপ বাস্তবায়নে অবিলম্বে আলোচনা শুরু করতে সম্মত হয়।

গাজা যুদ্ধবিরতির প্রাথমিক পর্যায়ে প্রায় ১,৮০০ ফিলিস্তিনি বন্দির বিনিময়ে ৩৩ জন ইজরায়েলি বন্দিদের মুক্তি দিয়েছে, যার মধ্যে পাঁচটি মৃতদেহ রয়েছে। এখনও প্রায় ৫৯ জনকে বন্দি করে রেখেছে হামাস।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস দক্ষিণ ইজরায়েলে হামলা করে প্রায় ১,২০০ মানুষকে হত্যা করে, ২৫১ জনকে বন্দি করে। এই আক্রমণের বদলা নিতে ইজরায়েল যে প্রতিশোধমূলক হামলা শুরু করে, তাতে এখনও পর্যন্ত ৪৮,০০০-এরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১.১২ লাখেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।

More Articles