জাপানের অস্তিত্বই মুছে যাবে পৃথিবী থেকে! কেন এমন আশঙ্কার কথা শোনালেন প্রধানমন্ত্রী?
Japan Disappered Prime Minister Worry : জাপান দেশটারই হয়তো অস্তিত্ব থাকবে না। কিন্তু হঠাৎ কী এমন সংকট দেখা দিল পূর্ব এশিয়ার এই দেশে?
জাপান, মানে সূর্যোদয়ের দেশ। সেখানকার মানুষের নিয়মানুবর্তিতা, কাজের প্রতি নিষ্ঠা, সময়জ্ঞান আর প্রযুক্তির বিস্ফোরণ পৃথিবীর অন্যান্য দেশও সমীহ করে। সেই ভূমিকম্পের দেশ জাপানই এখন সংকটের মুখে! সরকারি আধিকারিকরা প্রতি মুহূর্তে বিপদের গন্ধ পাচ্ছেন। এমন অবস্থা যে, খোদ সেখানকার প্রধানমন্ত্রীও দেশের এমন অবস্থা নিয়ে মহা চিন্তায়। তিনি এও আশঙ্কা করছেন, অবস্থা না বদলালে জাপান দেশটারই হয়তো অস্তিত্ব থাকবে না। কিন্তু হঠাৎ কী এমন সংকট দেখা দিল পূর্ব এশিয়ার এই দেশে?
অতিমারির ভয়াবহ পরিস্থিতি এখন অনেকটা ঠিকঠাক। বিজ্ঞান, প্রযুক্তিও নিজেদের ডানা মেলেই চলেছে। এই সময় দাঁড়িয়ে থেমে নেই জাপানও। তবে জাপান প্রশাসনের সাম্প্রতিক একটি রিপোর্টই যত চিন্তার কারণ। সেই রিপোর্টই এখন সেখানকার সরকারের মাথাব্যথা। কেন? জাপান প্রশাসনের সেই রিপোর্ট বলছে, জাপানে শিশুদের জন্মহার কমছে। কিন্তু সেই জন্মহারের তুলনায় বাড়ছে মৃত্যুহার। কীরকম? ২০২১ সালে যেখানে ৮ লক্ষ ১০ হাজার মতো শিশু জাপানে জন্মগ্রহণ করে, সেখানে ২০২২-এ সংখ্যাটি দাঁড়ায় প্রায় সাড়ে সাত লক্ষ! অন্যদিকে, ২০২২-এই সাড়ে ১৫ লক্ষেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। নিট ফল? জাপানের জনসংখ্যা কমছে।
জাপান প্রশাসন বলছে, যত দিন যাচ্ছে, জন্মহার আর মৃত্যুহারের এই ব্যবধান বাড়ছে। সেখানে একটা বড় অংশের মানুষ বয়স্ক। একটু একটু করে তাঁদেরও মৃত্যু হবে। এই অবস্থাতেই শিয়রে সমন দেখছে জাপান। জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদাও এই ব্যাপারে যথেষ্ট চিন্তিত। মন্ত্রী পরিষদও প্রতিদিন এই সমস্যা সমাধানে আলোচনা করছেন। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে খোদ প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর পার্ষদদের আশঙ্কা, জনসংখ্যা এমন দ্রুতগতিতে কমতে থাকলে জাপান দেশটাই হারিয়ে যাবে পৃথিবী থেকে। আর কেউ থাকবেই না সেখানে!
কিন্তু এমনটা কেন হচ্ছে? জাপানের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, প্রযুক্তি যথেষ্ট উন্নত। আর্থিক দিক দিয়েও এই দেশটি স্বাবলম্বী। জীবনযাপনে যথেষ্ট নিয়ম মেনে চলেন সেখানকার সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষই। জাপানে সময়ের দাম রয়েছে। তাহলে কেন এমন পরিস্থিতি? সাত বছর পর জন্মহারের পতন এবং মৃত্যুহারের বৃদ্ধি – কেন? বিশেষজ্ঞদের মতে, এর অন্যতম কারণ হল সুস্থ ফ্যামিলি প্ল্যানিং, জন্ম নিয়ন্ত্রণ ও সরকারের বেশকিছু নীতি। কেবল জাপান নয়, চিন, আমেরিকা, ইতালি, দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশগুলিতেও জন্মহার কমছে।
আগেকার দিনে, একজন দম্পতির দুইয়ের বেশি সন্তান থাকত। ভারতের মতো এশিয়ার দেশগুলিতে সেটা ছিল মামুলি ব্যাপার। কিন্তু এখন পৃথিবীর বেশ কয়েকটি দেশ জন্ম নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে পদক্ষেপ নিয়েছে। ভারত সরকারের তরফ থেকে যেমন প্রচার করা হয় ‘হাম দো হামারে দো’ কর্মসূচি। চিনে ‘ওয়ান চাইল্ড পলিসি’ বা এক শিশু নীতির প্রচলনও রয়েছে। সেখানে সংসারে একটি শিশু থাকলে সরকারের তরফে বিশেষ সুবিধা পাওয়া যায়। জাপানেও ব্যাপারটি অনেকটাই তেমন।
এদিকে মৃত্যুহারের সঙ্গে জন্মহার বাড়লে জনসংখ্যায় একটা সামঞ্জস্য বজায় থাকে। কিন্তু জাপানে সেটা হচ্ছে না। এই প্রসঙ্গে সেই দেশের প্রশাসনের আরও একটি রিপোর্ট নিয়ে আলোচনা করা যাক। ২০২২-এ জাপান ক্যাবিনেট অফিস থেকে জেন্ডার বা লিঙ্গভিত্তিক রিপোর্ট পেশ করা হয়। সেখানে একটি পরিসংখ্যানে বলা হয়, ৩০ বছর বয়সি মেয়েদের মধ্যে ২৫.৪ শতাংশ বিয়েই করতে চান না। একইভাবে ২৬.৫ শতাংশ পুরুষও বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে চান না। বিয়ে করলেও, সন্তান ধারণের ব্যাপারে সাবধানে পদক্ষেপ নিতে চায় তরুণ প্রজন্ম। এছাড়াও নিজেদের সংস্কৃতিকে বাঁচানোর জন্য জাপানের অভিবাসন নীতিও অত্যন্ত কড়া। আর এই সবকিছুর ফলই পড়েছে সেনসাসে।
সম্প্রতি চিন নিজের কড়া ‘ওয়ান চাইল্ড পলিসি’ থেকে একটু সরে দাঁড়িয়ে নরম হয়েছে। জাপানও কি সেই পথে হাঁটবে? নিজেদের নিয়মকানুন নিয়ে আরেকটু ভাবনাচিন্তা করবে? কারণ যদি এভাবেই মৃত্যুর হার বেড়ে যায়, আর জন্মের হার কমতে থাকে, তবে সামাজিক ব্যবস্থাটা আস্তে আস্তে ভেঙে পড়বে। তাতে আখেরে বিপদে পড়বে গোটা দেশটাই।