একটু একটু করে ডুবছে আস্ত শহর! কনকনে ঠান্ডায় রাস্তায় জোশীমঠের মানুষ
Joshimath Sinking: জোশীমঠ পৌরসভা একটি সমীক্ষা চালিয়ে দেখেছে, এক বছরে শহরের ৫০০ টিরও বেশি বাড়িতে ফাটল দেখা দিয়েছে
তলিয়ে যাচ্ছে জোশীমঠ। পার্বত্য শহর শীতে কাঁপছে, আর আতঙ্কে এই ভয়াবহ শৈত্যপ্রবাহের মধ্যেও রাস্তায় রাত কাটাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষদের। ধসে যাচ্ছে ঘরবাড়ি, রাস্তা, মন্দির। গোটা শহরটাই যেন তলিয়ে যাচ্ছে পাথরের ফাটলের মধ্যে। সংবাদ সংস্থা এএনআইয়ের তথ্যানুযায়ী, প্রায় ৫৬১টি বাড়িতে ফাটল দেখা দিয়েছে। সিংধর এবং মারওয়াড়িতে ফাটল বাড়ছে। বন বিভাগের চেকপোস্টের কাছে সিংধর জৈন এলাকা এবং মারওয়াড়িতে জেপি কোম্পানি গেটের কাছে বদ্রীনাথ জাতীয় সড়কে ক্রমাগত ফাটল ধরছে, প্রতি ঘণ্টায় এই ফাটল বাড়ছে। জোশীমঠের বিপজ্জনক বাড়িগুলিতে বসবাসকারী প্রায় ৬০০ পরিবারকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ভূমিধসের দ্রুত সমীক্ষা করার জন্য একটি বিশেষজ্ঞ দল গঠন করেছে কেন্দ্র৷ বাড়িঘর, উঁচু বিল্ডিং, ন্যাশনাল হাইওয়ে, অন্যান্য পরিকাঠামো এবং নদী ব্যবস্থার উপর এই ভূমি ধসে যাওয়ার প্রভাবগুলি খতিয়ে দেখবে দলটি। তবে এই মুহূর্তে মানুষের জীবন বাঁচানোটাই সবার আগে। উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি জানিয়েছেন, অবিলম্বে তাৎক্ষণিক ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করতে প্রস্তুত হতে হবে তাঁদের। চিকিৎসার সুবিধার পাশাপাশি, সমস্যায় পড়া মানুষদের এয়ারলিফ্ট করার ব্যবস্থাও করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
শুক্রবার সন্ধ্যায় জোশীমঠে একটি মন্দির ধসে পড়েছে ফাটলের কারণে গত ১৫ দিন ধরে ওই মন্দিরটি পরিত্যক্ত থাকায় কোনও হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। আরও বেশ কয়েকটি বাড়িতে বিশাল ফাটল দেখা দিয়েছে। সকাল থেকে রাত, সমস্তটা সময় আতঙ্কিত বাসিন্দাদের একটাই চিন্তা, এর পরে কী? স্থানীয়রাই বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন এবং অবিরাম এই অঞ্চলে ভারী ভারী উন্নয়ন এই বিপদ ডেকে এনেছে। বিশেষজ্ঞরাও বলছেন মানুষের কার্যকলাপ এবং প্রাকৃতিক বিপদ সবটা মিলেই আজ এই দশা। এই ধস, এই ফাটল- এই একটাও ঘটনার কারণ সাম্প্রতিক নয়, দীর্ঘ সময় ধরে একটু একটু করে জোশীমঠ বিপদের মধ্যে পড়েছে।
আরও পড়ুন- চিরতরে তলিয়ে যাচ্ছে জোশীমঠ! বন্ধ হোটেল, কেন বাড়ি ঘর ছেড়ে পালাচ্ছেন মানুষ?
জোশীমঠের অন্তত ৯টি ওয়ার্ডে ফাটল ও ভূমিধসের ঘটনা ঘটেছে। শহরের গান্ধীনগর ও রবিগ্রাম ওয়ার্ডে সর্বাধিক ঘটেছে এই ঘটনা। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা দলের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রায় ৫০টি পরিবারকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বিষ্ণু প্রয়াগ জলবিদ্যুৎ পরিকল্পনা কর্মীদের একটি কলোনিতে বসবাসকারী ৬০ টি পরিবারকেও অন্যত্র স্থানান্তরিত করা হয়েছে। চামোলি প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের জন্য অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র হিসাবে ১২৭১ জনের থাকার মতো ২২৯টি ঘরের অস্থায়ী আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেছে।
প্রশাসনের পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত NTPC-এর তপোবন-বিষ্ণুগড় জলবিদ্যুৎ প্রকল্প এবং মারওয়াড়ি-হেলাং বাইপাস মোটর রোডের কাজ অবিলম্বে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে জোশীমঠ-আউলি রোপওয়ে। মূল শহর এলাকায় চলমান অন্যান্য নির্মাণকার্যের উপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। যে সমস্ত পরিবারগুলি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বা যে পরিবারগুলি গৃহহীন হয়ে পড়েছে তাদের মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে ৬ মাসের জন্য পরিবার প্রতি ৪,০০০ টাকা দেওয়া হবে, বলে জানিয়েছে প্রশাসন।
আরও পড়ুন- পাপের শাস্তি, এসেছে খারাপ সময়! জলবায়ু পরিবর্তনকে যেভাবে দেখছেন হিমালয়বাসী
বদ্রীনাথ এবং হেমকুণ্ডের মতো হিন্দু ও শিখ ধর্মীয় গন্তব্যের প্রবেশদ্বার হল জোশীমঠ। এটি চিনের সঙ্গে ভারতীয় সীমান্তের একটি প্রধান সামরিক ঘাঁটিও। এশিয়ার বৃহত্তম আউলি রোপওয়ের নীচে একটি বিশাল ফাটল তৈরি হওয়ার পরে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ২০২৩ এই যে প্রথম এই ঘটনা ঘটেছে এমনটা মোটেও না। ২০২১ সালে যখন চামোলিতে বেশ কয়েকটি ভূমিধস দেখা দেয় তখনই ঘরবাড়িতে ফাটল দেখা দিয়েছিল। বাসিন্দারা কাঠের খুঁটি ব্যবহার করে বাড়ি ঘরকে ঠেস দিয়ে রাখতে শুরু করেন। পরের বছরও, মানে ২০২২ সাল জুড়ে প্রায়ই ভূমিকম্প দেখা দেয়। গতবছরই উত্তরাখণ্ড সরকার বিশেষজ্ঞদের একটি প্যানেল তৈরি করে। এই বিশেষ দলটিই জানিয়েছিল, জোশীমঠের বেশ কয়েকটি অঞ্চল মনুষ্যসৃষ্ট এবং প্রাকৃতিক কারণে তলিয়ে যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছিলেন, ভূপৃষ্ঠের উপাদান, মানে জঙ্গল জমি ইত্যাদি সরিয়ে বা খনন করে বসতি স্থাপন হয়েছে, শহর, হোটেল ও অন্যান্য নানা কাঠামো গড়ে উঠেছে। পাথরে প্রাকৃতিক চ্যুতির কারণেও জোশিমঠের প্রায় সমস্ত ওয়ার্ডের ক্ষতি হয়েছে। সারা শহরটিই আস্তে আস্তে তলিয়ে যাচ্ছে। গত বছর জোশীমঠ পৌরসভা একটি সমীক্ষা চালিয়ে দেখেছে, এক বছরে শহরের ৫০০ টিরও বেশি বাড়িতে ফাটল দেখা দিয়েছে। জোশীমঠের গান্ধীনগর, রবিগ্রাম এবং সুনীল এলাকায় ৪০ টিরও বেশি পরিবার বাড়ির ভাঙন আটকাতে কাঠের খুঁটি দিয়ে কোনও মতে বাড়ি ধরে রেখেছে।