বাচ্চা চাই! কেঁদেকেটে একশা উত্তর কোরিয়ার একনায়ক কিম

Kim Jong Un: যে হৃদয়কে তুলনা করা হয় হিটলার কংবা মুসোলিনির মতো স্বৈরাচারীর সঙ্গে, হঠাৎ কেন আর্দ্র হয়ে উঠল সেই কিমের হৃদয়। কেন জনসমক্ষে কাঁদলেন তিনি?

তাঁর ভয়ে বাঘে গরুতে এক ঘাটে জল খায়। গোটা বিশ্বের সমস্ত দেশনায়ক বা একনায়কের চেয়েও যেন তিনি ভয়ঙ্কর। তাঁকে ডরায় না এমন রাষ্ট্র বা রাষ্ট্রনেতা বিরল। অথচ গোলগাল মানুশষটাকে দেখলে কে বলবে তাঁর ভিতরেই লুকিয়ে রয়েছে এক দোর্দণ্ডপ্রতাপ শাসক-মন। কথা বলছি উত্তর কোরিয়ার একনায়ক কিম জং উনকে নিয়ে। কিম এবং উত্তর কোরিয়া, তাবড় বিশ্বের কাছেই এক ত্রাসের নাম। প্রায়শই শোনা যায় রাজদ্রোহীকে তিনি উড়িয়ে দিয়েছেন গুলিতে। সে দেশে জেলে যাওয়ার রাস্তা থাকলেও, বেরোনোর রাস্তা নেই। এমনটাই বলে থাকেন নিন্দুকেরা। এমনকী শত্রুকে পিরানহা ঠাসা জলাশয়ে ফেলে দিতেও কাঁপে না যার বুক, সেই কিমের চোখে নাকি জল! উত্তর কোরিয়ার একটি অনুষ্ঠানে বসে ভরা সভায় কেঁদে ফেলেন উত্তর কোরিয়ার শাসক কিম।

এমন আশ্চর্য ঘটনায় চমকে উঠেছে গোটা বিশ্ব। কিমের আবেগ আর পশ্চিমদিকে সূর্য ওঠা, অনেকটা একই রকম। এতগুলো বছরে তাঁর চোখে জল তো দূরের, তাঁকে নরম হতেই দেখেননি কেউ কখনও। ফলে দেশের ভিতরে বাইরে সকলেই ভয়ে কাঁটা কিমের। সম্প্রতি উত্তর কোরিয়ায় হয়ে গেল মাতৃদিবস। সেই মাতৃদিবসের একটি অনুষ্ঠানে দেশের মহিলাদের সামনে বসে কেঁদে ফেললেন সেই কিম। চোখের জল বাঁধ মানছে না। কোনওমতে রুমাল দিয়ে চোখ মুছে তবু বক্তৃতা চালিয়ে যাচ্ছেন স্বৈরাচারী শাসক। যা দেখে চক্ষু ছানাবড়া হয়ে গিয়েছে অনুষ্ঠানে আগত সমস্ত অতিথির। স্বাভাবিক ভাবেই নেটবিশ্বে ভাইরাল হয়ে গিয়েছে সেই ভিডিও। যা দেখে ভ্রূ কুঁচকেছে গোটা দুনিয়াই।

আরও পড়ুন: বয়স দশ, যেভাবে উত্তরসূরীকে তিলে তিলে গড়ছেন কিম জং

 

না, গোপন কান্না সে নয়। এমনকী চোখের জল লুকানোর কোনও চেষ্টাই ছিল না তাঁর। বরং প্রকাশ্যেই দেশের মহিলাদের সামনে নিজের আবেগ এনে রেখেছেন কিম। না, প্রাথমিক ভাবে অবশ্য আঙুল দিয়ে চোখের জল মুছে ফেলার চেষ্টা তিনি করেছিলেন। কিন্তু বাঁধ মানেনি সেই স্রোত। শেষ পর্যন্ত বাধ্য হন রুমালের সাহায্য় নিতে। মুখ নামিয়ে চোখ মুছে নেন তিনি। কিন্তু কিমের হলটা কী? যে হৃদয়কে তুলনা করা হয় হিটলার কংবা মুসোলিনির মতো স্বৈরাচারীর সঙ্গে, হঠাৎ কেন আর্দ্র হয়ে উঠল সেই কিমের হৃদয়। কেন জনসমক্ষে কাঁদলেন তিনি?

কোরিয়ার সেন্ট্রাল টেলিভিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, কোরিয়ার মা-দের নিয়ে একটি বৈঠক ডাকা হয়েছিল। পিয়ংইয়ঙে সে বৈঠক ডাকেন স্বৈরাচারী স্বয়ং। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন ওঠে, যে দেশনায়ক ব্যস্ত মুহূমুহু অস্ত্র পরীক্ষা আর নিজের আঙুলের ডগায় দেশকে নাচাকতে, তাঁর হঠাৎ দেশের মহিলাদের প্রয়োজন হল কেন। আর এরপরেই জানা গেল আসল কথাটি। উত্তর কোরিয়ায় জন্মহার নাকি কমতে কমতে তলানিতে ঠেকেছে। যা নিয়ে নাকি বেজায় চিন্তিত কিম। এই বিপদে তাঁকে উদ্ধার করতে পারে দেশের মেয়েরাই। তাই তাঁদের ঘটা করে ডেকে আনা। সেখানে উত্তর কোরিয়ার মায়েদের কাছে আরও সন্তান প্রসবের আর্জি জানান কিম। জানান, দেশের জন্মহার বৃদ্ধিতে সাহায্য় করতে পারেন কেবল মায়েরাই। দেশের জাতীয় শক্তিকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রেও যে একমাত্র ভরসা তাঁরাই, এ কথাও জানান কিম। এরপরেই আবেগে সিক্ত হয়ে দেশনায়ক জানান, তিনি যখনই সমস্যায় পড়েন, তখনই তাঁর প্রথম মনে পড়ে মায়েদের কথা।

গত এক বছরে উত্তর কোরিয়ায় জন্মের হার তলানিতে এসে ঠেকেছে। মাত্র ১.৮ শতাংশ জন্মহার নিয়ে কাজেই উদ্বেগে সে দেশের সরকার। আপাতত উত্তর কোরিয়ার জনসংখ্যা আড়াই কোটির কাছাকাছি। এ ভাবে চলতে থাকলে অচিরেই বাসিন্দাহীন হয়ে পড়বে দেশটি। দীর্ঘদিন খাদ্যাভাবের মধ্যে গিয়েছে উত্তর কোরিয়া। তার উপর কিমের মতো স্বৈরাচারী শাসকের হাতে পড়ে তাদের জীবন ওষ্ঠাগত। পান থেকে চুণ খসলেই মেলে কঠিনতর শাস্তি। এমনকী বাদবাদি দেশগুলির মতো খোলামেলা মেশা বা বাইরের পৃথিবীতে যাওয়ার অনুমতিও নেই উত্তর কোরিয়ার বাসিন্দাদের। সে কারণেই কি এমন কঠিন দেশে নতুন শিশুদের আনতে অনিহাবোধ করছেন দেশের মানুষ! কেন কমে যাচ্ছে কোরিয়ার জনসংখ্যা প্রতিনিয়ত! যা বজায় রাখতে জনসমক্ষে কাঁদতে হল স্বৈরাচারী রাষ্ট্রনায়ক কিম জং উনকে।

আরও পড়ুন: করোনা নেই, তবুও উত্তর কোরিয়ায় লকডাউন! কারণ শুনলে হেসে গড়িয়ে পড়বেন আপনিও

যদিও সমালোচকদের কেউ কেউ বলছেন, এ সবই সাজানো। পাথরহৃদয় কিমের চোখের জল আসলে কুমিরের কান্না ছাড়া আর কিছুই নয়। জনসংখ্যা বাড়াতে উত্তর কোরিয়া সরকারের তরফে ইতিমধ্যেই নানা প্রকল্পের ঘোষণা করা হয়েছে। তিন বা তার বেশি সন্তান থাকলে, বাড়িভাড়া মকুব, বিনামূল্যে খাবার ও ওষুধ সরবরাহের মতো একাধিক প্রতিশ্রুতি ব্যবহার করা হয়েছে। তবে সেসব কোনও কিছুই কাজ না হওয়ায় শেষপর্যন্ত আস্তিন থেকে চোখের জলের ব্রহ্মাস্ত্রটি ব্যবহার করলেন উত্তর কোরিয়ার এই স্বৈরাচারী শাসক।

More Articles