সংস্কৃতির নামে ভড়ংকে লাথ মেরে চুমু খায় বিদ্রোহী যোদ্ধারা
Kissing in Public: সেই যে ইডেন গার্ডেনে ফলমূল খেয়ে, জ্ঞানপ্রাপ্ত হয়ে, যা কিছু করা হলো, তাকে ভগবান পাপ দাগিয়ে দিলেন, সেই থেকে চলছে এই লুকিয়ে চুরিয়ে খেলা।
সিগারেটকে অনেকে হেরোইনের লাইসেন্স মনে করেন। আর হেরোইনকে বলা হয় ক্যুইন অফ অল ড্রাগস। সিগারেট খাচ্ছে মানেই কেউ হেরোইনে পৌঁছবে এমন নয় কিন্তু হেরোইনে পৌঁছে গেছে এমন কাউকে পাওয়া প্রায় অসম্ভব যে সিগারেট দিয়ে শুরু করেনি। তেমনই এমন কোনও বান্দার দেখা পাওয়া মুশকিল যে, চুমু খায়নি কখনও কিন্তু সেক্স করেছে ভরপুর। মোটামুটি চুমু দিয়েই শুরুয়াত হয়, সারা পৃথিবীতেই। যে চার্চ বাচ্চা পয়দা করার নিমিত্ত ছাড়া সেক্সকে মহাপাপ ঠাউরেছে, সেই চার্চও হোলি ওয়েডলকের অন্তে 'ইউ মে কিস ইচ আদার'-এর অনুমতি দেয়। যদিও বাচ্চা পয়দা করার ক্ষেত্রে চুম্বন অপরিহার্য নয়।
মূল ঝামেলাটা পাকান ফ্রান্সে দিদেরো। তিনি প্রথম এনসাইক্লোপিডিয়া রচনা করেন, আর সেখানেই জানিয়ে দেন- সমস্ত কার্যের কারণ আছে। এমনি এমনি কিছুই ঘটছে না। অর্থাৎ ঈশ্বরের ইচ্ছে মুখ্য ব্যাপার নয়। বর্ষার দুপুরে বা শীতের রাতে বা যখন তখন, যেখানে সেখানে আমাদের ইচ্ছেও কারণ হতে পারে কার্যের। আর সেক্সের ক্ষেত্রে আমাদের ইচ্ছে শুধুই সন্তান উৎপাদনের কারণে পবিত্র ইন্টুপিন্টু নয়, ইন্টুপিন্টুর কারণেই ইন্টুপিন্টু। সেক্স করতে আমাদের ভালো লাগে। প্লেজার পাই। প্লেজারই প্রাথমিক কারণ, সন্তান উৎপাদন সেকেন্ডারি।
দিদেরোর বন্ধু ছিলেন সাদ। সাদ হোমোসেক্সুয়াল এবং পায়ুকামী, এই কারণে তাঁর ঠাঁই হয় জেলে। সাদ নিজে কিন্তু ছিলেন বুরব্যোঁ রাজপরিবারেরই আত্মীয়। নিজের হোমোসেক্সুয়ালিটি এবং অ্যানাল সেক্সের প্রতি আকর্ষণকে তিনি যদি সোচ্চারে ঘোষণা না করতেন, তাহলে অ্যারিস্টোস্ক্র্যাটের বৈভবের জীবনই ছিল সাদের বরাতে। কিন্তু সেক্স বড় বালাই। প্রায় সকলেই করতে চায়, সকলেই করেও, কিন্তু স্বীকার যায় না।
আরও পড়ুন- ‘চুম্বন তো আগেও বহুবার, এবার ঠোঁটে মিলেছে আশ্রয়’
সেই যে ইডেন গার্ডেনে ফলমূল খেয়ে, জ্ঞানপ্রাপ্ত হয়ে, যা কিছু করা হলো, তাকে ভগবান পাপ দাগিয়ে দিলেন, সেই থেকে চলছে এই লুকিয়ে চুরিয়ে খেলা। কিন্তু আমাদের দেশে তো অমনধারা ব্যাপার ছিল না। আজ সনাতনীরা যৌনতাকে যে বাইবেলের ধাঁচেই মনুসংহিতা দিয়ে বাঁধতে চাইছে, তা হিন্দুদের ইতিহাসেই সার্বিক মান্যতা পায়নি। খাজুরাহো-সহ মন্দিরের দেওয়ালগুলোতে চোখ রাখলেই অ্যানাল সেক্স, অর্জি, ওরাল সেক্স, ফেমডম, সকলই দেখতে পাওয়া যাবে। অর্থাৎ সকলই ছিল ভরপুর এবং তার প্রদর্শনও ছিল স্বাভাবিক। প্রদর্শন থাকলেই দর্শনও নিশ্চিত ছিল। এক্ষেত্রে কার্যই কারণের প্রমাণ। যৌনতার ক্ষেত্রে এক্সিবিশিনিজম এবং ভয়্যারিজম স্বাভাবিক প্রবণতা। যেমন স্বাভাবিক মাস্টারবেশন, অ্যানাল পেনিট্রেশন, ওরাল পেনিট্রেশন। সবই স্বাভাবিক, যদি সম্মতি থাকে। আমাদের সমস্ত যৌনকর্ম আসলে যৌথকর্ম। একমাত্র মাস্টারবেশন খানিক স্বয়ংসম্পূর্ণতা দাবি করতে পারে। তাই একমাত্র মাস্টারবেশনকেই চূড়ান্ত প্রাইভেট কাজ বলা যায়। তাই পথেঘাটে বাসের পেছনের সিটে বসে সামনের কাউকে যখন মাস্টারবেশন দেখতে বাধ্য করা হয়, সেটা পারভার্সন। সেখানে এক্সিবিটর আর স্পেকটেটরের মধ্যে কোনও মেমোরেন্ডাম অফ আন্ডারস্ট্যান্ডিং থাকে না। এই মাস্টারবেশন ছাড়া বাকি সব পাবলিক ডিসপ্লে অফ অ্যাফেকশনের একটা অলিখিত মউ আছে। আপনি দেখবেন কী দেখবেন না- আপনার ওপর, কিন্তু যাঁরা ডিসপ্লে করছেন, তাঁদের মরাল জাজমেন্ট দেওয়া নিতান্তই আনস্মার্ট ব্যাপার। তারা আপনার পরোয়া করে না, তোয়াক্কা করে না এবং সেটা একক নয়, যৌথভাবে। তারা অন্তত দু'জন। তারা অন্তত দু'জনের একটা দল। একটা গোষ্ঠী। আপনি যদি সেই ডিসপ্লের, এক্সিবিশনের পজিটিভ স্পেকটেটর হন, তাহলে আপনাকে নিয়ে দলটি তিনজনের।
আরও পড়ুন- বাঙালির প্রেম ও যৌন জীবন কীভাবে বদলে দিল বিলাতিয়া চুমু?
পাবলিক ডিসপ্লে কি অশ্লীল? এই প্রশ্নের সোজা জবাব, পাবলিক ডিসপ্লে তখনই অশ্লীল যখন সেই ডিসপ্লে এক্সিবিটরের বৈভব আর স্পেকটেটরের অভাবকে প্রকট করে। যেমন আম্বানিদের বিয়ে, জয়ললিতার শাড়ি, ধারাভি বস্তিতে ল্যাম্বারগিনি চড়ে সোশ্যাল ওয়ার্ক করতে যাওয়া ইত্যাদি। স্বামীজি বক্তৃতা দিয়েছিলেন যে চিকাগো শহরে, যার আসল নাম শিকাগো আমরা পরে জেনেছি, সেই শহর খানিক অদ্ভুত। আধুনিকতম শহর, অথচ বেশ কিছু ক্ষেত্রে শহরটা তার প্রাচীন চরিত্র ধরে রেখেছে। বড়লোকি চাল, ইতালিয়ান মাফিয়া, ক্যাসিনো দেখতে পাওয়া যাবে। সাদা থ্রি-পিস শ্যুট পরে, চুরুট মুখে দিয়ে, সাদা ক্যাডিলাক থেকে অহরহ নামতে দেখা যাবে বিত্তবানদের, আর ডাউনটাউনে গেলে হোমলেস কালো মানুষরা রাস্তায় একটা ডাইমের (ডলারকে এক টাকা ধরলে, দশ পয়সা) জন্য চিল্লাচ্ছে। শিকাগোকে উইন্ডি সিটি বলা হয়, শীতে তাপমাত্রা থাকে মাইনাস পঁচিশ আর উইন্ড চিল হয় মাইনাস চল্লিশ। তার মধ্যে এই গৃহহীন মানুষরা সারারাত দাঁড়িয়ে থাকে, বড় বড় হোটেলের এক্সস্ট ভেন্টিলেটরের সামনে, একটু গরম হাওয়া পাওয়ার জন্য। দাঁড়ানোর জায়গা নিয়ে নিজেদের মধ্যে ক্যালাকেলি হয়। খুনখারাপিও হয়ে যায় মাঝেমধ্যেই। সেক্সও হয়। পুরো সেক্স না হয়ে খানিক মেকআউট হয় কখনও। আর কিছু না হয়ে লম্বা একটা চুমু হতে পারে, মুখের মধ্যে জিভ ঢুকিয়ে দিয়ে গভীর আশ্লেষী চুমু। ছেলে-মেয়েতে হতে পারে, ছেলেতে -ছেলেতে হতে পারে, মেয়েতে-মেয়েতে হতে পারে, ট্রান্সজেন্ডার হতে পারে। হোটেল থেকে উচ্ছিষ্ট খাবার ফেলে দেওয়া হলে, চুমুর বন্ধন থেকে নিজেদের ছাড়িয়ে নিয়ে সেই খাবার কুড়িয়ে এনে আবার চুমু রিজ্যুম করে নিতে হয়।
এখন এই উচ্ছিষ্ট ফেলে দেওয়ার নতুন নিয়ম হঁয়েছে ইউরোপ, আমেরিকার কিছু জায়গায়। এক্সপায়ারি ডেট পার হলে খাবার ফেলে দিতে হয়। সেই খাবার কুড়িয়ে নেওয়ার জন্য অভুক্ত মানুষ অপেক্ষা করে থাকে। নতুন নিয়মে এক্সপায়ারি ডেট পেরিয়ে যাওয়া খাবার খাওয়া দণ্ডনীয় অপরাধ। আসলে দেখা যাচ্ছিল, কোভিডের সময় আরও কিছু মানুষ এই ফেলে দেওয়া রুটি সংগ্রহ করছেন। যাঁরা আগে সুপারমার্কেট থেকে কিনতেন, এখন আর পেরে উঠছেন না, ফলে সুপারমার্কেটের বড় ব্যবসায়ীদের বিক্রি কম হচ্ছে। তাই তারা ফেলে দিতে পারেন, কিন্ত অভুক্ত মানুষ যেন সেটা কুড়িয়ে না নেয়, নিশ্চিত করতে হবে। সরকার নিশ্চিত করেছে। আইন করেছে। এই আইন অশ্লীল। আর এই আইনের সামনে দাঁড়িয়ে যাঁরা চুমু খায়, স্তনে হাত রাখে, মিউচুয়াল ফ্যাপিং শুরু করে তাঁরা বিদ্রোহী যোদ্ধা। তাঁরা সংস্কৃতির নামে যত ভড়ংকে লাথ মারে। উপেক্ষা করে মধ্যবিত্তের উপস্থিতিকে। উপেক্ষা করে মধ্যবিত্তের অস্বস্তিকেও। আর তাঁরা একা নয়। অন্তত দু'জন। চুমু তো শুরুয়াত।