ক্যানসারযোদ্ধাকে হারিয়ে পারবেন ভারতকে পদক এনে দিতে? ব্যাডমিন্টনে আশার নয়া নাম লক্ষ্য সেন
Paris Olympics 2024: এই প্রথম বার অলিম্পিকের মঞ্চে লক্ষ্য। বৃহস্পতিবার এইচ এস প্রণয়কে ২১-১২, ২১-৬-এ উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি। তার আগের ম্যাচেই হারিয়েছেন ইমল্যান্ড চ্যাম্পিয়ন জোনাটন ক্রিস্টিকে।
অলিম্পিকের ময়দানে তিনি নেমেছিলেন অ-বাছাই হিসেবে। তাতে কী? নিজের যোগ্যতায় তারপর জায়গা করে নিয়েছেন তরুণ এই মুখ। আপাতত গোটা দেশের কাছেই আশার আলো উত্তরাখণ্ড আলমোরার ছেলে লক্ষ্য সেন। শুক্রবার ভারতীয় প্রতিদ্বন্দ্বী এইচএস প্রণয়কে হারিয়ে ইতিমধ্যেই কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছে গিয়েছেন বছর বাইশের এই যুবক। সামনে আর মাত্র দুটো ম্যাচ। যেখানে জিততে পারলেই ভারতের ঝুলিতে আসতে চলেছে আরও একটি পদক।
এই প্রথম বার অলিম্পিকের মঞ্চে লক্ষ্য। বৃহস্পতিবার এইচ এস প্রণয়কে ২১-১২, ২১-৬-এ উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি। তার আগের ম্যাচেই হারিয়েছেন ইমল্যান্ড চ্যাম্পিয়ন জোনাটন ক্রিস্টিকে। আর সামান্যই পথ হাঁটা বাকি, তার পরেই সাফল্যের ভিক্ট্রি স্ট্যান্ডের সামনে দেখা যাবে ভারতের এই প্রতিভাকে।
আরও পড়ুন: এক ঘুষিতেই রক্তারক্তি! মহিলাদের অলিম্পিক বক্সিংয়ে ইমানে খেলিফ সত্যিই পুরুষ?
লক্ষ্যর বাবা ডি কে সেন নিজে একজন কোচ। ভাই চিরাগ সেনও একজন আন্তর্জাতিক ব্যাডমিন্টন খেলোয়ার। সেই পথে হেঁটেই ব্যাডমিন্টনে হাতেখড়ি লক্ষ্যর। প্রকাশ পাডুকোন ব্যাডমিন্টন অ্যাকাডেমিতেই প্রশিক্ষণ শুরু লক্ষ্যের। ২০১৬ সালে জুনিয়র ব্যাডমিন্টন সার্কিটে ভালো ফলাফল করেন তিনি। বিডব্লউএফ বিশ্ব জুনিয়র র্যাঙ্কিং অনুযায়ী ফেব্রুয়ারি ২০১৭ সালে প্রথম স্থানেও চলে আসেন লক্ষ্য। ২০১৬ সালে ইন্ডিয়া আন্তর্জাতিক সিরিজ টুর্নামেন্টে পুরুষদের একক বিভাগে জয় এবং তার পর ২০১৮ এশিয়ান জুনিয়র চ্যাম্পিয়নশিপেও সেরার শিরোপা উঠেছিল লক্ষ্যের মুকুটেই। ২০২২ ইন্ডিয়া ওপেনের ফাইনালেও হারিয়ে দেন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন লোহ কিন ইউকে। সেখান থেকে প্যারিস অলিম্পিকে সুযোগ পাওয়া হঠাৎ করেই। অবাছাই হিসেবেই ময়দানে নামেন লক্ষ্য এবং ক্রমে হয়ে উঠেছেন ব্যাডমিন্টনে আশার আলো।
শেষ আটে চিনের তাইপের চৌ তিয়েনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামতে চলেছেন লক্ষ্য। বছর চৌত্রিশের চৌয়ের সম্পর্কে যা বলা যায়, তা-ই কম। শুধু ব্যাডমিন্টন কোর্টের নয়, ব্যক্তিগত জীবনেও একজন যোদ্ধা এই যুবক। চৌ-এর শরীরটায় থাবা বসিয়েছিল ক্যানসার। যে রোগ মানুষের শরীরকে যে শুধু বিধ্বস্ত করে তা-ই নয়, মনটাকেও বিপর্যস্ত করে ফেলে। কোলন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছিলেন ৩৪ বছরের এই খেলোয়ার। সেই অসুস্থতার প্রাথমিক পর্বের সঙ্গে লড়ে জিতে তিনি সটান চলে এসেছেন আরেক যুদ্ধক্ষেত্রে, যার নাম প্যারিস অলিম্পিক। সেখানেই ভারতের আশার আলো লক্ষ্য মুখোমুখি হতে চলেছেন সেই যোদ্ধার। ফলে ভারতীয় দর্শকদের যেমন মন পড়ে থাকবে লক্ষ্যের দিকে, চৌ-এর খেলার দিকেও কিন্তু নজর থাকবে গোটা বিশ্বের। ফলে শুক্রবার ম্যাচটি যে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে অলিম্পিকের মঞ্চে, তা অস্বীকার করার জায়গা নেই।
আরও পড়ুন: ‘মঞ্চে আসলে তিন জন!’ অন্তঃসত্ত্বা নাদার তরোয়ালের লড়াইয়ে মুগ্ধ অলিম্পিকের আসর
অলিম্পিকের মঞ্চে এক অদম্য অনুপ্রেরণা চৌ। তবে তা শুধু তাঁর অসম্ভব মনের জোরের জন্যই নয়। তার খেলার স্কিলও কিন্তু চমকে দেওয়ার মতোই। লক্ষ্যের সঙ্গে চার বারের সাক্ষাতে তিন বারই জিতেছেন চৌ। তবে এটাও মাথায় রাখতে হবে যে, প্যারিসে অনেক আগ্রাসী ব্যাডমিন্টন খেলতে দেখা যাচ্ছে লক্ষ্যকে। প্রাথমিক পর্যায়ে জোনাটন ক্রিস্টিকে হারিয়েই আত্মবিশ্বাস বেড়েছিল তাঁর। তার পর প্রণয়। লক্ষ্যের বিরুদ্ধে খেলতে নেমে যাঁকে ক্লান্ত হয়ে পড়তে দেখা যায়। জায়ান্ট কিলার হিসেবে ইতিমধ্যেই ব্যাডমিন্টন দুনিয়ায় পরিচিত হয়ে গিয়েছেন লক্ষ্য। লক্ষ্যের কাছে হেরে গেলেও তাঁকে নিয়েই আশাবাদী দেখিয়েছে প্রণয়কে। এবার সেই একই ভাবে দক্ষ চৌকে হারিয়ে আরও একটা মেডেল ভারতের ঝুলিতে পুরতে পারেন কিনা লক্ষ্য, সেদিকেই তাকিয়ে গোটা দেশ।