মাইক্রোসফট পরিষেবা ব্যবহার করে গাজা ধ্বংস! প্রতিবাদে যা করলেন দুই প্রযুক্তিবিদ

Microsoft Israel Technology Deal: ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত ইজরায়েল প্রতিরক্ষা মন্ত্রক মাইক্রোসফটের কাছ থেকে প্রায় ১ কোটি ডলারের প্রযুক্তিগত সহায়তা ও পরামর্শ পরিষেবা নিয়েছে।

প্যালেস্টাইনে ইজরায়েলের নরসংহারে মাইক্রোসফটের ভূমিকার প্রতিবাদ জানিয়ে সংস্থার শীর্ষকর্তাদের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন প্রযুক্তিবিদ দুই মহিলা।মাইক্রোসফট ও ইজরায়েল সরকারের মধ্যে সামরিক ও বেসামরিক ক্ষেত্রে দীর্ঘদিনের প্রযুক্তিগত সহযোগিতা বিভিন্ন প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, বিশেষ করে গাজায় সাম্প্রতিক সামরিক অভিযানের প্রেক্ষাপটে। গোপন নথি ও অনুসন্ধান প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গাজা যুদ্ধের সময় ইজরায়েলি সামরিক বাহিনী ব্যাপকভাবে নির্ভর করেছে মাইক্রোসফটের ক্লাউড প্ল্যাটফর্ম আজুর এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) পরিষেবার উপর। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত ইজরায়েল প্রতিরক্ষা মন্ত্রক মাইক্রোসফটের কাছ থেকে প্রায় ১ কোটি ডলারের প্রযুক্তিগত সহায়তা ও পরামর্শ পরিষেবা নিয়েছে। বিশেষ করে, ইজরায়েলের গোয়েন্দা ইউনিট— যেমন ইউনিট ৮২০০, ইউনিট ৮১, ইউনিট ৯৯০০ ও বিমানবাহিনীর অফেক ইউনিট— মাইক্রোসফটের আজুর ক্লাউড অবকাঠামো, কমিউনিকেশন সিস্টেম এবং তথ্য বিশ্লেষণ টুল ব্যবহার করে। গার্ডিয়ানের অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, মাইক্রোসফটের অংশীদার ওপেনএআই-এর জিপিটি-৪ মডেলও ইজরায়েলি সেনাবাহিনীর লক্ষ্য নির্ধারণের কাজে ব্যবহৃত হয়েছে। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ওপেনএআই তাদের নীতিমালা পরিবর্তন করে সামরিক ক্লায়েন্টদের পরিষেবা দেওয়ার অনুমতি দেয়, যার ফলে এই ধরনের ব্যবহার সম্ভব হয়েছে। এছাড়াও, মাইক্রোসফট ইজরায়েলের বেসামরিক খাতে যেমন সংসদীয় সম্প্রচার ও রেলওয়ে পরিষেবাতেও প্রযুক্তিগত সহায়তা দিচ্ছে। ইজরায়েলি সংসদ কনেসেট আজুর মিডিয়া সার্ভিস ব্যবহার করে তাদের বৈঠক সরাসরি সম্প্রচার করছে। ইজরায়েল রেলওয়ে কোম্পানি তাদের যাত্রী পরিষেবা আজুরে স্থানান্তর করে উন্নয়ন ঘটিয়েছে ও খরচ হ্রাস করেছে। এসব চুক্তি ইজরায়েল সরকারের মাইক্রোসফটের প্রযুক্তি নির্ভরতা স্পষ্ট করে।

এই সহযোগিতার বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে গত ৭ এপ্রিল মাইক্রোসফটের ৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে কোম্পানির দুই কর্মী প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করেন। প্রথমে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়র বানিয়া আগরওয়াল সরাসরি মঞ্চে উঠে বলেন, “আপনাদের লজ্জা হওয়া উচিত। গাজার ৫০,০০০ প্যালেস্টিনীয় মাইক্রোসফটের প্রযুক্তির মাধ্যমে নিহত হয়েছে। কীভাবে আপনারা তাদের রক্তের উপর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করতে পারেন?” মঞ্চে আসীন মাইক্রোসফটের শীর্ষ কর্মকর্তা সত্য নাদেলা, বিল গেটস, স্টিভ বলমারের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে এই বক্তব্য দেন এবং সঙ্গে সঙ্গেই নিজের পদত্যাগের ঘোষণা করেন বানিয়া। ইমেইলের মাধ্যমে সহকর্মীদের তিনি জানান, ইজরায়েলের সঙ্গে মাইক্রোসফটের ১৩৩ মিলিয়ন ডলারের চুক্তিই ছিল তাঁর সিদ্ধান্তের মূল কারণ।এরপর মঞ্চে উঠে আরেক কর্মী ইবতেহাল আবউসসাদ মাইক্রোসফটের এআই সিইও মুস্তাফা সুলেমানকে 'যুদ্ধ মুনাফাখোর' বলে সম্বোধন করে বলেন, “আপনি যুদ্ধ থেকে মুনাফা অর্জন করছে। গণহত্যার জন্য এআই ব্যবহার বন্ধ করুন।” এই মন্তব্যের পরপরই তাঁকে অনুষ্ঠানস্থল থেকে বের করে দেওয়া হয়। জানা যায়, প্রতিবাদের পর তিনি ও আগরওয়াল— দু'জনেই তাঁদের অফিশিয়াল অ্যাক্সেস হারিয়েছেন। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে আগেও এই ধরনের অভিযোগ উঠেছিল। ২০২৪ সালের অক্টোবরে মাইক্রোসফটের দুই কর্মী আবদো মোহামেদ ও হোসাম নাসর গাজায় নিহতদের স্মরণে একটি অননুমোদিত কর্মসূচি আয়োজনের জন্য বরখাস্ত হন। তাঁরা “No Azure for Apartheid” নামক কর্মী-গ্রুপের সদস্য ছিলেন, যাঁরা মাইক্রোসফটের ইজরায়েল সরকারের সঙ্গে প্রযুক্তি চুক্তির বিরোধিতা করে আসছিলেন। এই প্রতিবাদ ও তার পেছনের বাস্তবতা মাইক্রোসফটের প্রযুক্তিগত অবকাঠামো কতটা সামরিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ব্যবহৃত হচ্ছে, তা নতুন করে সামনে নিয়ে এসেছে।বানিয়া আগরওয়াল ও ইবতেহাল আবউসসাদ বিদ্রোহ ঘোষণার পাশাপাশি দু'টি পৃথক ইমেইল বার্তায় মাইক্রোসফটের অন্যান্য কর্মচারীদেরও প্রতিবাদে সামিল হওয়ার আবেদন জানিয়েছেন। দু'টি বার্তার অনুবাদ এখানে দেওয়া হলো: 

প্রাপক:  মাইক্রোসফট কোম্পানির সমস্ত কর্মী

সিসি: সত্য নাদেলা, অ্যামি কোলম্যান, অ্যামি হুড, ব্র্যাড স্মিথ, ক্যারোলিনা ডাইবেক হাপে, চার্লি বেল, জেসন জ্যান্ডার, জে পারিখ, জাডসন অলথফ, ক্যাথলিন হোগান, কেভিন স্কট, মুস্তাফা সুলেইমান, ফিল স্পেন্সার, রাজেশ ঝা, রায়ান রসলানস্কি, তাকেশি নমোতো

সবার উদ্দেশ্যে,

আমার নাম বানিয়া এবং মাইক্রোসফটে ১.৫ বছর সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করার পর, আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি কোম্পানি ছাড়ার। আমার শেষ কর্মদিবস আগামী শুক্রবার, ১১ এপ্রিল। আজ মাইক্রোসফটের ৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে সত্য নাদেলার বক্তব্যের সময় আমি উঠে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছি – হয়তো আপনারা কেউ কেউ তা দেখে থাকবেন। আমি কেন কোম্পানি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং কেন আজ কথা বলেছি – সেই বিষয়ে জানাতে চাই।

আমরা এক গণহত্যার প্রত্যক্ষদর্শী

এক বছরের আগে যখন আমি মাইক্রোসফটে যোগ দিই, তখন থেকেই আমি ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইজরায়েলের চলমান গণহত্যা প্রত্যক্ষ করছি – যার সূচনা হয়েছিল ১৯৪৮ সালে। নির্বিচারে বোমাবর্ষণ, হাসপাতাল ও বিদ্যালয় লক্ষ্য করে হামলা এবং একটি বর্ণবাদী রাষ্ট্রের চলমান উপস্থিতি – এই সমস্ত মানবাধিকার লঙ্ঘন আন্তর্জাতিকভাবে জাতিসংঘ, ICC, ICJ এবং অসংখ্য মানবাধিকার সংস্থা দ্বারা নিন্দিত হয়েছে। এই মুহূর্তে যখন আমি এই বার্তাটি লিখছি, ইজরায়েল যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করে গাজায় পূর্ণ মাত্রায় গণহত্যা আবার শুরু করেছে। ক’দিন আগেই জানা গেছে, ইজরায়েল গাজায় ১৫ জন প্যারামেডিক ও উদ্ধারকর্মীকে একজন একজন করে হত্যা করে বালির নিচে পুঁতে রেখেছে — এটি আরেকটি জঘন্য যুদ্ধাপরাধ। আর এই নৃশংসতা চালাতে আমাদের পরিশ্রম ব্যবহৃত হচ্ছে। আমি অন্তর থেকে এমন একটি প্রতিষ্ঠানের অংশ হতে পারি না, যারা এই অন্যায়ে অংশগ্রহণ করছে।

আমরা সকলে জড়িত

অনেকের মতো আমিও মাইক্রোসফটে যোগ দিয়েছিলাম এই বিশ্বাসে যে, প্রতিষ্ঠানটি “পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ ও প্রতিষ্ঠানকে আরও বেশি কিছু অর্জনের ক্ষমতা প্রদান” করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমি বিশ্বাস করতাম, মাইক্রোসফট মানবাধিকারকে সম্মান করে এবং উন্নয়নের প্রচারে নিয়োজিত। কিন্তু গত ১.৫ বছরে আমি উপলব্ধি করেছি, মাইক্রোসফট দিনদিন সামরিক-শিল্প কমপ্লেক্সের অংশ হয়ে উঠছে।

এপি-র সাম্প্রতিক রিপোর্ট দেখিয়েছে, কীভাবে মাইক্রোসফট একটি ১৩৩ মিলিয়ন ডলারের চুক্তিতে ইজরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অংশীদার হয়েছে — যেখানে Microsoft Azure ও AI ব্যবহার করা হচ্ছে ফিলিস্তিনিদের উপর নজরদারি, হামলা ও গণহত্যার সহায়তায়। ফাঁস হওয়া দলিলগুলিও দেখিয়েছে, মাইক্রোসফটের AI ইজরায়েলি সেনাবাহিনীর সবচেয়ে সংবেদনশীল ও গোপন প্রকল্পগুলো — যেমন 'টার্গেট ব্যাংক' ও 'ফিলিস্তিনি নাগরিক তথ্যভাণ্ডার' — পরিচালনায় ব্যবহৃত হচ্ছে। অর্থাৎ, Microsoft Azure ও AI এখন ইজরায়েলি সেনাবাহিনীকে আরও বিধ্বংসী করে তুলছে। এটি অস্বীকার করার উপায় নেই যে, Microsoft আজ এক ডিজিটাল অস্ত্র প্রস্তুতকারক — যারা নজরদারি, বর্ণবাদ ও গণহত্যাকে শক্তিশালী করছে। এই কোম্পানিতে কাজ করে আমরা সকলেই পরোক্ষভাবে এই অপরাধে অংশ নিচ্ছি। এমনকী যারা Azure বা AI সরাসরি কাজ করেন না, তাঁরাও এই ব্যবস্থার অংশ। এই কারণেই আমি চাকরি ছাড়ার আগে Microsoft-কে এই গাথা থেকে আলাদা করার দাবিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পিটিশনে সই করেছি। আপনাদেরকেও সেই আহ্বান জানাই।

আমাদের করণীয়

সময় যত এগিয়ে চলেছে, ততই আমার পক্ষে এই কোম্পানিতে সময়, শ্রম ও ভালোবাসা দিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। Microsoft ছেড়ে যাওয়া আমার কাছে এখন স্পষ্ট ও নৈতিক সিদ্ধান্ত। এখন আমার শেষ কয়েকটি দিন আমি যেভাবে পারি প্রতিবাদ জানাব — তা সত্যর বক্তব্যে বাধা দিয়ে হোক বা আজকের এই ইমেইলের মাধ্যমে।

আমি জানি Microsoft ছেড়ে যাওয়া সবার পক্ষে সম্ভব নয় কিন্তু যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের কাছে অনুরোধ, আপনার অবস্থান ও সুযোগ ব্যবহার করে Microsoft-কে তার নিজস্ব নীতিমালার প্রতি দায়বদ্ধ রাখুন।

করণীয়:

  • No Azure for Apartheid পিটিশনে সই করুন: “We will not write code that kills”

  • মাইক্রোসফট কর্মীদের এই আন্দোলনে যুক্ত হন।

  • এই ইমেইলের থ্রেডে আপনার অবস্থান জানান – শিশু ও নিরীহ নাগরিকদের লক্ষ্য করে কোড লেখার ব্যাপারে আপনার অনুশোচনা থাকলে, নেতৃত্বকে (সিসি-তে যারা আছেন) জানান চুক্তিগুলি বাতিলের আহ্বান।

  • সহকর্মীদের সঙ্গে উপরের বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা শুরু করুন — অনেকেই হয়তো এসব জানেনই না!

  • যদি এই বার্তার কোনও অংশ আপনার মনে সাড়া দেয়, তাহলে এটি অন্যদের ফরোয়ার্ড করুন।

  • মনে রাখবেন, মাইক্রোসফটের মানবাধিকার নীতিমালায় বলা আছে, মানবাধিকার সংক্রান্ত অভিযোগ জানালে কোনও ধরনের প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না: Human Rights Statement | Microsoft CSR

বিদায়

মুক্ত হোক প্যালেস্টাইন,

বানিয়া

 

 
 
 
 
 
View this post on Instagram
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 

A post shared by The Verge (@verge)

আরও পড়ুন- আরও নির্মম নেতানিয়াহু! গাজাতে যে উপায়ে আক্রমণের কৌশল ভাবছে ইজরায়েল

ইবতেহাল আবউসসাদ-এর ইমেইল বার্তা 

হ্যালো সবাইকে,

আপনারা হয়তো এতক্ষণে সরাসরি অনুষ্ঠানস্থলে বা লাইভস্ট্রিমে দেখে ফেলেছেন যে আমি মাইক্রোসফট AI-এর সিইও মুস্তাফা সুলেইমানের বক্তব্যে বাধা দিয়েছি বহু প্রতীক্ষিত ৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর উদযাপন অনুষ্ঠানে। কেন করেছি, সেটা এখানে ব্যাখ্যা করছি।

আমার নাম ইবতেহাল এবং গত ৩ বছর ৫ মাস ধরে আমি মাইক্রোসফটের AI প্ল্যাটফর্ম অর্গে একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করছি। আমি আজ কথা বলেছি, কারণ যখন জানতে পারলাম আমার অর্গ আমার নিজস্ব জাতির—প্যালিস্টিনিয়দের —গণহত্যা চালাতে সহায়তা করছে, তখন আর নৈতিকভাবে চুপ থাকা সম্ভব ছিল না। বিশেষ করে যখন দেখেছি, মাইক্রোসফট কীভাবে আমার সহকর্মীদের এই বিষয়ে কিছু বলতে বাধা দিয়েছে, দমন করেছে। গত দেড় বছরে আমাদের আরব, ফিলিস্তিনি ও মুসলিম কমিউনিটিকে চুপ করিয়ে দেওয়া হয়েছে, ভয় দেখানো হয়েছে, হয়রানি করা হয়েছে, এমনকী ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস করা হয়েছে— সবটাই মাইক্রোসফটের নীরব মদতে। যারা কথা বলতে চেয়েছে, তাদের কেউ কেউ কাজ হারিয়েছেন, কেউ শুধুই একটি ভিজিল ধরেছিল। আমাদের কণ্ঠ শোনানোর আর কোনও রাস্তা ছিল না।

আমরা গণহত্যা প্রত্যক্ষ করছি

গত দেড় বছর ধরে আমি ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইজরায়েলের চলমান গণহত্যা নিজের চোখে দেখছি। নির্বিচারে বোমাবর্ষণ, হাসপাতাল ও স্কুলে হামলা এবং একটি বর্ণবাদী রাষ্ট্র ব্যবস্থা— যা জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (ICC), আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (ICJ), ও অসংখ্য মানবাধিকার সংগঠন দ্বারা নিন্দিত হয়েছে। ছাই ও রক্তে ঢাকা শিশুদের ছবি, শোকাহত পিতামাতার আর্তনাদ, ধ্বংস হওয়া পরিবার ও সমাজ— এসব চিত্র আমাকে ভেতর থেকে ভেঙে দিয়েছে।

এই লেখার মুহূর্তে, ইজরায়েল গাজায় পূর্ণমাত্রার গণহত্যা আবার শুরু করেছে, যাতে ইতিমধ্যেই আনুমানিক ৩ লক্ষাধিক গাজাবাসী নিহত হয়েছেন। ক'দিন আগেই প্রকাশ পায় যে ইজরায়েল গাজায় ১৫ জন প্যারামেডিক ও উদ্ধারকর্মীকে “একজন একজন করে” হত্যা করে বালির নিচে পুঁতে ফেলেছে— আরও একটি ভয়াবহ যুদ্ধাপরাধ। এই সবই চলছে আমাদের তথাকথিত “দায়িত্বশীল AI” ব্যবহারের সাহায্যে। জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক আদালত বলছে— এটি একটি গণহত্যা। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত ইজরায়েলি নেতাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি করেছে।

আমরা জড়িত—আমরা সহযোগী

AI প্ল্যাটফর্মে যোগ দেওয়ার সময় আমি ভেবেছিলাম মানবকল্যাণে AI প্রযুক্তির ব্যবহার করব— অ্যাক্সেসিবিলিটি, অনুবাদ, মানুষ ও প্রতিষ্ঠানকে ক্ষমতায়ন ইত্যাদি কাজ কিন্তু আমি জানতাম না যে মাইক্রোসফট আমার লেখা কোড ইজরায়েলি সেনাবাহিনী ও সরকারের কাছে বিক্রি করবে, যাতে তারা সাংবাদিক, চিকিৎসক, ত্রাণকর্মী ও পুরো পরিবারগুলোকে গুপ্তচরবৃত্তির মাধ্যমে শনাক্ত করে হত্যা করতে পারে। যদি আগে জানতাম যে আমার ট্রান্সক্রিপশন ফোন আড়িপাতা ও লক্ষ্যবস্তু বানাতে ব্যবহৃত হবে, তাহলে আমি কখনই এই অর্গে যোগ দিতাম না।

এপি-এর অনুসন্ধানে উঠে এসেছে:

  • “মাইক্রোসফট ও ইজরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের মধ্যে ১৩৩ মিলিয়নের চুক্তি।”

  • “ইসরায়েলি সেনাবাহিনী AI ব্যবহারে মার্চে ২০০ গুণ বৃদ্ধি ঘটায় অক্টোবর ৭-এর আগের সপ্তাহের তুলনায়। জুলাই ২০২৪ পর্যন্ত, মাইক্রোসফট সার্ভারে সংরক্ষিত তথ্য বেড়ে দাঁড়ায় ১৩.৬ পেটাবাইট।”

  • “এই তথ্য, ফোনকল, মেসেজ ইত্যাদি AI দিয়ে অনুবাদ ও বিশ্লেষণ করে ইজরায়েল নিজস্ব ‘টার্গেট ব্যাংক’ ও জনসংখ্যা রেজিস্ট্রির সঙ্গে মেলায়।”

মাইক্রোসফট AI ইজরায়েলি সেনাবাহিনীর সবচেয়ে গোপন, শ্রেণিবদ্ধ প্রকল্পগুলোকেও চালায়। মাইক্রোসফট ক্লাউড ও AI গাজার ওপর আরও প্রাণঘাতী হামলা সম্ভব করেছে।

বিজনেস চুক্তির মাধ্যমে মাইক্রোসফট ইজরায়েলি সরকার ও সেনাবাহিনীকে সফটওয়্যার, ক্লাউড সার্ভিস এবং কনসাল্টিং পরিষেবা দিয়ে কোটি কোটি টাকা আয় করেছে। যুদ্ধাপরাধী নেতানিয়াহু নিজেই মাইক্রোসফটের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কথা বলেছেন।

বয়কট, বিলগ্নিকরণ, নিষেধাজ্ঞা (BDS) আন্দোলন এখন মাইক্রোসফটকে বর্জনের প্রধান লক্ষ্য হিসেবে ঘোষণা করেছে

আপনার রাজনৈতিক মতামত যাই হোক, প্রশ্ন হলো—এটাই কি আমাদের উত্তরাধিকার হতে চলেছে? এই প্রযুক্তির কথা আপনি ভবিষ্যতে আপনার সন্তানকে বলতে পারবেন? আমরা কি ঐতিহাসিক ভুলের পাশে থাকতে চাই?

আপনি সরাসরি AI বা ক্লাউডে কাজ না করলেও, আপনি এমন এক কোম্পানিতে কাজ করছেন যেটি দখলদার বাহিনীকে অস্ত্র সরবরাহ করছে এবং সেই হিসেবে, আপনার বেতনও— যদিও আংশিকভাবে— গণহত্যার টাকায় আসছে।

আপনি যদি কিছু না বলেন, তাও আপনি জড়িত। এখন আমাদের কাজ, এই অপরাধের বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থান নেওয়া।

এই কারণেই আমি আজ প্রতিবাদ করেছি এবং এই গুরুত্বপূর্ণ পিটিশনে সই করেছি, যাতে মাইক্রোসফট গণহত্যার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে। আপনাদেরও একই আহ্বান জানাই।

করণীয়: নীরবতা মানেই সহমত, প্রতিবাদই প্রতিরোধ

একজন কর্মী হিসেবে, আমাদের দায়িত্ব ন্যায়ের পক্ষে আওয়াজ তোলা। আমাদের কোম্পানির কাছে দাবি জানাতে হবে— ইজরায়েলি সেনাবাহিনীর কাছে প্রযুক্তি বিক্রি বন্ধ করো।

আপনি যদি চান আপনার কাজ যেন ন্যায়ের পথে ব্যবহৃত হয়, তাহলে এখনই পদক্ষেপ করুন:

  • No Azure for Apartheid পিটিশনে সই করুন: “আমরা হত্যাকারী কোড লিখব না।” এবং এই প্রচারে যোগ দিন।

  • এই থ্রেডে আপনার অসন্তোষ জানান: আপনি যদি নিজেকে প্রতারিত মনে করেন— যুদ্ধাস্ত্র বানাতে ব্যবহৃত হচ্ছেন— তাহলে নেতৃত্বকে (CC-তে যারা আছেন) বলুন এই চুক্তি বাতিল করতে।

  • নীরব থাকবেন না: প্রতিটি সুযোগে SLT-কে বলুন এই চুক্তিগুলো বাতিল করতে।

  • সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করুন: অনেকে জানেই না এই বিষয়গুলো!

  • মাইক্রোসফটের হিউম্যান রাইটস স্টেটমেন্ট অনুযায়ী, মানবাধিকার বিষয়ক উদ্বেগ তুললে তার জন্য প্রতিশোধ নেওয়া আইনত নিষিদ্ধ: Microsoft CSR | Human Rights Statement

মাইক্রোসফট এর আগেও মানবাধিকার রক্ষায় সাহসী পদক্ষেপ করেছে— দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদের বিরুদ্ধে বিনিয়োগ প্রত্যাহার, AnyVision-এর (ইজরায়েলি ফেসিয়াল রিকগনিশন স্টার্টআপ) সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করা— সবকিছুই কর্মী ও কমিউনিটির আন্দোলনের ফল।

আমার আশা, আমাদের সম্মিলিত কণ্ঠ Microsoft-এর AI নেতৃত্বকে ন্যায়ের পথে টানবে এবং কলঙ্কমুক্ত ভবিষ্যতের দিকে এগোতে সাহায্য করবে। ২১ শতকের বোমা ও গুলিতে Microsoft Cloud এবং AI পরিণত না হোক— আমাদের পদক্ষেপেই তা বন্ধ হতে পারে।

ধন্যবাদান্তে,

একজন উদ্বিগ্ন মাইক্রোসফট কর্মী

ইবতেহাল আবউসসাদ

More Articles