বাড়িতে পোষেন ডাইনোসর! জ্যোতির্ময় দত্তকে নিয়ে এমনই বিশ্বাস অনেকের
Jyotirmoy Dutta: জ্যোতির্ময় দত্তকে নিয়ে গল্পের শেষ নেই। তাঁর সঙ্গে আলাপ একটু দেরিতে। '৮৮/'৮৯ সালে। ততদিনে তিনি কিংবদন্তি।
রাস্তাঘাটের বিবরণ দিয়েই আমি এই ভ্রমণ বৃত্তান্ত শুরু কচ্ছি। এই বর্ণনা পাঠককে ইস্পাহান থেকে দিল্লী ও জাহানাবাদ পর্যন্ত স্থানের পরিচয় দেবে। সেখানে বর্ত্তমানে মহিমান্বিত মুঘল বংশ বাস কচ্ছেন।
সুধা বসুর অনুবাদে তাভার্নিয়ে ভারতভ্রমণ শুরু করেছিলেন এইভাবে।
বহু বছর আগে, ১৯৭৭-এ, এক রবিবার, আমি নাকতলায় যাই। সেটাই প্রথমবার। সারাটা রাস্তা মেট্রোরেলের খানাখন্দ পেরিয়ে নেতাজি সুভাষ রোডে পৌঁছে স্বস্তি পাই খানিকটা। ২০২ রাসবিহারী ছেড়ে বু ব-র পরিবার নাকতলায় গেলেও যতবার ওই রাস্তায় গেছি, বাসের জানলা থেকে খোঁজার চেষ্টা করেছি অভীষ্ট নম্বরটিকে— কবিতাভবন না থাক, বাড়িটা তো আছে!
নাকতলায় বসু-পরিবারের কারও সঙ্গ পেতে যাওয়া নয়। সঙ্গ পাইওনি সেদিন। ওই বাড়ির একটা অংশে থাকতেন দেবাশিসদা, মানে দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়— দেশোয়ালি দাদা, সিউড়ির সন্তান। নাকতলায় গিয়ে নাকের বদলে নরুণ নয়, ফিরে পেয়েছিলাম সিউড়ির আড্ডা। আর, আচমকা পেয়ে যাই শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়কে। সে-গল্প অন্য।
তারও বছরদুয়েক আগে, তারুণ্যের উৎসাহে, ‘নন্দনকাননে হৈ চৈ’-নামে স্বর্গে এক কাল্পনিক কবিসভার আখ্যান লিখে বু ব-র পরিবারের চক্ষুশূল হই। বু ব তখন প্রয়াত। তবু সাহিত্যজগতের সেরা খ্যাতিমান পরিবার। মুঘল বংশই বলা যায়! তাঁর দুই কন্যা এবং প্রতিভা বসু আছেন। একমাত্র পুত্র শুদ্ধশীল বসুও তখন জীবিত। এমন কথাও কানে আসে, আমাকে নাকি ভীষণভাবে খোঁজা হচ্ছে!
এসবের বেশ কিছু বছর পর আলাপ তাঁর সঙ্গে। এবং সবকিছুই ঝকমকে। আনকোরা। যেন জীবনে প্রথমবার দু'জনে দু'জনকে জানলাম।
একরাম
সেলাম!
রাত্রে ফোন করবো;
ছেলের শরীর কেমন? ভালো তো?
শনিবারজ্যোতিদা
২০শে ফেব্রুয়ারি
সালের উল্লেখ নেই। তবু নিশ্চিত— চিরকুটটি উননব্বই সালে লেখা। এরকম গোটাচারেক চিরকুট এখনও রয়ে গেছে। সবই 'আজকাল'-এর অফিসে রেখে যাওয়া। কতজনের কত-কত চিঠিতে ফাইল ফেঁপে রয়েছে। আর আমি কেন ব্যস্ত এক চিরকুট-লেখককে নিয়ে!
তিনি-যে জ্যোতির্ময় দত্ত!
বাড়িতে হিলহিলে গ্রে-হাউন্ড পুষে মেজাজে জার্মান-জার্মান ভাব আনার মতো বাঙালি তিনি নন। আমার বিশ্বাস এবং অনেকেরই— জ্যোতির্ময় দত্তর বাড়িতে পোষ্য বলতে যদি কিছু থাকে, সেটা অবশ্যই অতিকায় ডাইনোসরের শেষতম স্পিসিস; যে-প্রাণীটি একবার পাক খেলে নতুন কাজের প্রেরণা তিনি পান।
তিনি কবি, নাট্যকার, সম্পাদক, প্রাবন্ধিক। তিনি সাংবাদিক, অভিযাত্রী, বিদ্রোহী— আরও কত কিছু! 'চৌখস' শব্দটা একসময় ক্রিকেট-লিখিয়েরা ব্যবহার করতেন অলরাউন্ডার অর্থে। চলেনি। জ্যোতির্ময় দত্ত-যে তার চেয়ে বেশি!
এসো গোলাপের গালচে বিছোই
ভিসুভিয়াসের গাত্রে
আকাশের তলে পাশাপাশি শুয়ে রই
চন্দ্রবিহীন উল্কাপাতের রাত্রে
তাঁরই কবিতা— ‘বনভোজনের আমন্ত্রণ’। প্রথমাংশ। অনেকটা এমনই এক দিন আমরা কাটিয়েছিলাম আহম্মদপুরে, তাঁর মায়ের বাড়ি বসুন্ধরার জঙ্গলে। সে-গল্প পরে।
জ্যোতির্ময় দত্তকে নিয়ে গল্পের শেষ নেই। তাঁর সঙ্গে আলাপ একটু দেরিতে। '৮৮/'৮৯ সালে। ততদিনে তিনি কিংবদন্তি। বড় বড় কাজগুলো সেরে ফেলেছেন প্রায়। কলকাতা পত্রিকা বিখ্যাত হয়ে গেছে। বাংলাদেশ-যুদ্ধে জয়লাভের পর ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেওয়া এবং জরুরি অবস্থার বিরোধিতা করে জেলে যাওয়ার পর্বও শেষ।
জেলে সঙ্গী ছিলেন গৌরকিশোর ঘোষ আর শম্ভু রক্ষিত।
রাজনীতিবিদরা রাজনৈতিক রাজধানীতে বাস করে
রাজনীতিবিদরা এক বিভবশালী বিবুধের দ্বারে বসে
প্রেরণাপূর্ণ নরক সৃষ্টি করে
রাজনীতিবিদরা দেশপ্রেমসমৃদ্ধ গ্রাম ও শহরের মানুষদের শেখায়
‘নিতান্তই দলের একজন লোক’— তাদেরই দুর্দশার হেতু
ওই সময়ের লেখা। শম্ভু রক্ষিতের। কবিতার নাম— ‘রাজনীতিবিদরা’।
তার পরই শ্রীলঙ্কা অভিযানের বর্ণিল অধ্যায়। ভরসা বলতে কুড়িয়ে-পাওয়া একটা ডিঙি নৌকো। সারিয়ে-টারিয়ে সেই নৌকোরই গালভরা নাম— মণিমেখলা! সঙ্গী বলতে আজিজুর রহমান (পরে আমার সহকর্মী এবং এই অভিযানের বিবরণ লিপিবদ্ধকারী) আর মায়া সিদ্ধান্ত-নামের দুই আনাড়ি। বিশাখাপত্তনমে মণিমেখলা ঝড়ে বিধ্বস্ত হলে অভিযান বাতিল ঘোষণা করা হয় এবং নৌকো সারিয়ে অভিযাত্রীরা ফিরে এলে কলকাতায় দেওয়া হয় পরাজিত বীরের সংবর্ধনা।
সত্যি কি না, কে বলবে! তবে জনশ্রুতি এরকম: বু ব-র ‘রাত ভরে বৃষ্টি’ যখন অশ্লীলতার অভিযোগে আদালতে, সাক্ষী জ্যোতিদাকে ‘কী করা হয়’ জানতে চাইলে কমলাকান্তীয় মেজাজে ‘সকালে ঘুম থেকে উঠে ব্রাশ করি...।‘ এইভাবে প্রাতরাশ পর্যন্ত যেতে চাইলে সরকারি আইনজীবী তড়িঘড়ি জানতে চান— ‘দেশে লেখেন?’ উত্তর ছিল— ‘বিদেশেও লিখি।'
বাবা ডাকাবুকো ভোলানাথ দত্ত। জীবনের শেষ চাকরি আহম্মদপুর চিনিকলের কর্তাব্যক্তি। সেই চিনিকলে পরিত্যক্ত এক কুয়ো সংস্কারের জন্য কেউ নামতে না-চাইলে নিজেই নামেন। এবং বহু দিনের সঞ্চিত বিষবাষ্পে মৃত্যু। মা ঊষারানী দত্ত দশ সন্তানের জননী। জ্যোতিদা বলেন— দুনিয়ার সব মহাদেশে ওঁরা ছড়িয়ে।
সেই ঊষা দেবীর প্রয়াণে নক্ষত্রখচিত স্মরণ-সমাবেশ। আহম্মদপুরের অদূরে, তাঁরই বনবাড়ি ‘বসুন্ধরা’য়। কী করে যেন আমিও সেখানে ঢুকে গেছি। ৬-৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৩। ৬ তারিখ সবাই হাজির। ঊষা দেবীর আরেক সন্তান আলোকময় দত্ত। পরনে ক্রিমরঙা আলখাল্লা। জনে-জনে অনুরোধ করছেন নব্বই বিঘে জমি জুড়ে ছড়িয়ে থাকা দেশি গাছপালাগুলোর অন্তত একেকটাকে একেকজন অ্যাডাপ্ট করে নিতে। এবং, সেই একই গাছের গোড়ায় হিসু করতে, যাতে গাছগুলো খাবার পায়। ৭ ফেব্রুয়ারি সকালে, মানে ভোরে, চায়ের অপেক্ষায় বসে। ছাদে কেউ যেন স্লিপিং ব্যাগ থেকে বেরনোর চেষ্টা করছেন।
কে?
চেয়ার ছেড়ে উঠে দু'-হাত প্রসারিত করে জ্যোতিদা সহুংকার বরণ করলেন জার্মানিবাসী ভাগ্নেকে— মাঝরাতে এসে, কাউকে বিরক্ত না-করে, লোহার সিঁড়ি বেয়ে, বীরভূমের হিম-ঠান্ডায় যিনি সোজা ছাদে।
বাড়িরই জঙ্গল। গাছপালার ফাঁকে-ফাঁকে চমৎকার কয়েকটা ক্যাম্প। ম্যাট্রেস। ল্যাম্প। তার ভেতর স্লিপিং ব্যাগে শোয়ার অভিজ্ঞতা আমারও ওই একবারই। তাও আবার বীরভূমে! সহকর্মী ধ্রুবজ্যোতি নন্দী ওবাড়ির জামাই এবং আমার সঙ্গী।
একরাম
সেলাম
সেদিনের লেখা নিয়ে
কিছু বলছি না।
দেখা হলো না।
জ্যোতিদা
সাল-তারিখ নেই। তবে এটা আহম্মদপুর থেকে ফিরে। লিখতে হয়েছিল তাঁর মা ঊষা দত্তর বর্ণময় স্মরণ-সমাবেশ নিয়ে। সেখানে সস্ত্রীক গৌরকিশোর ঘোষ। ৬ তারিখ বিকেলে রিকশা তাঁদের নিয়ে ‘বসুন্ধরা’-য় পৌঁছলে নাটকীয় ভঙ্গি-সহ জ্যোতিদার উক্তি— ‘স্বাগত, ব্রহ্মবান্ধব উপাধ্যায়’! কিছু আগে-পরে সস্ত্রীক শক্তি চট্টোপাধ্যায় এবং আরও সব নক্ষত্র।
আর ভাগ্যিস ওইদিন আমি ছিলাম না অফিসে। তাই এই চিরকুট।
কিন্তু সেই দিনটা-যে কাটিয়েছিলাম আপাদমস্তক জ্যোতির্ময় দত্তর সঙ্গে!
৭ তারিখ সকালে দেখি, আলোকময় দত্ত অগ্নিকুণ্ডের সামনে। পবিত্র মন্ত্রোচ্চারণে পরিবেশ গমগম করছে। জ্যোতিদা— প্রায় কানে-কানে— ‘এইসব বুজরুকিতে বিশ্বাস আছে নাকি? চলো, আমরা ঘুরে আসি।‘
ব্রেকফাস্টের পর দু'-জনে বেরিয়ে পড়ি। কখন যেন রাস্তা থেকে গাছের একটা ভাঙা ডাল উঠে এসেছে তাঁর হাতে। লাঠি। আদিবাসীদের মতো। জঙ্গল-বাড়ির পাশে কয়েক বিঘে রুক্ষ মাঠ— ওঁদেরই। মাঠের ওপাশে গাছপালা-ঘেরা বড়ো পুকুর— সেও ওঁদের। পাম্প চলছে ভটভট শব্দে। পুকুর থেকে জল আসছে জঙ্গলে। সেখানে তদারকিতে এক হিন্দুস্থানি।
নানা কথা। আমরা হেঁটে যাচ্ছি ঢালু জমিতে। মাঝে মাঝে জ্যোতিদার উচ্চৈঃস্বরে হাসি। ন্যাড়া জমি থেকে ক্রমে ঝোপঝাড়। গাছপালা। আচমকা সামনে বক্রেশ্বর নদী। ক্ষীণস্রোতা। বালি। বেনাঝোপ। এক জায়গায় ইতস্তত পোড়া কাঠ। ছাই। ঘুরলেন এক চক্কর। স্বগতোক্তির মতো বললেন— ‘এইখানে...’
ঠিক আমার বিপরীতে যখন, একবার উবু হয়ে ফের উঠে দাঁড়ালেন। মুখে বিখ্যাত হাসির টান। দু'-হাত অঞ্জলির মতো ধরা। তাতে ছাই। হাত আলগা করতেই ঝরে পড়ল নিঃশব্দে।
ফেরার পথে ফের সেই পাম্পের কাছে যখন, জামাপ্যান্ট খুলে— খুলে মানে সূত্রহীন— নির্মেদ জ্যোতিদা সবিস্ময়ে আমার দিকে তাকিয়ে: ‘পটি, স্নান (পাম্পের জল দেখিয়ে) করবে না?’
সামনে বু ব-র জামাতা! এককালের হার্টথ্রব মীণাক্ষী দত্তর, মানে মিমিদির, বর! একটু যেন সরে গেল তাঁর হাসি— ‘তুমি কি ঘেরাটোপ ছাড়া পারো না?’
‘না, না। তা কেন। আমি তো গাঁয়েরই ছেলে।'
কলকাতা ফেরার ছবি একটু আলাদা। কী-একটা ট্রেন। সাহেবগঞ্জ-বর্ধমান লোকাল। ‘কবি’ উপন্যাসের নিতাই কবিয়ালকে মনে আছে? তাহলে সেই ট্রেনের কথাও মনে থাকবে। নোংরা, খোপ-খোপ বগি। চারপাশের কাঠে শতবর্ষের ময়লা। দেহাতি ভিড়ে কোনো মতে আমরা বসে— সমীর দত্ত, মানে জ্যোতিদার ভাই; রীতা দত্ত— সমীরদার স্ত্রী এবং তরূণকান্তি ঘোষের কন্যা; শর্বরী দত্ত— বিখ্যাত ফ্যাশন ডিজাইনার, আলোকময় দত্তর স্ত্রী।
বর্ধমানে নেমে একটু ছুটোছুটি। একটু বিভ্রান্তি। এবং, হাওড়া লোকাল।
ট্রেনে কথাবার্তা যা হয়, সেসব ট্রেনেরই মতো। খাওয়া? মনে পড়ছে ছোটো ঠোঙায় মশলামুড়ির কথা। ভাঁড়ে চা— সম্ভবত একাধিকবার।
একরাম আলি
সেলাম
ঘণ্টাখানেক অপেক্ষা করে
এক্ষুনি গেলাম।
তোমার চিরগোলাম
জ্যোতিদা
যথারীতি সাল-তারিখ নেই। কিন্তু কেন এতক্ষণ অপেক্ষা? সম্ভবত ‘কলকাতা ২০০০’ পত্রিকা নিয়ে ব্যস্ত তখন। সেই সংক্রান্ত কিছু কাজ? মনে পড়ছে না।
মনে জ্যোতিদারও নেই। কত বয়স হলো জ্যোতির্ময় দত্তর? ছিয়াশি? ১৯৩৬-এ জন্ম। এই তো সেদিন— ২০১৯। সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের জন্মশতবর্ষ। গোর্কি সদনে প্রদর্শনী। গিয়ে দেখি, মুখোমুখি কয়েকটা চেয়ারে আরও কয়েকজনের সঙ্গে শঙ্খ ঘোষ, জ্যোতির্ময় দত্ত। গলার আওয়াজ শুনে, তখনও পারতেন, ঝটিতি উঠে দাঁড়ালেন। চোখে আর দেখতে পান না। তবু, চির-অজেয় জ্যোতিদার হাত আমার কাঁধে— ‘চলো, প্রদর্শনীটা ঘুরে দেখি।'
দেওয়ালে পরপর ছবি। নানা বয়সের সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের। নানা ভঙ্গির। তাঁর হস্তাক্ষরের। কবিতার পাণ্ডুলিপির। একটা করে ছবির সামনে দাঁড়াই। বিবরণ দিই আর বুঝতে পারি, উনি একরকম করে কিছু দেখছেন। কী দেখছিলেন সেদিন?
ম্যানহাটানে আখড়া একটা আছে বটে। কিন্তু যে-বাড়িতে থাকেন এখন, যাদবপুর থানার উল্টোদিকে, সেই বাড়ির মূল আকর্ষণ তার ছাদ। পাঁচতলা বাড়ি। ছাদ একেবারে প্রাণখোলা। কেউ জানতে চাইলে বাড়িটির কথা বলেন না। বলেন ঘর থেকে বেরোলেই প্রশস্ত উঠোনের মতো ছাদের কথা। ছাদে যান।পায়চারি করেন। তাঁর কথায়— অনেক দূর পর্যন্ত দেখা যায়। দৃষ্টিশক্তি অতি ক্ষীণ। নেই বললেই চলে। কী দেখা যায়?
দূরে নীল আভা নিয়ে যে-দিগন্ত ঘিরে আছে আমাদের, সেইরকম আবছা কিছু?
সেই আভার মধ্যে সমুদ্রের উত্তাল ঢেউ। মণিমেখলা না? হ্যাঁ, ওই তো! ঢেউয়ের মাথায় উঠে পড়ো-পড়ো। পিছনে হাঙরের দল। মরিচঝাঁপির কাদায় চারপাশ থিকথিকে। তারই মধ্যে উনুনে ভাত ফুটছে। দূরে বিড়বিড় করছে শ্মশ্রুমণ্ডিত একটা মুখ। ও কি বিনয়? ওঘরে মিমি। বাতিল বালুচরীর বিশেষ নকশা খুঁজছে দপ্তরিকে দেওয়ার জন্য। বিনয় সেই খাতায় লিখবে। একটা বিন্দু... দুটো... অসংখ্য। জোনাকির ঝাঁক। সন্ধ্যা হয়ে গেছে। এবার কেউ তাঁকে নামিয়ে নিয়ে যাবে। দিগন্তের আভা থেকে ঘরের আভাহীনতায়।