LIC: ২০০ টাকা বিনিয়োগে ২৮ লক্ষ টাকা রিটার্ন! অবিশ্বাস্য শোনালেও সত্যি...

LIC Jeevan Pragati Plan: সম্প্রতি এলআইসি তাদের নাগরিকদের সুবিধার জন্য একটি নতুন প্রকল্প নিয়ে হাজির হয়েছে, যে প্রকল্পে মাত্র ২০০ টাকা করে বিনিয়োগ করলেই আপনারা পেয়ে যাবেন ২৮ লক্ষ টাকা পর্যন্ত রিটার্ন।

২০০ বছরের ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্তি পাওয়ার পর কেটে গিয়েছে ৭৫টি বছর। আর এই দীর্ঘ সময়ে ভারতবর্ষের সমাজে বদলে গিয়েছে অনেক কিছুই। স্থান কাল পাত্র হিসেবে বদলেছে স্বাধীনতার অর্থ। তবে, বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে সকলেই স্বাধীনতা মানে বোঝেন স্বাবলম্বী হওয়ার প্রয়োজনীয়তাকেই। আর্থিক স্বাধীনতা বলতে কি বোঝায়, এটার সংজ্ঞা ব্যক্তি এবং তার আয়ের সঙ্গে পাল্টাতে থাকে। তবে এক কথায় বলতে গেলে, নিজের ভবিষ্যতকে সুরক্ষিত করতে পারার নামই কিন্তু আর্থিক স্বাধীনতা।

আগেই আমরা বলেছি, ব্যক্তি বিশেষে কিন্তু স্বাধীনতার সংজ্ঞা বদলাতে থাকে। যেমন ধরুন, কোনো মহিলার কাছে আর্থিক স্বাধীনতার অর্থ নিজের যাবতীয় খরচ বহন করতে সক্ষম হওয়া। আবার যুব প্রজন্মের কাছে আর্থিক স্বাধীনতা হলো, বিপুল পরিমাণ টাকা রোজগার করা যাতে নিজের স্বপ্নপূরণ করা যায়। তবে সংজ্ঞা যাই হোক না কেন, আর্থিকভাবে স্বাধীন হতে গেলে আপনার সবার আগে প্রয়োজন যেটা, সেটা হলো কঠোর পরিশ্রম।

তবে জীবন সুরক্ষিত করার জন্য শুধুমাত্র চাকরি না, এছাড়াও প্রয়োজন হয় নির্দিষ্ট ফাইন্যান্সিয়াল প্ল্যানিংয়ের। ভারতের প্রত্যেকটি মানুষের ফাইন্যান্সিয়াল প্ল্যানিং এবং আর্থিক প্রয়োজন আলাদা আলাদা রকমের হতে পারে। এই কারণেই সরকারি এবং বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা নিয়ে এসেছে আলাদা আলাদা ধরনের আর্থিক প্রকল্প এবং বিমা পলিসি, যা ভারতের প্রত্যেকটি মানুষের প্রয়োজনকে ভালোভাবে বুঝেই তৈরি করা হয়েছে। সরকারি এবং বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার এইসব প্রকল্পে বিনিয়োগ করলে আপনারা পেয়ে যান দুর্দান্ত রিটার্ন যা আপনার এবং আপনার পরিবারের ভবিষ্যতকে সুরক্ষিত রাখতে পারে। আর এই সমস্ত সংস্থাগুলির মধ্যেই অন্যতম হলো দেশের বৃহত্তম বীমা সংস্থা লাইফ ইন্সুরেন্স কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া বা LIC। নাগরিকদের জন্য মাঝেসাজেই নিত্যনতুন স্কিম নিয়ে আসে দেশের এই বীমা সংস্থাটি। নিজেদের চাহিদা এবং সামর্থ্য বুঝে সে সমস্ত স্কিমে বিনিয়োগ করে থাকেন নাগরিকরাও। আর দেশের সর্ববৃহৎ রাষ্ট্রায়ত্ত বীমা কোম্পানিতে বিনিয়োগ করা অত্যন্ত নিরাপদ এবং সুরক্ষিত হওয়ার কারণে, টাকা চুরি যাওয়ার কোন সম্ভাবনাও থাকেনা।

সম্প্রতি এলআইসি তাদের নাগরিকদের সুবিধার জন্য একটি নতুন প্রকল্প নিয়ে হাজির হয়েছে, যে প্রকল্পে মাত্র ২০০ টাকা করে বিনিয়োগ করলেই আপনারা পেয়ে যাবেন ২৮ লক্ষ টাকা পর্যন্ত রিটার্ন। মাসিক ৬ হাজার টাকা বিনিয়োগ। আর তাতেই হবে কেল্লাফতে।

এলআইসির এই নতুন স্কিমের নাম LIC Jeevan Pragati Policy। নতুন এই স্কিমে বিনিয়োগের ফলে আপনি মোটা টাকা মুনাফা অর্জন করতে পারবেন। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার জন্য এই স্কিম আপনার জন্য হতে চলেছে বিশেষভাবে উপযোগী। যদি আপনার মাথায় ভবিষ্যতে চিন্তাভাবনা থাকে তবে আজই বিনিয়োগ করুন এই বিশেষ প্রকল্পে।

কারা করতে পারবেন বিনিয়োগ?

ভারত সরকারের সংস্থা এলআইসির এই নতুন স্কিমে ভারতের যেকোনো নাগরিক বিনিয়োগ করতে পারবেন। ১২ বছরের ঊর্ধ্বে যে কোন ব্যক্তি এই প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে পারবেন। তবে যাদের বয়স ১৮ বছর পার হয়নি এবং হাতে স্থায়ী রোজগারের সুবিধা নেই, তারা কিন্তু এই প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে পারবেন না। তাদের হয়ে তাদের অভিভাবকরা এই স্কিমে বিনিয়োগ করতে পারবেন। সর্বোচ্চ ৪৫ বছর বয়স পর্যন্ত এই স্কিমে বিনিয়োগ করা যাবে। এই স্কিমে বিনিয়োগের সময় ১২ বছর, তবে সর্বাধিক ২০ বছরের জন্য এই স্কিম আপনারা গ্রহণ করতে পারেন।

২০ বছরের জন্য লগ্নি করে ২৮ লক্ষ টাকার ফান্ড

এলআইসি জীবন প্রগতি পলিসি মূলত ফান্ড এবং রিটার্নের জন্যই জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তার পাশাপাশি সারা জীবনের জন্য সুরক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রেও এই প্রকল্পটি ভারতের নাগরিকদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এই প্রকল্পে প্রত্যেকটি পলিসি ধারককে প্রতিদিন ২০০ টাকা করে বিনিয়োগ করতে হবে। অর্থাৎ প্রতি মাসে ৬০০০ টাকা বিনিয়োগ করতে হবে আপনাকে। এই প্রকল্পে আপনি টানা ২০ বছর পর্যন্ত বিনিয়োগ করলে আপনারা ২৮ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ফান্ড তৈরি করতে পারবেন। তার সাথেই আপনারা পেয়ে যাবেন একটি রিস্ক কভার।

পাঁচ বছরে বৃদ্ধি পাবে রিস্ক কভার

ভারতীয় জীবন বিমা নিগমের প্রত্যেকটি প্রকল্পেই সাধারণত রিস্ক কভার। তবে, এলআইসি জীবন প্রগতি প্ল্যানের সবথেকে বড় বিশেষত্বটি হলো, প্রত্যেক পাঁচ বছর অন্তর এই প্রকল্পের রিস্ক কভার বাড়তে থাকে। অর্থাৎ বলতে গেলে, প্রত্যেক পাঁচ বছর অন্তর আপনার এই রিস্ক কভার অ্যামাউন্ট বাড়তে থাকে। তার পাশাপাশি, এই প্রকল্পের সঙ্গে আপনারা পেয়ে যাচ্ছেন ডেথ বেনিফিট। এই ডেথ বেনিফিটের পরিমাণটা নির্ভর করবে আপনার পলিসির সময়সীমার উপর। যতদিন পর্যন্ত আপনার পলিসি সক্রিয় থাকবে, ততদিনের হিসাবে আপনারা ডেথ বেনিফিট পেতে পারেন।

পলিসি ধারকের মৃত্যুর পর, পলিসির মূল্য, সাধারণ রিভার্সনারি বোনাস, এবং ফাইনাল বোনাস যুক্ত করে একসাথে পেমেন্ট করা হয়ে থাকে। এই পলিসি যিনি উত্তরসূরী থাকবেন তার কাছে এই টাকা পৌঁছে দেবে ভারতীয় জীবন বিমা নিগম।

কীভাবে বাড়াবেন কভারেজ?

ভারতীয় জীবন বিমা নিগমের জীবন প্রগতি পলিসির টার্ম লাইফ ন্যূনতম ১২ বছর এবং সর্বাধিক ২০ বছর। এই পলিসি আপনারা ১২ বছর বয়স থেকে ৪৫ বছর বয়স পর্যন্ত চালাতে পারেন। এই পলিসির প্রিমিয়াম আপনারা ৩ মাস অন্তর, ৬ মাস অন্তর এবং ১ বছর অন্তর জমা করতে পারেন। এই প্রকল্পের নূন্যতম সাম অ্যাসিওর্ড ১.৫ লক্ষ টাকা রাখতে হয়। তবে সর্বাধিক সাম অ্যাসিওর্ডের কোনো সীমা নেই।

মনে করুন, আপনি ২ লক্ষ টাকার পলিসি কিনলেন। তাহলে কিন্তু ৫ বছর পরে আপনার ডেথ বেনিফিটের পরিমাণ খুব একটা বেশি হবে না। তবে, ৬ থেকে ১০ বছরের মধ্যে এই ডেথ বেনিফিটের মূল্য বৃদ্ধি পেতে শুরু করবে ধীরে ধীরে। ১০ বছর পরে এই ডেথ কভারেজ হবে ২.৫ লক্ষ টাকা। ১০ থেকে ১৫ বছরের জন্য এই কভারেজ ৩ লক্ষ টাকার গণ্ডি অর্জন করবে। এইভাবেই একটা নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর এই প্রকল্পে ডেথ বেনিফিটের পরিমাণ বাড়তে থাকবে।

জীবন প্রগতি পলিসির সুবিধা

১. এই পলিসি গ্রহণ করার পর কোন কারণবশত যদি ৫ বছরের মধ্যে সেই পলিসি ধারকের মৃত্যু হয়, তাহলে বেসিক সাম অ্যাসিওর্ডের ১০০% অর্থাৎ সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ করা হবে। তবে এক্ষেত্রে এই পলিসি ন্যূনতম পাঁচ বছরের জন্য চালু থাকতে হবে।

২. যদি পলিসি চালুর ৬ থেকে ১০ বছরের মধ্যে সেই পলিসি ধারকের মৃত্যু হয় তাহলে সেই পলিসি ধারকের পরিবার ১২৫% রিটার্ন পাবেন, ১১ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে মৃত্যু হলে পাওয়া যাবে ১৫০% রিটার্ন, ১৬ থেকে ২০ বছরের মধ্যে মৃত্যু হলে পাওয়া যাবে ২০০% রিটার্ন।

৩. আপনি যদি শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী হন তাহলে আপনার জন্য এই পলিসিতে থাকবে অতিরিক্ত কিছু সুবিধা।

৪. পলিসির সময়সীমা শেষ হওয়ার পরে আপনি ২৮ লক্ষ টাকা ফান্ড ফেরত পেতে পারবেন।

কী ভাবে রিফান্ড?

এই প্রকল্পে আপনাকে সর্বাধিক ২০ বছর পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে হবে। প্রতিমাসে আপনাকে ৬,০০০ টাকা অর্থাৎ প্রতিদিন ২০০ টাকা করে আপনাকে বিনিয়োগ করতে হবে এই পলিসিতে। ১২ বছর বয়স থেকে সর্বাধিক ৪৫ বছর বয়স পর্যন্ত আপনি এই প্রকল্পে বিনিয়োগের সুযোগ পাবেন। যদি আপনি আপনার ২০ বছর বয়সে এই প্রকল্পে বিনিয়োগ শুরু করেন এবং ২০ বছর পর্যন্ত এই প্রকল্পে টানা বিনিয়োগ করেন তাহলে আপনার ৪০ বছর বয়সে এই প্রকল্প ম্যাচিওর হওয়ার পরে আপনার হাতে আসবে মোট ২৮ লক্ষ টাকা। এবার সেই টাকা আপনি এলআইসি-র নতুন কোন প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে পারেন, অথবা অন্যান্য মার্কেট বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও ব্যবহার করতে পারেন।

More Articles