দশটা-পাঁচটার চাকরি থেকে বিশ্বসুন্দরীর মঞ্চে, মানসা বারাণসী যেন চিররহস্যময়ী...
২১ বছর পরে এই বছরে অর্থাৎ ২০২১-এ মিস ইউনিভার্সের খেতাব মাথায় সুসজ্জিত করে দেশে ফিরেছেন এক ভারতীয় যাকে আমরা প্রত্যেকে চিনি; নাম হারনাজ সিন্ধু। তাঁকে নিয়ে হইহই কম হয়নি গোটা দেশজুড়ে। কিন্তু আজ আমাদের গল্প হারনাজ সিন্ধুকে নিয়ে নয়। আজকের গল্পের নায়িকার নাম।মানসা বারাণসী। যোগসূত্র একটাই মানসা ঠিক এক পা দূরে দাঁড়িয়ে আছেন হারনাজের থেকে। মনে প্রশ্ন জাগছে নিশ্চয়ই কে এই মানসা বারাণসী? কী করেন তিনি? কেনই বা তাঁকে নিয়ে লেখালিখি হবে? তবে আসুন চিনে নেওয়া যাক এমন এক ব্যক্তিত্বকে যিনি শুধু বাইরে থেকেই নয়, ভিতর থেকেও দারুণ সুন্দর একজন মানুষ।
মানসা বারাণসী এই বছর মিস ওয়ার্ল্ড ২০২১ প্রতিযোগিতায় ভারতের একমাত্র প্রতিনিধি। ১৯৯৭ সালের ২১শে মার্চ থেকে ২০২১ এর বিশ্ব সুন্দরীর প্ল্যাটফর্ম অবধি এই বিস্তৃত রাস্তা মোটেও মসৃণ ছিল না মানসার। বহু উঁচু-নীচু, চ়ড়াই-উৎরাই পার করার পরেই একজন মানুষের ওপর সফলতার আলো এসে পড়ে। মানসার ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি।
১৯৯৭ সালে হায়দ্রাবাদের এক তেলেগু পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন মানসা বারাণসী। পিতার নাম রবিশংকর আর মায়ের নাম শৈলজা। জন্মের পর কিছু বছর হায়দ্রাবাদেই কাটে তাঁর। কিন্তু হঠাৎই বাবার চাকরিসূত্রে ট্রান্সফার হয় মালয়েশিয়ায়। শৈশবের সমস্ত শিকড়ের টান অগ্রাহ্য করে মানসা কে দেশ ছাড়তে হয়। মালয়েশিয়ায় মানসা গ্লোবাল ইন্ডিয়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে ভর্তি হন এবং ক্লাস ১০ অবধি ওই স্কুলেই পড়েন। এর পরে তিনি ভারতবর্ষে ফেরত আসেন এবং উচ্চ-মাধ্যমিক ও গ্র্যাজুয়েশন করেন দেশে থেকেই। কম্পিউটার সায়েন্সে ডিগ্রি নিয়ে পাস করার পর হায়দ্রাবাদেই একটি কোম্পানিতে চাকরি করতে শুরু করেন তিনি।
ছোট থেকেই মুখচোরা মানসা নিজেকে আবিষ্কার করতে চান। নতুন নতুন অচেনা অজানা পরিস্থিতিতে নিজেকে নামিয়ে তিনি নিজেকে চিনতে ভালোবাসেন। কখনও মিউজিক, কখনও নাচ, কখনও যোগ ব্যায়াম, কখনও মডেলিং, এবং সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ মানসা বারাণসী দেশে ফেরার পর থেকেই সক্রিয় ভাবে শিশুদের ওপর যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে ভীষণ ভীষণ সরব। হায়দ্রাবাদ পুলিশের সঙ্গে যৌথভাবে মিলিত হয়ে মানসা একটি ক্যাম্পেন চালান শিশু নিপীড়নের বিরুদ্ধে যার নাম হলো, 'We Can' । এ ছাড়াও মানসা সব সময়ে দুঃস্থ শিশুদের পাশে দাঁড়ান। সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে তার ছবিতে প্রায়শই দেখা যায় তাকে ঘিরে আছে ছোট ছোট ফুলের মতো শিশুরা।
আরও পড়ুন-১০০ কোটির নস্টালজিয়ার নাম পার্লে-জি
এই ভারতসুন্দরী ২০১৯ সালে মিস তেলঙ্গনা প্রতিযোগিতায় তৃতীয় স্থান গ্রহণ করেন, ২০২০ সালে আবার মিস তেলঙ্গনা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন। এবং এবারে তিনি টাইটেল যেতেন। একই বছরে তিনি ভারতসুন্দরীর মুকুটও মাথায় তোলেন। এইবার তাঁর লক্ষ্য বিশ্বসুন্দরীর তকমার দিকে। ১৬ ডিসেম্বর ২০২১-এ যে প্রতিযোগিতা ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু মানসা সহ বেশ কিছু প্রতিযোগীর কোভিড ধরা পড়ায় প্রতিযোগিতা পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে ৯০ দিনের জন্য।
ছোট থেকেই মানসার অনুপ্রেরণা প্রিয়াঙ্কা চোপড়া। মানসার মতে প্রিয়াঙ্কা চোপড়া সবসময় নতুন কিছু করার চেষ্টা করেন যা তাঁকে দারুন ভাবে উদ্বুদ্ধ করে তোলে। মা, ঠাকুমা এবং তার ছোট বোন এই তিন নারীই তাঁর চালিকাশক্তি জানান মানসা। ভবিষ্যতে বলিউডে কাজ করতে চান কি না জিজ্ঞেস করলে মানসা উত্তরে জানান যদি কখনও এমন কোনও সুযোগ আসে তবে তিনি অবশ্যই ভেবে দেখবেন। ২০২১ এর বিশ্ব সুন্দরী প্রতিযোগিতার মঞ্চে তিনি রাধা-কৃষ্ণর রাসলীলার একটি অদ্ভুত সুন্দর পেন্টিং নিয়ে যেতে চান ভারতের তরফ থেকে ওই মঞ্চকে দেওয়ার মতো উপহার হিসেবে। মানসা সারাজীবন সমাজে ভালো ভালো কাজের মধ্যে থাকতে চেয়েছেন এবং থেকে এসেছেনও। শিশুদের যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের মঞ্চ গড়ে তোলা থেকে, দুঃস্থ শিশুদের জন্য সবসময় এগিয়ে আসা থেকে, নিজের দেশের প্রতি একজন দায়িত্ববান নাগরিক হিসেবে সমস্ত কর্তব্য পালন করা অবধি মানসা কখনও পিছপা হননি। অন্তরের এই সৌন্দর্যের কারণেই কে যেন নীরবে মানসা বারাণসীর মাথায় বিশ্বসুন্দরীর মুকুট পরিয়ে দেন প্রতিযোগিতার ফলাফলের তোয়াক্কা না করেই।