পরিবার-সমাজ উপেক্ষা করে বিয়ে, যে উদাহরণ তৈরি করল কলকাতার এই সমপ্রেমী যুগল

Same Sex Marriage : ফের সমপ্রেমী বিয়ের সাক্ষী থাকল কলকাতা, সমাজের চোখে চোখ রাখার যে সাহস দেখালো এই যুগল...

ভালোবাসা দিয়ে হাজার অসাধ্য সাধন সম্ভব। ভালোবাসা বাঁধ ভাঙার কথাই বলে। ভালো থাকার কথা বলে। প্রেম, একজন নারীর সঙ্গে একজন পুরুষের সম্পর্ক, পরিবার তথা সমস্যার গতানুগতিক ধারণায় এটুকুই স্পষ্ট। তবে এই গতে বাঁধা জীবনের ছবিটার বাইরেও একটা পৃথিবী আছে, একটা ভালো থাকার জায়গা আছে। সেই কথাটাই বারবার সমাজের চোখে চোখ রেখে প্রমাণ করে দিচ্ছে আজকের সমপ্রেমীরা। নিজের ভালোবাসাকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য এরা সমস্ত কিছু বাজি রাখতেও প্রস্তুত। সম্প্রতি এমনই একটি ব্যতিক্রমী ঘটনার সাক্ষী থেকেছে খোদ কলকাতা শহর। সামাজিক ছুৎমার্গ উড়িয়ে গাঁটছড়া বেঁধেছেন মৌসুমী-মৌমিতা। সোশ্যাল মিডিয়ায় এই খবর প্রকাশ্যে আসতেই রীতিমতো শোরগোল শুরু হয়ে গিয়েছে।

রবিবার মধ্যরাত, ঘড়িতে তখন ১২টা। কলকাতা শহরের ভূতনাথ মন্দিরে হলুদ পাঞ্জাবি এবং টোপর পরে পৌঁছে যান বছর উনিশের মৌমিতা। কনের সাজে প্রস্তুত ছিলেন মৌসুমীও। অতঃপর সেখানেই চার হাত এক হয় মৌসুমী দত্ত এবং মৌমিতা মজুমদারের। ধুমধাম করে না হলেও মৌসুমীর সিঁথি সিঁদূরে রাঙিয়ে দেন মৌমিতা। মালাবদলও করেন।

আরও পড়ুন - ইতিহাসের সবথেকে দামি তরবারি! টিপু সুলতানের অস্ত্রের দাম শুনলে চোখ উঠবে কপালে…

বয়স সবেমাত্র উনিশ সদ্য যৌবনের পা রাখা একটি মেয়ে মৌমিতা, অন্যদিকে মৌসুমী জীবনের ঘাত প্রতিঘাতে অনেকটা পরিণত। এর আগে একবার বিয়েও হয়েছিল মৌসুমীর। সাত এবং এগারো বছরের দুই সন্তানের মা সে। বিয়ের পরবর্তী জীবন কোনদিনই বিশেষ সুখকর ছিল না মৌসুমীর কাছে, মারধর করতো বর। তারপর থাকতে না পেরে একসময় ছাড়াছাড়ির পথ বেছে নেন মৌসুমী। কিন্তু ভেঙে পড়েননি। দুই সন্তানের দায়িত্ব একার কাঁধেই তুলে নিয়েছিলেন তিনি। এই বয়সে কী ভাবে এতটা সাহস আর লড়াই করার যে সঞ্চয় করল মৌমিতা এবং মৌসুমী তা যেন সত্যিই বিস্ময়। হয়তো প্রকৃত ভালোবাসাই পারে সমাজের যেকোনো চোখ রাঙানিকে উপেক্ষা করে দাঁতের দাঁত কামড়ে পড়ে থাকতে এবং লড়াই করতে শেখাতে। তাই এঁরাও পেরেছে। বছর উনিশের একটা মেয়ে তাই জোর দিয়ে বলতে পারে সমাজ কী ভাবল তাতে কিছুই যায় আসে না তার, তাই সারা জীবন এভাবেই একসঙ্গে থাকতে চায় তারা।

প্রসঙ্গত, বনগাঁর বাসিন্দা মৌমিতা মজুমদারের সঙ্গে কয়েকমাস আগেই ইনস্টাগ্রামে আলাপ হয় কলকাতার বছর ২৫-এর মৌসুমী দত্তর। দু'জনের মধ্যে আলাপ ক্রমেই ঘনিষ্ঠতায় পরিণত হয়। নিয়মিত ফোনে এবং ফেসবুকে কথাবার্তা শুরু হয় তাঁদের। এরপর একদিন হঠাৎ করেই মৌসুমীকে বিয়ের প্রস্তাব দেন মৌমিতা। লিভ ইন সম্পর্ক যদি আইনি স্বীকৃতি পেতে পারে তাহলে সমপ্রামী সম্পর্ক এই স্বীকৃতির দাবি রাখতে পারে এই বিশ্বাস নিয়েই তারা নিজেদের মতো করে ভালবাসার জয়গান লিখলেন এবং আগামী সময়কে লড়াই করার পথ চিনিয়ে দিলেন।

More Articles