মার্চেই ধেয়ে আসছে ভয়ংকর তাপপ্রবাহ, কী করে বাঁচাবেন নিজেকে? যে উপায় বাতলে দিল কেন্দ্র

Heatwave in India Precaution : নিজেকে বাঁচাতে এগুলো অবশ্যই মেনে চলতে হবে। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক সেই তালিকা।

মাত্র কয়েকমাস আগের কথা। গোটা উত্তর ভারত জুড়ে তখন প্রবল শৈত্যপ্রবাহ। রাজস্থান থেকে মধ্যপ্রদেশ, বিহার – সর্বত্রই এক ধাক্কায় পারদ নেমেছিল অনেকটা। ২০২৩-র জানুয়ারির বেশিরভাগটা জুড়ে এমনই ছবি দেখেছে ভারত। মাত্র কয়েকটা দিন পরই পরিস্থিতি একেবারে বদলে গেল। ফেব্রুয়ারির মাঝেই তাপমাত্রা ছাড়িয়েছিল স্বাভাবিকের অঙ্ক। গুজরাতের কিছু জায়গায় ৪০ ডিগ্রি উঠেছিল উষ্ণতার পারদ। এমন পরিস্থিতিতে নতুন করে সতর্কতা জারি করল কেন্দ্রীয় সরকার। মার্চেই ভারতজুড়ে বইতে পারে ভয়ংকর তাপপ্রবাহ। গরমে গরমে এখনই জেরবার মানুষ। তাপপ্রবাহের এই ভয়াল বার্তা সেই আশঙ্কা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

সম্প্রতি কেন্দ্রের স্বাস্থ্যমন্ত্রক সূত্রে একটি বিশেষ বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, মার্চ থেকে মে অবধি গোটা ভারতজুড়ে তীব্র তাপপ্রবাহ চলার আশঙ্কা রয়েছে। ইতিমধ্যেই তার আভাসও পাওয়া গিয়েছে। ফেব্রুয়ারির মাঝেই গুজরাতের ভূজ শহরের তাপমাত্রা দাঁড়ায় ৪০.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের অঙ্কে। মহারাষ্ট্রের উপকূলবর্তী এলাকায় তাপমাত্রা ৩৭-৩৮ ডিগ্রির আশেপাশে ঘুরতে থাকে। কলকাতাতেও ৩৫-৩৭ ডিগ্রির আশেপাশে রয়েছে পারদ। ইন্ডিয়া মেটেরোলজিকাল ডিপার্টমেন্ট বা IMD-ও একই ঘোষণা করেছে।

আরও পড়ুন : ভারতে হু হু করে বাড়বে তাপপ্রবাহ, ধ্বস নামবে অর্থনীতিতেও? যে আশঙ্কা দানা বাঁধছে

এই তীব্র তাপপ্রবাহ এলেই স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়ে। করোনা পরবর্তী সময় ওয়ার্ক ফ্রম হোম এখন সাধারণ জিনিস। কিন্তু এই মুহূর্তে বেশিরভাগ মানুষকেই বাড়ির বাইরে বেরোতে হচ্ছে। কেউ এসি ঘরে বসে কম্পিউটার চালাচ্ছেন, কেউ আবার গরম মাথায় নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন। স্কুল-কলেজেও যেতে হচ্ছে পড়ুয়াদের। কাজেই তাপপ্রবাহ হানা দিলে এদের শরীর দুর্বল হয়ে পড়বে। এমনিতেই তাপপ্রবাহের কারণে প্রতি বছরই মারা যান বেশকিছু মানুষ। বিশ্ব উষ্ণায়ন যত বাড়ছে, এই গরমের প্রকোপও ততগুণ বাড়ছে। আর তার ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে আমাদের শরীরে।

তীব্র গরমে আমাদের সবাইকেই শরীর সুস্থ রাখতে হবে। কিন্তু কী করে? এখন থেকেই সেই উপায় বাতলে দিল স্বাস্থ্যমন্ত্রক। পাশাপাশি IMD-র তরফ থেকেও বিশেষ কিছু নিয়মাবলি বের করা হয়েছে। নিজেকে বাঁচাতে এগুলো অবশ্যই মেনে চলতে হবে। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক সেই তালিকা।

তীব্র গরমে কী কী করবেন?

১) যতটা পারবেন, জল খাবেন। তেষ্টা না পেলেও বারবার জল খাবেন। শরীর তরতাজা থাকতে সাহায্য করবে এই উপায়।

২) হালকা, ঢিলেঢালা কটনের জামাকাপড় পরবেন। একেবারে কালো বা অন্য গাঢ় রংয়ের জামা ব্যবহার করবেন না। গাঢ় রং ব্যবহার করলে গরম আরও বাড়ার সম্ভাবনা।

৩) বাইরে বেরোলে সানগ্লাস, টুপি অথবা ভালো ছাতা, ভালো পা ঢাকা জুতো ব্যবহার করবেন।

৪) ওআরএস, লস্যি, লেবু জল, বাড়িতে বানানো ফলের রস এসব খান। সেরকম হলে সঙ্গেও রাখুন। শরীর ঠাণ্ডা থাকবে।

৫) দুপুরে ঘরের জানলা-দরজা বন্ধ করে দিন, পর্দা দিয়ে দিন। রাত হলে সেই জানলা-দরজা একেবারে খুলে দিন। সারাদিনের তাপ রাতের বেলা বেরিয়ে যাবে।

৬) ফ্যানের নিচে থাকুন। সাধারণ বা ঠাণ্ডা জলে বারবার স্নান করুন।

আরও পড়ুন : ইউনিসেফের বিস্ফোরক রিপোর্ট! কয়েক বছরেই তাপপ্রবাহের বলি হবে শিশুরা

গরম থেকে বাঁচতে কী কী করবেন না

১) দুপুর ১২টা থেকে ৩টে – এই সময়টাতেই সবচেয়ে বেশি গরম থাকে। চেষ্টা করবেন, এই সময়টায় বাড়ির বা অফিসের বাইরে না বেরোতে। সূর্যের তেজ যেন না লাগে।

২) বাইরে তাপমাত্রা অত্যাধিক হলে খুব বেশি কষ্টদায়ক কাজ করতে যাবেন না। শরীরের ওপর চাপ তো পড়বেই, সেইসঙ্গে গরমেও কাহিল হয়ে পড়বেন। হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচতে হলে অবশ্যই এগুলো খেয়াল রাখতে হবে।

৩) ঘনঘন কোল্ড ড্রিংকস, চা-কফি, মদ খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। এগুলো গরমের মধ্যে শরীরকে আরও শুষ্ক করে দেয়।

৪) হাই প্রোটিনযুক্ত খাবার খাওয়া উচিত।

হিট স্ট্রোক হলে কী করবেন?

এসবের সঙ্গে শরীর খারাপ হলেই তড়িঘড়ি ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করার কথা বলছে কেন্দ্র। যদি কেউ সানস্ট্রোক বা হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হন, তাহলে তাঁকেও শুশ্রূষা করতে হবে। সবার প্রথমে ওই মানুষটিকে ছায়ার মধ্যে, কোনও ঠাণ্ডা জায়গায় নিয়ে আসতে হবে। ভিজে কাপড় দিয়ে ভালো করে গোটা শরীর মুছিয়ে দিতে হবে। জল দিয়ে বারবার মাথা ধুয়ে দিতে হবে। এগুলো করলে শরীরের তাপমাত্রা খানিকটা হলেও কমে। সেইসঙ্গে অবশ্যই ওআরএস, না হলে অন্তত লেবু জল খাওয়াতেই হবে। এবং অতি অবশ্যই, নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।

More Articles