প্রত্যন্ত গ্রামের রেলকর্মীর ছেলে ইসরোর প্রজেক্ট ডিরেক্টর! চাঁদজয়ের এই নেপথ্য-নায়ককে চেনেন?
P Veeramuthuvel, Project Director of Chandrayaan-3: ছোট্ট শহর থেকে ইসরোর বিজ্ঞানী। সহজ ছিল না পথটা। তবে মনের জোর, মেধার জোরে সেই জায়গাটায় পৌঁছে গিয়েছিলেন বীরমুথুভেল।
চাঁদের মাটিতে পা দেওয়ার স্বপ্ন শেষ পর্যন্ত সত্যি হল ভারতের। বুধবার সন্ধ্যায় চাঁদের মাটিতে পা রেখেছে চন্দ্রযান ৩। চাঁদে পৌঁছনোর নিরিখে ভারত চতুর্থ দেশ হলেও চাঁদের দক্ষিণ মেরু জয় করেছে ভারতই প্রথম। গোটা দেশের কাছে এই মুহূর্ত গৌরবের, আনন্দের। তবে সহজ ছিল না চাঁদজয়ের এই পথ। হাজার হাজার বিজ্ঞানী ও ইঞ্জিনিয়ারের অক্লান্ত পরিশ্রম, পরিবারের থেকে দূরে থাকা, শত শত নির্ঘুম রাত জিতে গিয়েছে আসলে শেষমেশ। ইসরোর বিজ্ঞানীদের এই সাফল্যে শুভেচ্ছা জানিয়েছে নাসা, শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি খোদ। বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের তরফে এসেছে শুভেচ্ছাবার্তা। শুভেচ্ছা জানিয়েছেন চেন্নাইয়ের মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্টালিনও। তবে ইসরো-কে শুভেচ্ছা জানিয়েই তাঁর ফোন গিয়েছে ইসরোর এক জরুরি সদস্যের কাছে। যিনি ছাড়া আসলে সম্ভবই হত না গৌরবের এই চাঁদজয়।
আরও পড়ুন: চাঁদের মাটি ছোঁয়ার অপেক্ষায় চন্দ্রযান-৩, ভারতের চাঁদে যাওয়ার নেপথ্যে যেসব তুখোড় মস্তিষ্ক…
তিনি চন্দ্রযান ৩ -এর প্রজেক্ট ম্যানেজার পি বীরমুথুভেল। তামিলনাড়ুর ভূমিপুত্র তিনি। ফলে এই সাফল্যে তামিলনাড়ুর জন্য যেন আরও বিশেষ। আর সেই শুভেচ্ছাই ফোন করে বীরমুথুভেল পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছিলেন স্টালিন স্বয়ং। বিন্দু বিন্দু করেই সিন্ধু গড়ে ওঠে। সেতুবন্ধনের সময় যেমন বৃথা যায়নি ছোট্ট কাঠবিড়ালির শ্রমটুকুও, তেমনই চন্দ্রাভিযানের ক্ষেত্রেও সত্যি ছিল প্রতিটি বিজ্ঞানী, প্রতিটি ইঞ্জিনিয়ারের পরিশ্রম। তার পরেও চন্দ্রযান ৩ যাঁর কাছে ছিল সন্তানসম, প্রায় ৪০টি বসন্ত-বর্ষা-শীত যিনি দিয়েছেন মহাকাশ গবেষণাকে, তাঁর একটু বেশি কৃতিত্ব তো প্রাপ্ত বটেই।
গত ১৪ অগস্ট অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান স্পেস সেন্টার থেকে যাত্রা শুরু করে চন্দ্রযান ৩। গত ৫ অগস্ট সে পৌঁছে যায় চাঁদের কক্ষপথে। এই চল্লিশ দিন প্রত্যাশায় বুক বেঁধেছেন ইসরোর বিজ্ঞানীরা। প্রার্থনা করেছেন দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ। বুধবার চন্দ্রযান ৩-এর ল্যান্ডার চাঁদের মাটি ছুঁতে না ছুঁতেই আনন্দ, উল্লাসের ঢল ওঠে দেশ জুড়ে। শুভেচ্ছা এসে জড়ো হতে থাকে ইসরোর দরজায়। দুনিয়ার সামনে নিজের টিমের সঙ্গে পরিচয় করে দেন ইসরোর প্রধান এস সোমনাথ। প্রথমেই তিনি পরিচয় করান মিশনের প্রজেক্ট ডিরেক্টর বীরমুথুভেলের সঙ্গে। দুনিয়া চিনল চাঁদ জয়ের নেপথ্যের নায়ককে।

ছোট্ট শহর থেকে ইসরোর বিজ্ঞানী। সহজ ছিল না পথটা। তবে মনের জোর, মেধার জোরে সেই জায়গাটায় পৌঁছে গিয়েছিলেন বীরমুথুভেল। চন্দ্রাভিযান সফল হওয়ার পরে বক্তৃতায় মুথুভেল জানান, আমরা চতুর্থ দেশ, যারা চাঁদের মাটিতে দক্ষতার সঙ্গে নিজেদের উপগ্রহকে পৌঁছতে পেরেছি। চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে পৌঁছনো প্রথম দেশ ভারতই।
তামিলনাড়ুর ছোট্ট এলাকা বিল্লুপুরম। সেখানেই ১৯৭৬ সালে জন্ম বীরমুথুভেলের। বাবা ছিলেন রেলওয়ের টেকনিশিয়ান। তিরিশ বছর ধরে রেলের দক্ষিণ শাখার কাজ করেছেন তিনি। বীরমুথুভেলের প্রাথমিক পড়াশোনা রেলওয়ে স্কুলেই। সেখান থেকে পাশ করে মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার দিকে যান মুথুভেল। একটি বেসরকারি পলিটেকনিক কলেড থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিপ্লোমা করেন তিনি। চেন্নাইয়েরই একটি বেসরকারি কলেজ থেকে স্নাতক পাশ করার পর দেশের অন্য একটি বড় কলেজে পড়ার সুযোগ পান মুথুভেল। সেখানেই শেষ করেন স্নাতকোত্তার ডিগ্রি। এরপর আইআইটি মাদ্রাজ থেকে ডক্টোরেট করেন বীরমুথুভেল।

২০১৪ সালে ইসরোয় যোগ দেন তিনি। পূরণ হয় ছোটবেলার স্বপ্ন। অচিরেই নিজের যোগ্যতায় ছিনিয়ে নেন ইসরোর ডেপুটি ডিরেক্টরের পদ। চন্দ্রযান ২ অভিযানের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন বীরমুথুভেল। সেসময় প্রজেক্ট ডিরেক্টর ছিলেন ভানিথা এবং ইসরোর প্রধান ছিলেন কে শিভান। কিন্তু কাছাকাছি পৌঁছেও মুখ থুবড়ে পড়েছিল ২০১৯ সালের সেই অভিযান। পরবর্তী চন্দ্রাভিযানের দায়িত্ব বর্তায় বীরমুথুভেলের কাঁধে।
আরও পড়ুন:নিন্দার মাঝে উজ্জ্বল নাম! চন্দ্রযানের সাফল্যে যে ভাবে জুড়ল যাদবপুরের নাম
এই প্রকল্পে যে লেজার রেট্রোরিফ্লেক্টর ব্যবহার করা হয়েছিল, তা ইসরোর হাতে তুলে দিয়েছিল নাসা। সেগুলোকে কীভাবে চন্দ্রযান ৩-এ ব্যবহার করা যায়, তার গোটা পরিকল্পনার নেতৃত্ব দেন বীরমুথুভেল। তাঁর এবং তাঁর গোটা টিমের সম্মিলিত প্রয়াসই আদতে ছিল সাফল্যের চাবিকাঠি। বীরমুথুভেলের সাফল্য দেখতে দেখতে বুধবার কেঁদেই ফেললেন তাঁর বাবা। এ জয় আসলে বীরমুথুভালের সেই ছোট্ট গ্রাম বিল্লুপুরমেরও। যা দেশের হাতে তুলে দিয়েছে ইসরোর অন্যতম এক গুণী বিজ্ঞানী, ইঞ্জিনিয়ার, সর্বোপরী একজন ভালো অধিনায়ককে। যার হাত ধরে চাঁদের মাটিতে পা রাখল ভারত।

Whatsapp
