বয়স নাকি প্রায় পাঁচ হাজার বছর! পৃথিবীর প্রাচীনতম গাছকে জড়িয়ে রয়েছে অজস্র রহস্য

Oldest Living Tree on Earth : এ কেমন অদ্ভুত, রহস্যময় উদ্ভিদ! নাকি রূপকথার কাহিনির মতোই রয়েছে তার অস্তিত্ব।

‘গাছ লাগান প্রাণ বাঁচান’। গোটা বিশ্বজুড়েই এখন এই স্লোগান জারি রাখছেন পরিবেশপ্রেমীরা। চারদিকে যত সভ্যতা উন্নত হচ্ছে, যত প্রযুক্তি আর বিজ্ঞানের আশ্চর্য বিস্ফোরণ ঘটছে, ততই বিপদে পড়ছে পরিবেশ। নগরায়নের জাঁতাকলে পড়ে একের পর এক জঙ্গল ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। গাছ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এদিকে ছোট থেকেই বিজ্ঞানের বইয়ে আমরা পড়ে এসেছি, জীবনধারণ ও সভ্যতার টিকে থাকার জন্য গাছ কতটা প্রয়োজনীয়। গাছ অক্সিজেন দেয়, মাটি আঁকড়ে রাখে, বাতাস থেকে কারবন ডাই অক্সাইডের মতো গ্রিন হাউজ গ্যাস শুষে নেয়। কিন্তু তাতে গাছ কাটা বন্ধ হচ্ছে না।

অবশ্য সেই আদিমকাল থেকে গাছ পৃথিবীর সঙ্গে জুড়ে আছে। বলা ভালো, জীবনের শুরুর লগ্ন থেকেই উদ্ভিদরা সঙ্গী। চিরহরিৎ, পর্ণমোচী ইত্যাদি নানা সবুজের ভিড়ে একটু একটু করে বেঁচে উঠেছে সভ্যতা। একেকরকম গাছের একেকরকম স্বভাব। তারা বড় হয়, আবার প্রকৃতির নিয়মেই ঝরে যায়। কিন্তু এক দুই নয়, প্রায় ৫০০০ বছর ধরে পৃথিবীর বুকে নিঃশ্বাস নিচ্ছে একটি গাছ! এতদিন ধরে সে রয়েছে কী করে? আর এ কেমন অদ্ভুত, রহস্যময় উদ্ভিদ! নাকি রূপকথার কাহিনির মতোই রয়েছে তার অস্তিত্ব।

আরও পড়ুন : মানুষের থেকে জল চাইছে গাছ! গাছের কথা রেকর্ড করে শোনালেন বিজ্ঞানীরা!

এক ঝলক শুনলে মনে হতে পারে, কাহিনিই বটে। কিন্তু বাস্তবেই এমন গাছ রয়েছে পৃথিবীর বুকে। আমরা, মানে বাঙালিদের হাতের কাছেই রয়েছে ‘দ্য গ্রেট ব্যানিয়ান ট্রি’। শিবপুর বোটানিক্যাল গার্ডেনের বিশাল এই বটগাছ দেখতে প্রতি বছর ভিড় জমান অনেকে। বলা হয়, এর বয়স নাকি কলকাতার সমান! সাইক্লোন, আমফান এসেছে, গাছটি ক্ষতিগ্রস্তও হয়েছে। কিন্তু এখনও টিকে আছে এটি। কিন্তু বয়সের দিক থেকে বিচার করলে, আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ার এই গাছটির কাছে নিতান্তই ‘শিশু’ মনে হবে রাজ্যের বিখ্যাত বটগাছটিকে। বিশ্বের প্রাচীনতম গাছ বলে কথা!

বিশ্বের প্রাচীন গাছ কোনটি, এই প্রশ্নের উত্তরে বিভিন্ন সময় বিতর্ক সামনে উঠে আসে। কয়েকবছর আগেও সেই জায়গায় ছিল ‘প্রমিথিউস’-এর নাম। কিন্তু বর্তমানে সেই গাছটি আর নেই। গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের তথ্য অনুযায়ী, এখন সেই জায়গাটি নিয়েছে ক্যালিফোর্নিয়ার হোয়াইট মাউন্টেনের এই গাছটি। চারদিকে পাথর, ঝোপঝাড় ও অন্যান্য উদ্ভিদের মধ্যে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে এটি। দূর থেকে দেখলে মনে হবে, কোনও ভাস্করের নিপুণ হাতে তৈরি কোনও শিল্প। ডালপালা শরীর জুড়ে এঁকেবেকে উঠে গিয়েছে। বাদামি রঙের মধ্যেও কতরকম তার বাহার। অদ্ভুত ব্যাপার হল, এই গাছে কোনও পাতা নেই। তবুও টিকে আছে এটি, কয়েক হাজার সাল ধরে।

আরও পড়ুন : সম্পত্তির মালিক, নিজের মালিক গাছ নিজেই! মন ভালো করা যে কাহিনি লুকিয়ে আড়ালে

বিজ্ঞানীরা বলেন, এই গাছটি মূলত ব্রিস্টলকোন পাইন প্রজাতির। জীববিজ্ঞানের পরিভাষায় এর নাম Pinus longaeva। আর সাধারণ মানুষের কাছে এটি ‘মেথুসেলাহ’। বাইবেলে বর্ণিত এই চরিত্রটি নাকি সবচেয়ে বেশিদিন জীবিত ছিলেন। আর এই গাছটিও তো তাইই। সেজন্যই এমন ডাকনাম। অবশ্য বিজ্ঞানসম্মত নামের মধ্যেই লুকিয়ে আছে এর আসল কারণ। গবেষকদের বক্তব্য, ব্রিস্টলকোন প্রজাতির গাছগুলি এমনিতেই অনেকদিন বাঁচে। যত খারাপ পরিবেশেই থাকুক না কেন, অত্যাধিক গরম, প্রবল ঠাণ্ডা, জলের সমস্যা – সমস্ত কিছুতেই বহাল তবিয়তে টিকে থাকে এরা। আর প্রকৃতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য একটু একটু করে বাড়তে থাকে। অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবরেটরি অফ ট্রি-রিং রিসার্চের গবেষকরা নিজেরাও এই গাছটির নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করেছেন। তাঁদেরও মতামত, এই গাছটির বয়স ৪৮৫০ বছরেরও বেশি।

প্রতিবছর স্রেফ এই গাছটিকে দেখতেই অনেকে ভিড় জমান। গাছটির চেহারাই বেশ রহস্যজনক। আর স্থানীয় মানুষদের মুখে আরও নানা মিথ ঘুরে বেড়ায়। অনেকেই বলেন, বহু বছর ধরে গাছটি এভাবেই দাঁড়িয়ে থেকে সবাইকে রক্ষা করছে। অতন্দ্র প্রহরীর মতো ঘুম নেই তার চোখে। বয়সের ভারে এখন পাতাগুলি ঝরে গিয়েছে। বিশ্বের অন্যান্য প্রান্তের আরও বেশকিছু গাছও প্রাচীনত্বের দাবি করে। কিন্তু মিথ, রহস্য আর বাস্তব অদ্ভুতভাবে মিলেমিশে হাজির হয়েছে এই গাছটির সামনে। মেথুসেলাহ গাছটি যেন বাইবেলের সেই মানুষটি; এখনও সে আরাল থেকে দেখে চলেছে সমস্ত কাণ্ডকারখানা।

More Articles