একটা ফুল কিনতেই খসছে লক্ষ লক্ষ টাকা! কেন আকাশছোঁয়া দাম এই সাদা পলাশের?
Rare white palash : জানা গিয়েছে মূলত পুরুলিয়ায় পাওয়া যাচ্ছে এই সাদা রঙের পলাশ ফুল। এই প্রথম বছর নয়, গত কয়েক বছর ধরেই সাদা পলাশ ফুটছে পুরুলিয়ার হুড়া গ্রামে। যদিও পুরুলিয়া ছাড়া আরও দুই জেলায় মিলছে এই বিরল শ্বেত প...
“বসন্তে ফুল গাঁথল আমার জয়ের মালা...”
বসন্ত মানে রং, বসন্ত মানেই ফুল। বছরের এই সময়টা বাতাসে সবুজের সমারোহ। যদিও বিশ্ব উষ্ণায়নের সময়ে দাঁড়িয়ে ঋতু নিয়ে সঠিক করে কিছুই বলা চলে না। বসন্ত না গ্রীষ্ম, তা বোঝা দায়! তবুও বসন্ত আসে, বছর বছর আসে। দোলের রঙে জাত চিনিয়ে যায় ঋতুরাজ। গাছে গাছে পলাশ ফোটে। আর এই পলাশের প্রসঙ্গ এলেই রাঙা পলাশের কথা মাথায় আসে আমাদের। কলকাতা এবং পার্শ্ববর্তী জেলায় কোথাও কোথাও অবশ্য হলুদ রঙের পলাশও দেখা যায়। তবে সাদা পলাশের দেখ বিশেষ মেলে না। সাদা পলাশ তাই হয় তো ডুমুরের ফুল! আর সহজলভ্য নয় যা কিছু, তার দাম চোকানোও যে বিশেষ সহজ কিছু হবে না তা অবশ্য যে কেউ ঠাহর করতে পারেন। সম্প্রতি এরকমই একটু খবরে বসন্ত সরগরম।
দোল আসার আগে আগেই আসে পলাশ। এবারেও এসেছে নিয়মমাফিক। তবে এবারের আকর্ষণীয় বিষয়টি হল শ্বেত পলাশ। জানা গিয়েছে মূলত পুরুলিয়ায় পাওয়া যাচ্ছে এই সাদা রঙের পলাশ ফুল। এই প্রথম বছর নয়, গত কয়েক বছর ধরেই সাদা পলাশ ফুটছে পুরুলিয়ার হুড়া গ্রামে। যদিও পুরুলিয়া ছাড়া আরও দুই জেলায় মিলছে এই বিরল শ্বেত পলাশ। বীরভূমের ময়ূরেশ্বর এবং নদীয়ার তেহট্ট, এই দুই জায়গার পলাশও ইতিমধ্যেই নজর কেড়েছে।
কিন্তু এই সব কিছুর মধ্যে সবচেয়ে অবাক করা বিষয়টি হল, জানেন কি ঠিক কত টাকা দাম উঠেছে এই ফুলের? অবাক লাগলেও এটাই সত্যি, বাজারে প্রায় কোটি টাকা ছুঁইছুঁই এই ফুল। ৮০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত দাম উঠেছে সাদা পলাশের। সামাজিক মাধ্যমেও এই গাছের ফুলের ছবি রীতিমতো ভাইরাল। দলের ছুটিতে পর্যটকদের আকর্ষণ কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে এই সাদা পলাশ। একঘেঁয়ে ভিড় এড়িয়ে ছুটি কাটাতে তাই অনেকেই বেছে নিচ্ছেন পুরুলিয়ার এই গ্রামকে। এক যোগে বিরল ফুলের দর্শনও হয়ে গেলে মন্দ নয়! এর জেরে একদিকে যেমন কৃষির উন্নতি হচ্ছে ঠিক তেমনই পাশাপাশি চাঙ্গা হয়ে উঠছে অর্থনীতিও।
বিরল বলার মূল কারণ হল, জানা গিয়েছে পুরুলিয়া জেলাতে মাত্র একটাই শ্বেত পলাশের গাছ অবশিষ্ঠ রয়েছে। তাই এত এত দাম এই ফুলের। পুরুলিয়ার উপ-উদ্যানপালন অধিকর্তা ড. সমরেন্দ্রনাথ খাঁড়া ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন, “শ্বেত পলাশ বিরল। হুড়ার গ্রামে একটি গাছ রয়েছে। ওই গাছ বাঁচিয়ে রাখতে হবে। বিষয়টি উদ্যানপালন বিভাগে জানানো হয়েছে। বনদপ্তর ও উদ্যানপালন বিভাগ চেষ্টা করছে এই গাছের বীজ বা অন্যান্য পদক্ষেপ নিয়ে গাছের সংখ্যা যাতে আরও বাড়ানো যায়।” গাছের কোনও রকম ক্ষতি করার চেষ্টা করলে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা হবে বলেও জানানো হয়েছে সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে।
আরও পড়ুন - ফুল ফোটে ১২ বছরে মাত্র একবার, কেবল এদেশেই! রহস্যময়ী নীলকুরিঞ্জিকে দেখতে কেন ছুটে আসেন মানুষ
সাধারণত বসন্তকালে বাংলায় যে পলাশ ফুল ফোটে তা চারটি ভিন্ন ভিন্ন রঙের হয়। রক্ত পলাশ বা রাঙা পলাশ অর্থাৎ লাল রঙের পলাশ। বাসন্তী বা হলুদ রঙের পলাশ, নীল রঙের পলাশ এবং এই শ্বেত পলাশ। এদের মধ্যে নীল রঙের পলাশ আর বাংলায় দেখা যায় না একেবারেই বিলুপ্ত সারিতে নাম উল্লেখ রয়েছে নীল পলাশের। হলুদ পলাশও দিন দিন কমে আসছে। মূলত লাল পলাশের আধিক্য দেখা যায়। তবুও মানুষের অত্যাচারে তাদেরও যে আর কদিন দেখা যাবে সে নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। আশা যাক সাদা পলাশের কথায়। নীল রঙের পলাশের পর এবার প্রায় বিলুপ্ত হতে বসা পলাশ হল এটি। তাই বন বিভাগের তরফে এই গাছের সংরক্ষণের দিকে এত নজর দেওয়া হয়েছে।
সাদা পলাশের বিজ্ঞানসম্মত নাম হল - Butea monosperma var alba। জেনে রাখা দরকার, পলাশ ফুল কিন্তু জোর করে গাছ থেকে টেনে ছিঁড়ে নেওয়া অপরাধ। এমনিতেই ঝড় যায় ফুল। মাটি থেকে কুড়িয়ে নেওয়াই এই ফুলের ধর্ম। সাদা পলাশের ক্ষেত্রেও এই মুহূর্তে যেগুলি বিক্রি হচ্ছে বাজারে তা এতটাই বিরল যে দাম চোকাতে লাখপতিদেরও অবস্থা কাহিল। এই গাছের বেশ কিছু ঔষধি গুণ আছে। এই শ্বেত পলাশ থেকে বন্ধ্যাত্ব দূরীকরণ, যৌন শক্তি বর্ধক ওষুধ তৈরি করা হয়। তার ওপর প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে, দুই মিলিয়েই এতটা দামি এই পলাশ গাছ। এই গাছের রসে থাকে গ্যালিক ও ট্যানিক মনে দুই রকমের অ্যাসিড। এই রস থেকে ক্যান্সার সহ অনেক দূরারোগ্য ব্যাধি নিরাময় সম্ভব। এছাড়াও ত্বকের জেল্লা ফেরাতে সাদা পলাশের জুড়ি মেলা ভার। এই গাছের কচি পাতার রস মাত্র ৬ থেকে ৭ চামচ জলে মিশিয়ে খেলেই শরীরে লাবণ্য ফিরে আসে। তাই সব মিলিয়েই দেদার জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এই বিরল পলাশ। এবছরের দোলে মূল আকর্ষণ শ্বেত পলাশ।

Whatsapp
