মোদীর মণিপুর সফর, শান্তি ফেরানোর প্রয়াস নাকি রাজনৈতিক কৌশল?

Narendra Modi Likely To Visit Manipur: মোদীর সফর শান্তি প্রক্রিয়ার প্রতিশ্রুতি হলেও, সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে গভীর বিভেদ এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা কী ভাবে মিটবে, সে প্রশ্ন থাকছেই।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সম্ভাব্য মণিপুর সফর নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে। ২০২৩ সালের মে মাসে মণিপুরে সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পর এটিই হতে চলেছে তাঁর প্রথম সফর। মণিপুরের স্বরাষ্ট্র দফতর ইতোমধ্যেই ৭ থেকে ১৪ সেপ্টেম্বর পুলিশ কর্মীদের ছুটি বাতিল করেছে। ফলে মনে করা হচ্ছে, এই সময়েই ওই সফরে হিংসাধ্বস্ত যেতে পারেন নরেন্দ্র মোদী। সূত্রের খবর, তিনি রাজধানী ইম্ফল ও সংঘর্ষে ক্ষতিগ্রস্ত চুরাচাঁদপুর পরিদর্শন করতে পারেন। তবে, এই সফর কি রাজনৈতিক কৌশল নাকি সত্যিই শান্তি ফেরানোর প্রয়াস, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকছে। কারণ, গত ৮৫০ দিন ধরে মণিপুর অশান্ত। এই সংঘর্ষে ২৬০ জনেরও বেশি প্রাণ হারিয়েছে, ৬০,০০০ মানুষ বাস্তুচ্যুত। মোদী সরকারের দীর্ঘ নীরবতা এই পরিস্থিতিতে কারও নজর এড়ায়নি।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মোদীর এই সফরের সাফল্য নির্ভর করছে দুটি বিষয়ের উপর: কুকি-জো গোষ্ঠীর সঙ্গে নতুন সাসপেনশন অব অপারেশনস (এসওও) চুক্তি এবং নতুন মুখ্যমন্ত্রীর নিয়োগ ও সরকার গঠন। কুকি-জো গোষ্ঠীগুলোর ছত্রছায়া সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ফ্রন্ট (ইউপিএফ) ও কুকি ন্যাশনাল অর্গানাইজেশন (কেএনও) ৩ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে নতুন এসওও চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য আমন্ত্রিত হয়েছে। ২০০৮ সালে প্রথম স্বাক্ষরিত এই চুক্তি অনুসারে, বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো নির্দিষ্ট ক্যাম্পে অস্ত্র জমা রাখে। ২০২৩ সালের মে মাসে রাজনৈতিক সমঝোতার প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেও সংঘর্ষের কারণে তা ভেস্তে যায়। কুকি-জো সম্প্রদায় পৃথক প্রশাসনের দাবি জানিয়ে আসছে। মৈতেই সম্প্রদায়ের বিরোধিতার মুখে পড়েছে তাদের দাবি। ২০২৪ সালে কেন্দ্র সরকার কুকি-জো গোষ্ঠীর সঙ্গে রাজনৈতিক আলোচনা পুনরায় শুরু করলেও, মৈতেই সমাজ এসওও চুক্তি বাতিলের দাবি তুলেছে।

আরও পড়ুন- মণিপুর অসুস্থ, রোগের খোঁজ রাখে না ভারতবর্ষ

২০২৪ সালে নয়াদিল্লিতে তিন দফা আলোচনায় কুকি-জো গোষ্ঠী বিধানসভা-সহ ইউনিয়ন টেরিটরির দাবি তুলেছিল। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ’র কাছে একটি খসড়া প্রস্তাব জমা পড়লেও সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক সাড়া মেলেনি। কুকি-জো’র পৃথক প্রশাসনের দাবি মেনে নিলে মৈতেই সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্ষোভ বাড়বে বলে বিজেপি ও কংগ্রেস সূত্র জানিয়েছে। ফলে আরও অশান্তি হতে পারে।

অন্য দিকে, মণিপুরে নতুন সরকার গঠনের প্রশ্নও জটিল। গত ফেব্রুয়ারিতে মুখ্যমন্ত্রী এন. বীরেন সিং পদত্যাগ করেন। তাঁর বিরুদ্ধে একটি অডিও টেপ প্রকাশিত হয়, যা এখন সুপ্রিম কোর্টের তদন্তাধীন। সুপ্রিম কোর্ট গত ২৫ অগাস্ট টেপটির সত্যতা যাচাইয়ের জন্য ন্যাশনাল ফরেনসিক সায়েন্স ইউনিভার্সিটিতে পাঠানোর নির্দেশ দেয়। টেপটি বীরেন সিংয়ের কণ্ঠের সঙ্গে ৯৩% মিলে যাওয়ার দাবি করেছে একটি বেসরকারি ল্যাব। ৪৮ মিনিটের ওই ক্লিপে বীরেন সিংয়ের কন্ঠে কুকি এলাকায় বোমা হামলার নির্দেশ শুনতে পাওয়া গিয়েছিল।

আরও পড়ুন- ২ ঘণ্টা ২০ মিনিটের ভাষণে ১০ মিনিট ঠাঁই মণিপুরের! মোদির মূল্যবান সময় যাচ্ছে কোথায়?

৬০ সদস্যের মণিপুর বিধানসভায় এনডিএ ৪৪ জন বিধায়কের সমর্থন দাবি করলেও, দলের অভ্যন্তরীণ বিভেদ সরকার গঠন প্রক্রিয়াকে ক্রমশ জটিল করে তুলেছে। বিজেপির দশজন কুকি বিধায়ক বীরেন সিংয়ের নেতৃত্বের সমালোচনা করেছেন। দলের একটি অংশ নতুন করে নির্বাচনের দাবি তুলেছে। এই আবহে মোদীর সফর শান্তি প্রক্রিয়ার প্রতিশ্রুতি হলেও, সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে গভীর বিভেদ এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা কী ভাবে মিটবে, সে প্রশ্ন থাকছেই। প্রশ্ন থাকছে, মোদী কি মৌনতার কার্যকারণ ব্যখ্যা করতে পারবেন? 

More Articles