ব্যালিস্টিক মিসাইলের থেকেও ভয়ানক! কতটা শক্তিশালী 'ক্লাস্টার বোমা'?
Cluster Bombs: ২০০৮ সালে ‘কনভেনশন অন ক্লাস্টার মিউনিশন’ নামে একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি হয়। সেখানেই ক্লাস্টার বোমার সংরক্ষণ, পরিবহণ বা ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) ইরান-ইজরায়েলের চলমান সংঘর্ষ আরও উদ্বেগ বাড়িয়েছে। ইজরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে, ইরান মধ্য ইজরায়েলের একটি জনবহুল এলাকায় ‘ক্লাস্টার বোম’ ব্যবহার করেছে। ইরান-ইজরায়েল সংঘাতে এর ব্যবহার এই প্রথম। প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের চেয়েও এই অস্ত্র ভয়ানক। ক্লাস্টার বোমা কী? কতটা শক্তিশালী এই বোমা?
দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর তথ্য অনুযায়ী, তেল আভিভের আজোর শহরতলিতে ওই বোমা পড়েছে। আপাতত কোনও হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। তবুও এই ধরণের ক্ষেপণাস্ত্রের ব্যবহারে ক্ষতির পরিমাণ তুলনামূলক অনেকটাই বেশি হয়। ক্লাস্টার বোমায় যে কোনও শহরে সাধারণ মানুষের ক্ষতির আশঙ্কা বেশি থাকে। ইরানের পদক্ষেপে তাই উদ্বেগ বেড়েছে।
ক্লাস্টার বোমা কী?
ক্লাস্টার বোমাকে ক্লাস্টার মিউনিশনও বলা হয়। এটি একটি বিস্ফোরক অস্ত্র যা ছোট বোমা, সাবমিউনিশন বা বোম্বলেট নামেও পরিচিত। আঘাত হানার আগে বিস্তৃত এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে এটি। রয়টার্সের বরাত দিয়ে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ড্যারিল কিমবল টাইমস অফ ইন্ডিয়াকে জানান, "ক্লাস্টার একটি ভয়াবহ যুদ্ধ অস্ত্র। বড়ো এলাকা ধ্বংস করার ক্ষমতা রয়েছে। বিশেষত বেসামরিক জনবহুল এলাকায় এই বোমা ব্যবহৃত হয়।"
‘ক্লাস্টার’ একটি ইংরেজি শব্দ। এর অর্থ হলো ‘একগুচ্ছ’। এই বোমার মূল আস্তরণের ভেতর থেকে একগুচ্ছ ছোট ছোট বোমা। ছোট হলেও এগুলি শক্তিশালী। উৎক্ষেপণের পর শূন্যেই খুলে যায় এই বোমার অস্ত্র-মুখ। এরপর ছোট ছোট বোমাগুলি বেরিয়ে এসে বিস্তীর্ণ অংশে ছড়িয়ে পড়ে। ইরানের ১৯ জুনের হামলার পর ইজরায়েলের সেনাবাহিনী তরফে জানানো হয়েছে, মাটি থেকে ৭ কিলোমিটার উচ্চতায় ক্লাস্টারের মুখ খুলেছিল। ইজরায়েলের সেনাবাহিনীর দাবি, অন্তত ২০টি বোমা বেরিয়ে এসেছিল। সেগুলি মধ্য ইজরায়েলে প্রায় আট কিলোমিটার পর্যন্ত এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে।
এই বোমাগুলি মাটিতে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিস্ফোরিত হয় না। কোনও কিছুর সংস্পর্শে এলে তবেই ঘটে বিস্ফোরণ। অর্থাৎ, জনবহুল এলাকা না হলে এবং কিছুর সংস্পর্শে না এলে দীর্ঘ দিন পর্যন্ত এই বোমা সক্রিয় থেকে যেতে পারে। যা সাধারণ মানুষদের জন্য দীর্ঘমেয়াদী ঝুঁকি তৈরি করে। জাতিসংঘের নিরস্ত্রীকরণ কার্যালয়ের মতে, ক্লাস্টার বোমা আকাশ থেকে অথবা ভূমি থেকেই নিক্ষেপ করা যেতে পারে। এটি ফুটবল মাঠের মতো বিশাল এলাকা জুড়ে বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে।
বোমাটি নিয়ে বিতর্ক কেন?
ক্লাস্টার বোমা নির্বিচারে ধ্বংস করতে পারে। এক বার ছোড়ার পর বোমাটি যদি বিস্ফোরিত নাও হয়, যদি কেউ বোমাটিকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায় তার আর উপায় নেই। মাটিতে দীর্ঘ ক্ষণ অবিস্ফারিত অবস্থায় থাকায় এর দীর্ঘমেয়াদি ঝুঁকি রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এর জন্যই ক্লাস্টার বোমা ব্যালিস্টিক মিসাইলের থেকেও ভয়ানক। মাটিতে আছড়ে পড়ার পরও যেহেতু বোমাটি বিস্ফোরিত হয় না এতে রাস্তাঘাটে চলাফেরা করার সময়ে অজান্তেই কেউ তার সংস্পর্শে চলে আসতে পারেন। সে ক্ষেত্রে অনেক বেশি প্রাণহানির আশঙ্কা থাকে।
এই বোমা কি নিষিদ্ধ?
ইজরায়েলি বাহিনীর এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা টাইম্স অফ ইজরায়েলকে জানিয়েছেন, ক্লাস্টার বোমার ভেতরে যে ছোট ছোট বোমাগুলি থাকে সেটি একক বোমা হিসাবে ভয়ানক নয়। কিন্তু একসঙ্গে এতগুলি বোমা পড়লে এবং অনেকটা এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে পড়লে ক্ষতির সম্ভাবনা অনেক বেশি। ইরানের অন্যান্য ব্যালিস্টিক মিসাইলের চেয়েও এগুলি ভয়ানক।
২০০৮ সালে ‘কনভেনশন অন ক্লাস্টার মিউনিশন’ নামে একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি হয়। সেখানেই ক্লাস্টার বোমার সংরক্ষণ, পরিবহণ বা ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। চুক্তিতে ১১১টি দেশ এবং ১২টি সংগঠন স্বাক্ষর করেছিল। তবে আমেরিকা, ইজরায়েল, ইরানের মতো প্রধান সামরিক শক্তির দেশগুলি এই চুক্তিতে রাজি হয়নি। ২০২৩ সালেও রাশিয়ার বিরুদ্ধে হামলায় ইউক্রেনকে ক্লাস্টার বোমা দিয়ে সহায়তা করেছিল আমেরিকা।
১৪ জুনের হামলার পর ইজরায়েলের হোম ফ্রন্ট কমান্ড জনস্বার্থে জারি করা একটি বিবৃতিতে বলা হয়, ‘‘সকালে আমরা এমন একটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মুখোমুখি হয়েছি, যা বিস্তীর্ণ এলাকায় ছোট ছোট অস্ত্র ছড়িয়ে দিতে সক্ষম। কিছু অস্ত্র এখনও সক্রিয় হিসাবে রাস্তায় পড়ে থাকতে পারে। ফলে রাস্তায় পড়ে থাকা কোনও বস্তুতে হাত দেবেন না। সন্দেহ হলেই আপৎকালীন নম্বরে ফোন করে খবর দিন।’’ হোম ফ্রন্ট-এর কমান্ড নাগরিকদের সতর্ক করতে বার্তা দিয়েছে, অবিস্ফোরিত বোমাগুলি এখনও বিস্ফোরিত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস-এ দাবি করা হয়েছে, ভিডিওগুলিতে বেশ কয়েকটি গর্ত দেখা গিয়েছে এবং সাবমেরিনের মতো অবিস্ফোরিত কিছু অস্ত্রও পাওয়া গিয়েছে।