প্রতি ১০ মিনিটে ১টি শিশুর মৃত্যু! ১০,০০০ মানুষের মৃত্যু গাজায়! আর কত?
Gaza Death Toll : এক বিবৃতিতে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, মৃতের সংখ্যা বেড়ে অন্তত ১০,০২২। এই মৃতের মধ্যে ৪,১০৪ জনই শিশু।
যুদ্ধের ১ মাস অতিক্রান্ত। যুদ্ধবিরতির কোনও লক্ষণও নেই গাজা উপত্যকায়। এক মাস ধরে চলা নিরলস ইজরায়েলি হামলায় গাজায় ১০,০০০ জনেরও বেশি মানুষের প্রাণ গিয়েছে। এক বিবৃতিতে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, মৃতের সংখ্যা বেড়ে অন্তত ১০,০২২। এই মৃতের মধ্যে ৪,১০৪ জনই শিশু। অনেক ফিলিস্তিনিই এখনও ধ্বংসস্তূপের নীচে আটকা পড়ে রয়েছে। ইজরায়েল জ্বালানি, খাদ্য, পানীয় জল এবং বিদ্যুতের মতো গুরুত্বপূর্ণ পণ্য ও পরিষেবা সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়াতে গাজার বেঁচে থাকা মানুষদের অবস্থাও তথৈবচ।
এই মৃত্যুর সংখ্যা যে আরও বাড়বে তা নিয়ে সংশয় নেই। কমপক্ষে হাজার দুয়েক মানুষ এখনও বোমা হামলায় গুঁড়িয়ে যাওয়া বাড়ির ধ্বংসস্তূপের নিচে রয়ে গেছে। ভারী সরঞ্জাম এবং যন্ত্রপাতির অভাবের কারণে, উদ্ধারকারী দলগুলিও ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়া মানুষ, মৃতদেহগুলিকে বের করে আনতে পারছে না।
৭ অক্টোবর থেকে গাজায় বোমাবর্ষণ শুরু করেছে ইজরায়েল। এই হামলায় গাজাতে আহতদের সংখ্যা বেড়ে ২৫,৪০৮। স্বাস্থ্য মন্ত্রক বলছে, ইজরায়েল গত কয়েক ঘণ্টায় ১৮টি হামলা চালিয়েছে, তাতে ২৫২ জন মানুষের প্রাণ গেছে। ব্রিটিশ সংস্থা মেডিক্যাল এইড ফর প্যালেস্টাইনিয়ানস বলেছে, সাধারণ মানুষের বাড়ি, হাসপাতাল, শরণার্থী শিবির এবং স্কুলে পর্যন্ত ইজরায়েলের নির্বিচারে বোমাবর্ষণ করেছে। যার ফলশ্রুতি, এই ১০ হাজার মানুষের লাশ।
আরও পড়ুন- ভাঙা হুইলচেয়ার, কানে আসে না বোমার শব্দ! কেমন আছেন গাজার ৯৩,০০০ বিশেষভাবে সক্ষম মানুষ?
ইজরায়েল বলছে, ফিলিস্তিনি জঙ্গিগোষ্ঠী হামাসকে নিশ্চিহ্ন করতেই এই হামলা চালিয়ে যাবে তারা। যুদ্ধবিরতির কোনও প্রশ্নই নেই কারণ যুদ্ধবিরতি মানে হামাসের কাছে আত্মসমর্পণ করা। গত ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইজরায়েলে রকেট হামলা চালিয়েছিল হামাস। তাতে ১৪০০-রও বেশি মানুষের প্রাণ যায়। এই হামলার বদলা নিতে গিয়ে, গাজার ১০ হাজার মানুষকে শেষ করে দিল ইজরায়েল। আর কত? প্রশ্ন করছেন গাজার মানুষ, বিশ্বের সংবেদনশীল মানুষরাও হাঁ হয়ে গেছেন ইজরায়েলের এই নৃশংস বোমাবর্ষণ দেখে।
জ্বালানি সরবরাহ কম থাকায়, গাজার ৩৫টি হাসপাতালের মধ্যে ১৬টিই বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন চিকিৎসকরা। আহতদের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, এই এত মানুষের সেবা করার মতো রসদও নেই গাজায়। রাষ্ট্রসঙ্ঘ জানিয়েছে, ১৫ লক্ষেরও বেশি মানুষ গৃহহীন, গাজার জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি মানুষ শরণার্থী।
গাজার অবস্থার ক্রমেই অবনতি হওয়ায় এবং মৃতের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়তে থাকায় যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানানো হয়েছিল। অক্টোবরের শেষের দিকেই রাষ্ট্রসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদ অবিলম্বে মানবিক যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে ভোটাভুটি ডাকে।
ইজরায়েল এবং ইজরায়েলের সবচেয়ে শক্তিশালী মিত্রশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র- যুদ্ধবিরতির আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছে। ইজরায়েল ও আমেরিকা বলছে, যুদ্ধ থামলেই হামাস ফের সংগঠিত হবে। হামাসকে ঠেকানোর নামে এত এত সাধারণ মানুষের প্রাণ? "আপনারা এই হরর মুভিটি উপভোগ করছেন তো?” বিশ্ব নেতাদের প্রশ্ন করেছেন আল-শাতি শরণার্থী শিবিরের বাসিন্দা জাক হানিয়া। দুই রাষ্ট্রের দুই সশস্ত্র বাহিনীর লড়াইয়ে এত সাধারণ মানুষের হত্যা? সাধারণ মানুষ তো যুদ্ধবিরতিই চেয়েছে। যুদ্ধবিরতি মানবিক এক অধিকারও। যুদ্ধে অবশ্য কবেই বা অধিকার রক্ষিত হয়েছে!