বিয়েতে খরচ ৫০০ কোটি! ভারতের সবচেয়ে দামি বিয়ের উপহার শুনলে চোখ উঠবে কপালে!
Expensive Indian Weddings: ২০১৬ সালে, কর্ণাটকের প্রাক্তন মন্ত্রী জনার্ধন রেড্ডির মেয়ের বিয়েতে ৫০০ কোটিরও বেশি টাকা খরচ করা হয়েছিল।
বিয়ে। ভারতের বাজারে চিরকাল জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা একটি বন্দোবস্ত! সারা জীবনের অনন্ত অভাবের মধ্যেও মানুষ বিয়েকে এক্কেবারে ঝকমকে করে দেখতে চান। বিয়ের জোগাড়যন্ত্র করতে গিয়ে ঘুম উড়ে যায়। জীবনের 'নতুন ইনিংস' বলেও ডাকেন অনেকে। নতুন চাকরি পাওয়া, নতুন গবেষণা, নতুন ব্যবসা ইত্যাদি জীবনের নতুন ধাপ না হলেও, বিবাহ তার জনপ্রিয়তার জেরেই জীবনের নতুন অধ্যায় হয়ে যায়। যে অধ্যায়ের প্রকাশ ও প্রচার যত বেশি সেই বিয়ের বাজার দরও ততই প্রভূত! সৌজন্যে বলিউড। পর্দায় ঝাঁ চকচকে বিয়ে দেখতে দেখতে মানুষ নিজের সেই 'নয়া ইনিংস'কে ঢেলে সাজাতে চান- ঠিক যেমনটি তারকারা করে থাকেন। তবে তারকাদের থেকে টুকব বললেই তো টোকা যায় না। বিলাসবহুল সাজসজ্জা থেকে শুরু করে দামি উপহার- ভারতের বিয়েতে এমন এমন নজির রয়েছে যা ভাঙা আম ভারতীয়ের পক্ষে সম্ভবই না। ভারতে এমন সব বিয়ে ঘটেছে, যার এক একটিতে নিমন্ত্রিতের তালিকা অনেক দেশের জনসংখ্যার কাছাকাছি! সেইসব বিয়েতে যা উপহার দেওয়া হয়েছে তা দেখলে কেই বা বলবে ভারতবর্ষ তৃতীয় বিশ্ব! ভারতে বলিউড তারকাদের বিয়েই কেবল নয়, বেশ কিছু শিল্পপতি, রাজনীতিবিদদের পরিবারের বিয়ের বন্দোবস্ত শুনলে বুক চিনচিন করে ওঠা স্বাভাবিক।
২০১৬ সালে, কর্ণাটকের প্রাক্তন মন্ত্রী জনার্দন রেড্ডির মেয়ের বিয়েতে ৫০০ কোটিরও বেশি টাকা খরচ করা হয়েছিল। বিশাল শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত তাঁবুর প্রবেশদ্বারের কাছে দু'টি বড় হাতির ইলিউশন মাথা নেড়ে অতিথিদের সম্ভাষণ জানিয়েছিল। ৩০ একর জায়গা জুড়ে বিয়ের আসর বসে। এক্কেবারে বলিউড সিনেমার সেট বসানো হয়েছিল যেন বিয়েতে। বিয়ের অতিথির সংখ্যা শুনলে বুকে ব্যথাও হতে পারে। এই বিয়েতে ৫০,০০০ অতিথি নিমন্ত্রিত ছিলেন। ৩,০০০ নিরাপত্তারক্ষী এবং বাউন্সারও মোতায়েন করা হয়েছিল।
আরও পড়ুন- বিয়ের পর ৩ দিন শৌচাগার ব্যবহার নিষিদ্ধ! পেট খারাপ হলেও বদলায় না যে আজব রীতি!
২০১৮ সালে আনন্দ পিরামলের সঙ্গে মুকেশ আম্বানির মেয়ে ইশার বিয়ে প্রাক-বিবাহের অনুষ্ঠানের অংশ হিসাবে উদয়পুরে গান গাইতে এসেছিলেন বিয়ন্সে! হলিউড সঙ্গীতশিল্পী ব্যক্তিগত কনসার্ট করছেন আম্বানির বাড়ির বিয়ের অনুষ্ঠানে! ভাবা যায়! ১০০ টিরও বেশি চার্টার্ড ফ্লাইটে অতিথিদের উদয়পুর বিমানবন্দরে নিয়ে আসা হয়। অতিথিদের মধ্যে ছিলেন প্রাক্তন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন। লক্ষ্মী মিত্তল, ভারতীয় জনতা পার্টির নেতা দেবেন্দ্র ফড়নবিস, ক্রিকেট কিংবদন্তি সচিন তেন্ডুলকার এবং প্রিয়াঙ্কা চোপড়া, নিক জোনাসও ছিলেন বিশেষ অতিথি।
২০১১ সালে, কংগ্রেস নেতা কানওয়ার সিং তানওয়ারের ছেলে ললিত হরিয়ানার জৌনাপুর গ্রামে সোহনার প্রাক্তন বিধায়ক সুখবীর সিং জৌনাপুরিয়ার মেয়ে যোগিতাকে বিয়ে করেন। ওই বিয়ের অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রিত ছিলেন প্রায় ১৫,০০০ মানুষ। এই বিয়েতে উপহারের মধ্যে ছিল একটি হেলিকপ্টার এবং ২১ কোটি টাকা। গায়ে হলুদ বিয়ে আর বৌভাতে মিটে যায়নি ব্যাপারটা। এক সপ্তাহ ধরে বিয়ের অনুষ্ঠান চলেছিল। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত লোকশিল্পীদের গান নাচে বোঝাই দায় ছিল আসলে বিয়ের অনুষ্ঠান না কি সাংস্কৃতিক উৎসব! এই বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকল অতিথিদের একটি প্যাকেট দেওয়া হয় উপহার হিসেবে। সেই উপহারের মধ্যে একটি ৩০-গ্রাম রুপোর বিস্কুট, একটি সাফারি স্যুট সেট, একটি শাল এবং নগদ ২,১০০ টাকাও ছিল।
আরও পড়ুন- সিএএ বিরোধিতায় গিয়ে প্রেম, রাজনীতি-সিনেমাকে যেভাবে জুড়ল স্বরা ভাস্কর, ফাহাদ আহমেদের বিয়ে
এর বেশ কয়েক মাস পরে, নিউজিল্যান্ডের বিখ্যাত ব্যবসায়ী এস রবীন্দ্র তাঁর ছেলে এস রোহিত এবং এস রঞ্জিতের জন্য হায়দরাবাদে বিয়ের আয়োজন করেন। দক্ষিণ ভারতের সবচেয়ে ব্যয়বহুল বিয়ে ছিল এইটিই। এই দুই ভাই বিয়ে করেন শ্রুতি এবং দিব্যাকে, যারা আবার নিজেরাও দুই খুড়তুতো বোন। মঙ্গলসূত্রের জন্য প্ল্যাটিনাম এবং সোনার চেন দেওয়া হয়েছিল উপহার হিসেবে। মণীশ মালহোত্রার তৈরি পোশাক পরেছিলেন দুই কনে। হায়দরাবাদের জিএমআর গার্ডেনে এই বিয়েতেও অতিথি ছিলেন ১৫,০০০! এই বিয়েতে আবার ছিল দুর্গাপুজোর মতো থিম! দেশের বিভিন্ন ঐতিহ্যের প্রদর্শনী হয়েছিল বিয়েতে। বাঙালি, রাজস্থানি, পঞ্জাবি সংস্কৃতি এবং যোধা আকবর, আন্ডারওয়াটার এবং আরাবিয়ান নাইটসের মতো থিম তৈরি হয়েছিল বিয়ের অনুষ্ঠানের স্থলে। গোলাপি মার্সিডিজে কনেদের শহর ঘোরানো হয়েছিল।
বলিউড তারকা প্রিয়াঙ্কা চোপড়া এবং গায়ক নিক জোনাস ২০১৮ সালে বিয়ে করেন। উদয়পুরের উম্মেদ প্রাসাদে এই বিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল এবং পুরোটা সামলাতে ১০৫ কোটি টাকা খরচ হয়। অভিনেত্রী অনুষ্কা শর্মা এবং ক্রিকেটার বিরাট কোহলির বিয়েতে ৯০ কোটি টাকা খরচ হয়েছিল।