বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত ৫০ টি শহরের মধ্যে ৩৯ টিই ভারতে! যে ভয়াবহ ইঙ্গিত দিচ্ছে সমীক্ষা
World's Most Polluted Cities: সবচেয়ে দূষিত ১০০ টিরও বেশি শহরের মধ্যে ৭২টিই দক্ষিণ এশিয়ায়। এই সমস্ত শহরগুলি মূলত ভারত, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের।
২০২২ সালে ভারত ছিল বিশ্বের অষ্টম সবচেয়ে দূষিত দেশ। তারও আগে ছিল ভারত ছিল দূষিত দেশের তালিকায় পঞ্চম স্থানে। যদিও PM 2.5-এর মাত্রা ৫৩.৩ মাইক্রোগ্রাম/ঘন মিটারে নেমে এসেছে ঠিকই তবে তা এখনও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিরাপদ সীমার চাইতে ১০ গুণ বেশি! মঙ্গলবার 'ওয়ার্ল্ড এয়ার কোয়ালিটি রিপোর্ট'-এ বাতাসে PM 2.5 এর স্তরের উপর ভিত্তি করে তৈরি হওয়া একটি তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। ১৩১টি দেশের তথ্য নেওয়া হয়েছে ৩০,০০০ টিরও বেশি গ্রাউন্ড মনিটর থেকে। আর এই তালিকায় ভারতীয় শহরগুলির অবস্থান জানলে শিউরে উঠতে হয়! ৭,৩০০টিরও বেশি শহরের মধ্যে ভারতের শহরগুলির অবস্থান ঠিক কেমন?
তার আগে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখা দরকার। ভারতে PM 2.5 দূষণের ২০ থেকে ৩৫ শতাংশই ঘটে যানবাহনের মাধ্যমে। দূষণের অন্যান্য উৎসগুলি হলো শিল্প কারখানা, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং বায়োমাস দহন। পাকিস্তানের লাহোর এবং চিনের হোতান বিশ্বের দু'টি সবচেয়ে দূষিত শহর। চতুর্থ স্থানেই রয়েছে রাজস্থানের ভিওয়াদি এবং দিল্লি। দিল্লির PM 2.5 মাত্রা নিরাপদ সীমার চেয়ে ২০ গুণ বেশি, ৯২.৬ মাইক্রোগ্রাম।
সবচেয়ে দূষিত ১০ টি শহরের মধ্যে ছয়টিই ভারতীয় শহর। সবচেয়ে দূষিত ২০ টির মধ্যে ১৪ টিই, আর সবচেয়ে দূষিত ৫০ টির মধ্যে ৩৯ টি এবং সবচেয়ে দূষিত ১০০টির মধ্যে ৬৫ টিই ভারতীয় শহর৷ দিল্লি এখনও পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত রাজধানী ছিল ঠিকই কিন্তু এই বছরের প্রতিবেদন 'বৃহত্তর' দিল্লি এবং রাজধানী নয়াদিল্লির মধ্যে পার্থক্য তৈরি করেছে। দু'টিই সবচেয়ে দূষিত ১০ টি শহরের মধ্যে রয়েছে, তবে নয়াদিল্লি আছে দ্বিতীয় স্থানে। বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত রাজধানী হচ্ছে চাদের এন'জামেনা। এন'জামেনার জনসংখ্যা এক মিলিয়নেরও কম, আর নয়াদিল্লির জনসংখ্যা চার মিলিয়নের বেশি!
আরও পড়ুন- দূষণে নাভিশ্বাস, রাজধানী দিল্লি পরিত্যক্ত নগরীতে পরিণত হবে?
দিল্লির পাশের শহর গুরুগ্রাম, নয়ডা, গাজিয়াবাদ এবং ফরিদাবাদে দূষণের মাত্রা হ্রাস পেয়েছে - গুরুগ্রামে ৩৪ শতাংশ, ফরিদাবাদে ২১ শতাংশ কমেছে দূষণ। কিন্তু এই শহরগুলিতে দূষণের প্রকৃত মাত্রা ভারতীয় গড় দূষণের মাত্রার থেকে অনেক বেশি। ২০২২ সালে গাজিয়াবাদের PM 2.5-এর গড় ছিল ৮৮ মাইক্রোগ্রামের বেশি, গুরুগ্রামে ৭০। এই ধরনের দীর্ঘস্থায়ী উচ্চ মাত্রার দূষণে, সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে রয়েছে শিশুরা কারণ তাদের ফুসফুস এখনও ভালোভাবে তৈরিই হয়নি। বয়স্ক এবং অসুস্থ ব্যক্তিরা, বিশেষ করে যাদের হাঁপানি, ক্যান্সার এবং ডায়াবেটিস রয়েছে তারাও প্রবল ঝুঁকির মুখে রয়েছেন।
মজার বিষয় হলো, প্রায় ৩১টির মতো শহরে দূষণের মাত্রা দ্বিগুণ মাত্রায় হ্রাস পেয়েছে। এর মধ্যে ১০টি শহর উত্তরপ্রদেশের এবং ৭টি হরিয়ানার। সবচেয়ে বেশি দূষণ কমেছে আগ্রায়, ৫৫ শতাংশ! ২০১৭-২০২১ সালের মধ্যে গড় PM 2.5 ছিল ৮৫ মাইক্রোগ্রাম। ২০২২ সালে প্রতি ঘনমিটারে মাত্র ৩৮ মাইক্রোগ্রাম ছিল PM 2.5। অন্যদিকে, ৩৮টির মতো শহরে আগের বছরের তুলনায় দূষণ বেড়েছে।
অন্যান্য মহানগরীগুলির মধ্যে, দিল্লির পরেই কলকাতা সবচেয়ে দূষিত, তবে ফারাক অনেকটা। চেন্নাই সেই তুলনায় অনেকটাই পরিচ্ছন্ন নগরী, WHO-এর নিরাপদ স্তরের চেয়ে মাত্র ৫ গুণ বেশি সেখানের দূষণ। ২০১৭ সালের থেকে দূষণের মাত্রা গড়ের চেয়ে বেড়েছে হায়দরাবাদ এবং বেঙ্গালুরুতে।
সবচেয়ে দূষিত ১০০ টিরও বেশি শহরের মধ্যে ৭২টিই দক্ষিণ এশিয়ায়। এই সমস্ত শহরগুলি মূলত ভারত, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের। দক্ষিণ এশিয়াকে বায়ু দূষণের কেন্দ্রবিন্দু মনে করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও। বর্তমানে, PM 2.5 এর দূষণের কারণে এই অঞ্চলে দুই মিলিয়নেরও বেশি মানুষের অকাল মৃত্যু হচ্ছে।