তারকাদের মেলা! মুম্বইয়ের যে যে দুর্গাপুজোর গ্ল্যামার চোখ ধাঁধিয়ে দেয় আজও
Durgapuja 2022: কলকাতার পাশাপাশি মুম্বইতেও এখন তুঙ্গে দুর্গাপুজোর শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।
যেখানেই বাঙালি পদার্পণ করেছে, সেখানেই সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছে তার সংস্কৃতি। বাঙালি সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ দুর্গাপুজো। দুর্গাপুজোর আনন্দ কোনও সীমানা মানে না। আশ্বিন মাসে পৃথিবীজুড়ে ছড়িয়ে থাকা বাঙালির মনে ঢেউ তোলে মা দুর্গার মর্তে আগমন। পৃথিবীর যেখানেই বাঙালিরা জড়ো হন, সেখানেই গড়ে ওঠে ক্লাব, আর কমবেশি সব ক্লাবেই পালিত হয় দুর্গাপুজো। তার মধ্যে ব্যতিক্রম নয় ভারতের বাণিজ্যনগরী মুম্বই। মুম্বইয়ের সব উৎসবই খুব ধুমধাম করে পালিত হয়। ব্যতিক্রম নয় দুর্গাপুজোও। কলকাতার পাশাপাশি মুম্বইতেও এখন তুঙ্গে দুর্গাপুজোর শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।
অভিজিৎ-এর পুজো
১৯৯৬ সালে মুম্বইয়ের লোখান্ডওয়ালায় কিছু স্থানীয় বাঙালি পরিবার শুরু করে দুর্গাপুজো। উদ্দেশ্য ছিল, নিজেদের ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখা এবং তা পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে সঞ্চারিত করা। আজও স্বমহিমায় দাঁড়িয়ে আছে লোখান্ডওয়ালার দুর্গাপুজো। এই পুজোর প্রধান উদ্যোক্তা হলেন জনপ্রিয় গায়ক অভিজিৎ ভট্টাচার্য। তাই স্থানীয় মানুষ এই পুজোকে অভিজিৎ-এর দুর্গাপুজো বলে ডাকেন। মায়ের বোধন থেকে বিদায়- সমস্তটাই দায়িত্ব সহকারে পালন করে থাকেন জনপ্রিয় এই সংগীতশিল্পী। অভিজিতের পুজোয় অন্যতম মূল আকর্ষণ সিঁদুর খেলা। এই উৎসবে নবীন-প্রবীণ মিলে এক হয়ে যায় বলিউড। প্রতিবারের মতো এবারও দুর্গাপুজোয় অভিজিৎ ভট্টাচার্যর বাড়িতে আসর বসতে চলেছে তারকাদের।
রানি-কাজলের পুজো
মুম্বইয়ের পুজোর কথা বললে উল্লেখ করতেই হয় নর্থ বম্বে সার্বজনীন দুর্গাপুজোর। মুম্বইয়ের অন্যতম প্রাচীন পুজো এটি। এই পুজোটি ১৯৪৮ সালে শশধর মুখোপাধ্যায় প্রথম শুরু করেছিলেন। এখন অবশ্য এটি আর কোনও সার্বজনীন পুজো নয়, বর্তমানে এটি 'মুখার্জিবাড়ির দুর্গাপুজো' নামে পরিচিত। এটি বিখ্যাত রানি মুখার্জি এবং কাজলের পুজো হিসেবে। পুজোর চারটে দিন তারকাদের জমায়েত দেখা যায় পুজোমণ্ডপে। মুখার্জিবাড়ির পুজোর অন্যতম দুই আকর্ষণ বলিউডের দুই জনপ্রিয় অভিনেত্রী কাজল এবং রানি মুখার্জি। প্রত্যেক বছরই পুজোর কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তাঁরা। প্রতিমা তৈরি থেকে পুজোর অন্যান্য আয়োজন এবং ভোগ বিতরণ, সবই নিজেরা দাঁড়িয়ে থেকে তদারক করেন রানি মুখার্জি এবং কাজল। বর্তমানে এই পুজো মুম্বইয়ের অন্যতম এক আবেগ। প্রতি বছর এই পুজোয় প্রসাদ নিতে আসেন বচ্চন থেকে কাপুর সকলে। এছাড়াও প্রতি বছর পুজোমণ্ডপে অয়ন মুখার্জি, তানিশা মুখার্জি, কিংবদন্তি অভিনেত্রী তনুজা, অজয় দেবগণ, রণবীর কাপুর, আলিয়া ভাট, হৃতিক রোশন, ভাগ্যশ্রী, আদিত্য চোপড়া, করণ জোহর-সহ অন্যান্য অনেক সুপারস্টারকেই দেখা যায়।
আরও পড়ুন: সাবর্ণদের ৪১৩ বছরের দুর্গাপুজো! পোড়া ল্যাটা মাছের ভোগে আজও অমলিন দুর্গার আরাধনা
এ তো গেল মুম্বইয়ের তারকাদের পুজোর কথা। তবে তারকাদের পুজো ছাড়াও মুম্বইতে কিন্তু বেশ কয়েকটি নামিদামি বারোইয়ারি পুজোও রয়েছে। আসুন সেগুলি সম্বন্ধে জেনে নেওয়া যাক।
বেঙ্গল ক্লাবের পুজো
এছাড়াও মুম্বইয়ের পুজোর অন্যতম আকর্ষণ বেঙ্গল ক্লাবের পুজো। প্রতি বছর মুম্বইয়ের শিবাজী পার্কে অনুষ্ঠিত হয় পুজোটি। এ-বছর ১০০ বছরে পদার্পণ করল এই জনপ্রিয় বারোয়ারি পুজো। ১৯২২ সালে ভারতের বাণিজ্যনগরী তৎকালীন বম্বেতে বসবাসকারী কয়েকজন প্রবাসী বাঙালি মিলে গড়ে তুলেছিলেন বেঙ্গল ক্লাব। সেই থেকেই প্রতি বছর দুর্গাপুজোর আয়োজন হচ্ছে। এই পুজোর অন্যতম আকর্ষণ হলো বাংলার ঐতিহ্যবাহী কুটির ও হস্তশিল্পের প্রদর্শনী। এই হাই বাজেটের দুর্গাপুজোয় প্রতি বছর ভিড় হয় লাগামছাড়া। শিবাজী পার্কে অনুষ্ঠিত এই পুজোয় মা দুর্গার আরাধনার পাশাপাশি হস্তশিল্পর মেলা, অন্যান্য অনেক খেলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ইত্যাদি আয়োজন করা হয় প্রতি বছর। এছাড়াও এই পুজোর অন্যতম আকর্ষণ পুজোর ভোগ। বলিউডের নামজাদা সেলিব্রিটিরা আসেন এই পুজোয় ভোগ খেতে।
বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়েশনের পুজো
নভি মুম্বই বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়েশনের দুর্গাপুজো মুম্বইয়ের অন্যতম ক্রাউডপুলার। এই ক্লাবটি মুম্বইয়ের অন্যতম সমৃদ্ধ বাঙালি ক্লাব। ১৯৮১ সালে শুরু হওয়া এই পুজো বর্তমানে সারা দেশে বিখ্যাত। বারো মাসে তেরো পার্বণ আক্ষরিক অর্থেই পালন করে এই ক্লাবটি। আড়ম্বর এবং সুবিশাল ব্যবস্থাপনার জন্যই এর খ্যাতি। সুবিশাল ও সুসজ্জিত প্রতিমা, তিনদিন ধরে দুপুরে ভোগ বিতরণ, সন্ধ্যায় বলিউডের নামজাদা শিল্পীদের নিয়ে আনন্দানুষ্ঠান, পুজো প্রাঙ্গণে বিভিন্ন রকম স্টল, বিজয়ার দিন সিঁদুরখেলা, বিসর্জনের শোভাযাত্রা- সব মিলিয়ে একদম জমজমাট পুজো যাকে বলে। প্রতি বছর দুর্গাপুজোর পাশাপাশি, এই ক্লাব সরস্বতী পুজো, কালীপুজো, খেলাধুলো, বাংলা নববর্ষ, রবি ঠাকুরের জন্মদিন, শিল্পকলা ইত্যাদির মতো অনেক বার্ষিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে। এখানে বিশাল দুর্গাপুজো উদযাপন ছাড়াও সংগীত ও নৃত্য প্রতিযোগিতা আয়োজিত হয়। এছাড়াও নভি মুম্বইয়ের কাছে ভাশিতে অনুষ্ঠিত হয় ভাশি কালচারাল অ্যাসোসিয়েশনের দুর্গাপুজো। ২০০৫ সাল থেকে শুরু হওয়া এই পুজোর উদ্দেশ্যই হলো তরুণ প্রজন্মকে ভারতীয় সংস্কৃতির সঙ্গে অবগত করানো।
বান্দ্রার পুজো
মুম্বইয়ের অন্যতম জনপ্রিয় বারোয়ারি দুর্গাপুজো হলো নতুন পল্লী সর্বজনীন দুর্গোৎসব, যাকে ‘বান্দ্রা দুর্গাপুজো’-ও বলা হয়। নামে বারোয়ারি হলেও এই পুজোর পৃষ্ঠপোষকতা বরাবরই সেলিব্রিটিরা করে এসেছেন। বান্দ্রায় প্রমোদ চক্রবর্তী, শক্তি সামন্ত এবং বাসু চ্যাটার্জির উদ্যোগে ১৯৭৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল নতুনপল্লী সর্বজনীন। বান্দ্রায় তারাই প্রথম শুরু করেন দুর্গাপুজো। পরবর্তীকালে মান্না দে, কিশোর কুমার, অমিতাভ বচ্চন, রেখা, আশা ভোঁসলে, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, আর ডি বর্মন-সহ প্রথম সারির সুপারস্টার এবং শিল্পীরা পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন এই পুজোর।
খারে রামকৃষ্ণ মঠ
তবে এইসব দুর্গাপুজোর থেকে একদম আলাদাভাবে পালিত হয় মুম্বইয়ের খারে এলাকার রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের দুর্গাপুজো। এই মঠটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৩২ সালে। বিনামূল্যে সুবিশাল লাইব্রেরি এবং দাতব্য চিকিৎসালয়ের জন্য বিখ্যাত এই মঠ। দুর্গাপুজো উপলক্ষে একদম আড়ম্বরহীনভাবে এঁরা প্রতি বছর বিনামূল্যে চক্ষুপরীক্ষা, স্বাস্থ্যপরীক্ষা, রক্তদান শিবির, ত্বকের চিকিৎসা শিবির, ডেন্টাল ক্যাম্প এবং অনেক গ্রামীণ উন্নয়ন শিবিরের আয়োজন করে থাকেন। এই স্বাস্থ্য শিবিরগুলিতে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে উচ্চমানের চিকিৎসা করাতে পারেন সাধারণ মানুষ।
এছাড়াও মুম্বইয়ের কিছু জনপ্রিয় বারোয়ারি দুর্গাপুজো হলো- পাওয়াই বেঙ্গলি ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের দুর্গাপুজো, কান্দিভালির ঠাকুরগ্রামের হিলসাইড রেসিডেন্টস কালচারাল অ্যান্ড ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের দুর্গাপুজো, জুহু সার্বজনীন দুর্গোৎসব, থানের বঙ্গীয় পরিষদের দুর্গাপুজো, চেম্বুরের দুর্গাপুজো, বম্বে দুর্গাবাড়ি সমিতির দুর্গাপুজো, মালাড ওয়েস্ট সার্বজনীনের দুর্গাপুজো। আপনি যদি কোনও কারণে এই বছর পুজোয় মুম্বইতে থাকেন, তাহলে অবশ্যই দেখে আসবেন এই পুজোগুলো, তবে মাথায় রাখবেন- ভিড় কিন্তু কলকাতার থেকে কোনও অংশে কম হয় না এই পুজোগুলিতে।