মুর্শিদাবাদ হিংসা পূর্বপরিকল্পিত! মমতার নিশানায় নেপথ্যে কারা?
Mamata Banerjee on Murshidabad: মমতা এদিন বলেছেন, "বিএসএফ সেদিন গুলি না চালালে পরদিন অশান্তির ঘটনা ঘটত না। আপনারা কী লোকাতে চেয়েছেন?"
এখন ঈষৎ শান্ত মুর্শিদাবাদ। সপ্তাহখানেক আগেই ওয়াকফ আইন নিয়ে অসন্তোষের জেরে অশান্ত হয়ে উঠেছিল এই জেলার ধুলিয়ান এবং সামসেরগঞ্জ। মৃত্যু, আগুন, পাড়ায় পাড়ায় উত্তেজনা সব বেশ কিছুটা থিতিয়ে যাওয়ার পর মুর্শিদাবাদ সফরে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, এই অশান্তি পূর্বপরিকল্পিত।
বহরমপুর থেকে মুর্শিদাবাদের অশান্তির কারণ ব্যাখ্যা করছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, “গণ্ডগোল কারা করিয়েছেন, সবাই জানে। এরা নাকি ধর্মের নেতা! মুর্শিদাবাদে কী হয়েছিল আমার কাছে প্রমাণ রয়েছে। তবে আরও কিছু প্রমাণ হাতে আসবে। তারপর সব সকলের সামনে তুলে ধরব।” নাম বা দল উল্লেখ না করলেও, মুখ্যমন্ত্রীর ইঙ্গিত যে আসলে কেন্দ্রের শাসকগোষ্ঠী বিজেপি-র দিকে তা বেশ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে বলেই মত রাজনৈতিক মহলের একাংশের।
ধুলিয়ান এবং সামসেরগঞ্জের অশান্তি প্রসঙ্গে ধর্মীয় নেতাদের নিশানা করে মমতা বলেছেন, “কয়েকজন ধর্মীয় নেতা সেজেছে। পালে বাঘ না পড়লেও বাঘ, বাঘ বলে চিৎকার করে রাজনৈতিক সুবিধা নেয়। এরা গৃহশত্রু। আমি সকলকে মিত্র ভাবি। আমার কোনও শত্রু নেই। মনে রাখতে হবে, মুর্শিদাবাদের ইতিহাস আছে। এটা বাংলার রাজধানী ছিল।” রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, খুব স্বাভাবিক জায়গা থেকেই বিরোধী হিসেবে বিজেপির দিকেই আঙুল তুলবে তৃণমূল। কিন্তু কেন মমতা বলছেন, আরও কিছু প্রমাণ হাতে আসা বাকি? ইতিমধ্যেই পহেলগাঁও হামলা বিষয়ে অন্য সমস্ত বিরোধীদের মতো কেন্দ্রকে সমর্থনই করেছে তৃণমূল। সেখানে মুর্শিদাবার ইস্যুতে বিরোধিতার খুব একটা প্রাসঙ্গিকতা থাকবে কিনা সেই নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
আরও পড়ুন- মুর্শিদাবাদ: হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে কাঁটাতারের বেড়া আর কি কাটা যাবে না?
মুর্শিদাবাদের আক্রান্তদের সঙ্গে সাক্ষাতের প্রশ্নেও বিজেপিকে নিশানা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। “আমি ভেবেছিলাম ওদের সঙ্গে কথা বলব কিন্তু তা তো হচ্ছে না। বিজেপি ওদের সরিয়ে নিয়েছে। কেন এই লুকোচুরি? কী আড়াল করার চেষ্টা?” প্রশ্ন তুলেছেন মমতা। কেন মমতার মনে হচ্ছে এই হামলা পূর্বপরিকল্পিত? নিজের যুক্তিতে উত্তর দিয়েছেন তিনি।
মুর্শিদাবাদ ইস্যুতে বিরোধী বিজেপির দিকে মূল আক্রমণ শানিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যে একাধিক এমন গোষ্ঠীর কথা উঠে এসেছে যা সরাসরি বা পরোক্ষভাবে শাসক বিজেপি নিয়ন্ত্রিত। যেমন, মমতা এদিন বলেছেন, "বিএসএফ সেদিন গুলি না চালালে পরদিন অশান্তির ঘটনা ঘটত না। আপনারা কী লোকাতে চেয়েছেন? বিজেপি তো ছুপারুস্তম।" জাতীয় মানবাধিকার কমিশনেরও তীব্র সমালোচনা করেছেন তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো। কমিশনের সদস্যরা মুর্শিদাবাদ সফরে এসেছিলেন।মমতার প্রশ্ন, মানবাধিকার কমিশনের সদস্যরা কি বিজেপি-শাসিত উত্তরপ্রদেশ এবং জাতিগত হিংসা-কবলিত মণিপুর পরিদর্শন করেছে? “মানবাধিকার কমিশন কি মণিপুর এবং উত্তরপ্রদেশ সফরে গিয়েছিল? তারা মুর্শিদাবাদ সফরে তৎপর ছিল। ২০১৬ সালে নোট বাতিল ঘোষণার একদিন পর যেমন অনলাইন পেমেন্ট প্ল্যাটফর্মগুলি সংবাদপত্রের প্রথম পাতায় বিজ্ঞাপন দিয়েছিল, ঠিক তেমনই দাঙ্গা হওয়ার পরপরই মানবাধিকার কমিশন মুর্শিদাবাদ সফরে গিয়েছিল। সেই কারণেই আমি বলছি যে এই হিংসা পূর্বপরিকল্পিত।"
মুখ্যমন্ত্রী নিশানা করেছেন বিজেপির পৃষ্ঠপোষকতায় থাকা সংবাদমাধ্যমগুলিকেও। মমতা বলছেন, “আমি বেশিরভাগ ষড়যন্ত্রের কথা উন্মোচন করেছি, আমি মিডিয়ার সামনে এটাও প্রকাশ করব... দুর্ভাগ্যবশত, কিছু মিডিয়া হাউজ গুজব ছড়াতে বিজেপির হাত ধরেই খেলতে নেমেছে।”
মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, “সাম্প্রদায়িক হিংসা উস্কে দেওয়ার পরিবর্তে, আমাদের সীমান্ত রক্ষার জন্য প্রচেষ্টা চালানো উচিত। চেয়ারে থাকলে ধর্মীয় ভিত্তিতে জনগণকে বিভক্ত করতে পারা যায় না”। তবে তিনি একইসঙ্গে বলছেন, “সাম্প্রদায়িক অশান্তি যারা করে, আমরা তাঁদের ঘৃণা করি।” আবার বলছেন তিনি কারও বিরুদ্ধে নন, তিনি দাঙ্গার বিরুদ্ধে। তাই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে, মুর্শিদাবাদ ইস্যুতে কেন এখনও অবস্থান টলমলে মুখ্যমন্ত্রীর?