লালগ্রহে এবার আশ্চর্য সবুজের খোঁজ! ভিনগ্রহীদের উপস্থিতি নিয়ে উস্কে দিল যে জল্পনা
Mars: এর আগে মঙ্গলে প্রাচীন সভ্যতার খোঁজ মিলেছিল নদী উপত্যকা ঘেঁষে। এবার মঙ্গলে মিলল সবুজের খোঁজ। যা কার্যত তাক লাগিয়ে দিয়েছে বিজ্ঞানীদের।
অন্য গ্রহ নিয়ে মানুষের আগ্রহ আদি, অকৃত্রিম। আর তা যদি লালগ্রহ হয়, তাহলে তো কথাই নেই। পৃথিবীর যমজ এই ভিনগ্রহকে শুধু জানার ইচ্ছাই নয়, রীতিমতো লালগ্রহে বসতি স্থাপনের সুপ্ত ইচ্ছা মনের মধ্য়ে চেপে রেখেছেন বিজ্ঞানীরা। সেক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, মঙ্গলে কি কোনও দিন প্রাণের অস্তিত্ব ছিল? পৃথিবী ছাড়া আর কোনও গ্রহেই কি আদৌ রয়েছে প্রাণ? সেই খোঁজ মানুষকে বারবার পাঠিয়েছে নানা অভিযানে। কখনও চাঁদ তো কখনও মঙ্গল? এর আগে মঙ্গলে প্রাচীন সভ্যতার খোঁজ মিলেছিল নদী উপত্যকা ঘেঁষে। এবার মঙ্গলে মিলল সবুজের খোঁজ। যা কার্যত তাক লাগিয়ে দিয়েছে বিজ্ঞানীদের।
সম্প্রতি নাসার পারসিভারেন্স রোভারে ধরা পড়েছে এমনই এক রহস্য। মঙ্গলের 'ব্রাইট অ্যাঙ্গেল' হিসেবে চিহ্নিত একটি জায়গায় নাকি বিরল লেপার্ড স্পটের খোঁজ মিলেছে। সম্প্রতি রোভারটি সেই ব্রাইট অ্যাঙ্গেল খেরে নেরেটভা ভ্যালি পেরিয়ে দক্ষিণে যাওয়ার সময় সার্পেন্টাইন র্যাপিডস নামে একটি জায়গায় রহস্যময় লাল শিলা খুঁজে পেয়েছিল। আর সেই শিলাতেই নাকি মিলেছে সাদা, কালো ও সবুজ রঙের দাগ। বিশেষত বিজ্ঞানীদের অবাক করেছে ওই সবুজ রঙের দাগের উপস্থিতিই।
আরও পড়ুন: নদী-উপত্যকায় ছিল প্রাচীন সভ্যতা? লালগ্রহের যে আশ্চর্য খোঁজ চমকে দিয়েছে বিজ্ঞানীদের
পৃথিবীতে বহু সময়ই ওই ধরনের লাল শিলা মানে ধরে নেওয়া হয় লোহার উপস্থিতি। বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, ওই ধরনের লাল শিলার উপরে সবুজ ছাপের কারণ হতে পারে তরল জল পাথরে শক্ত হওয়ার আগে পলির মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হওয়া। সে সময় রাসায়নিক বিক্রিয়া করে অক্সিডাইজ লোহার মধ্যে একাধিক পরিবর্তন আনে, যা ওই সবুজ ছাপ তৈরি করে। পৃথিবীর ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, ওই সবুজ দাগের নেপথ্যে বহু সময়ই থাকে মাইক্রোবায়ালের উপস্থিতি। অর্থাৎ জীবাণু বা ক্ষয়প্রাপ্ত জৈব পদার্থের সঙ্গেও জড়িত থাকতে পারে ওই বিক্রিয়া।
এই খোঁজের নেপথ্যে রয়েছে রোভারে শারলক ও পিক্সল যন্ত্রগুলি। আর এই সবুজ উপাদানের উপস্থিতিই রহস্য নতুন করে উস্কে দিয়েছে। তবে কি কোনও না কোনও কালে মঙ্গলে প্রাণের সন্ধান ছিল। যদি তা থেকেও থাকে, তাহলে তা বিনষ্টই বা হয়ে গেল কী করে?
এর আগে মঙ্গল গ্রহে পারসিভারেন্স রোভার খুঁজে পেয়েছিল আশ্চর্য এক পাথর। যার নাম রাখা হয়েছিল চেয়াভা জলপ্রপাত। সেই পাথরের নমুনায় মিলেছিল এক ধরনের জৈব অণু বা মাইক্রোবায়ালের খোঁজ। বিজ্ঞানীরা অনুমান ছিল, যে নদী উপত্যকা থেকে মিলেছিল সেই পাথর, সেখানে কোনও সময় প্রাণের বসতি থাকাটা খুব একটা আশ্চর্যের নয়। এমনকী যেখান থেকে পাথরটি মেলে, সেখানে বহমান জলের অস্তিত্বও খুঁজে পেয়েছিল রোভার।
যেখানে মঙ্গলে প্রাণের খোঁজে এত হন্যে বিজ্ঞানী দল, সেখানে সম্প্রতি আমেরিকার টেক্সাসের রাইস ইউনিভার্সিটির জীববিজ্ঞানী ড. স্কট সলোমান দাবি করেছে, মঙ্গলে নাকি মানুষের বেঁচে থাকা খুবই মুশকিল। কারণ মঙ্গলের গ্রহপৃষ্ঠ অবিশ্বাস্য রকমের কঠোর। ফলে সেখানে মানুষের বেঁচে থাকা খুবই কষ্টকর। তাঁর মতে, মঙ্গলে বসতিস্থাপনকারীরা যদি সন্তানের জন্ম দেয় তবে তাদের গায়ের রং সবুজ হতে পারে। এমনকী দুর্বল পেশী, দুর্বল দৃষ্টিশক্তি ও ভঙ্গুর হাড়ের মতো সমস্যাও থাকতে পারে তাদের। কারণ মঙ্গল পৃথিবীর থেকে আকারে অনেক ছোট এবং তার মাধ্যাকর্ষণও কম পৃথিবীর চেয়ে। তার উপর চৌম্বক ক্ষেত্র ও প্রতিরক্ষামূলক ওজোন স্তরেরও অভাব রয়েছে বলে সূর্য ও মহাজাগতিক রশ্নির থেকে বাঁচার ক্ষমতা নেই তার।
আরও পড়ুন: মঙ্গল গ্রহে এখনও লুকিয়ে রয়েছে জলের অস্তিত্ব! যে আবিষ্কার চমকে দিল বিজ্ঞানীদেরও
এককথায় মানুষের পক্ষে মঙ্গলে টিকে থাকা কঠিন। তবে মঙ্গলে যারা এককালে বসবাস করত, সেই ভিনগ্রহীরা ঠিক কেমন, তা নিয়ে উস্কে উঠেছে জল্পনা। কার্যত নাসার পারসিভারেন্স রোভারে ধরা পড়ে সবুজ-রহস্য নতুন করে সেই ভিনগ্রহীদের গঠন এবং জীবনধারণ নিয়েও নতুন নতুন সম্ভাবনা ও জল্পনার কথা উস্কে দিয়েছে। এই পাথরের অস্তিত্ব সেই গবেষণাকে নতুন দিক দেবে বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।