শিক্ষায় এগিয়ে মেয়েরা, তাও কেন এই রাজ্যে কোনও মহিলাই ভোট পান না নির্বাচনে?
Nagaland Assembly Election 2023: এমনকী মহিলা প্রার্থীদের ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রেও খোদ মহিলারাই খুব একটা এগিয়ে আসেননি।
হেঁশেলে মহিলাদের দখল বেশি, সেখানে মেয়েদের সিদ্ধান্তই সারকথা। মহিলাদের শিক্ষা বেশি, মহিলাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণও বেশি। তবে সেই সিদ্ধান্তগ্রহণ দেশের জন্য নয়, রাজ্যের জন্য নয়। কেবলই নিজস্ব গেরস্থালিতে সেই সিদ্ধান্তের মর্যাদা রয়েছে। উত্তরপূর্বের রাজ্য নাগাল্যান্ড ১৯৬৩ সালে পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা পায়। তারপর থেকে এই রাজ্যে ১৩টি বিধানসভা নির্বাচন হয়েছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনও মহিলা বিধানসভায় নির্বাচিত হননি।
দেশ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পেয়েছে ইন্দিরা গান্ধীকে। সুষমা স্বরাজ থেকে শুরু করে নির্মলা সীতারমণ- প্রতিরক্ষা, বিদেশ থেকে শুরু করে অর্থমন্ত্রকের মতো শক্তিশালী দফতর সামলেছেন মহিলারা। জয়ললিতা, মায়াবতী এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো নাম উঠে এসেছে রাজ্য চালনার ক্ষেত্রে। নাগাল্যান্ড কেন এখনও কোনও মহিলাকে এতখানি ভরসা করতে পারল না তবে?
রাজ্যের মহিলাদের মধ্যে অনেকেই বিভিন্ন দিক থেকে এগিয়ে থাকা এবং তাঁদের সামাজিক-রাজনৈতিক চেতনাও তুখোড়। তা সত্ত্বেও নাগাল্যান্ডে এখনও পর্যন্ত একজনও মহিলা বিধায়ক নির্বাচনে জেতেননি। রাজনীতিতে মহিলাদের ক্ষমতায়নের কথা শুধু মুখেই বলা হচ্ছে না, নানাভাবে তা বাস্তবায়িত করার প্রয়াসও চলছে। তাহলে কেন এই পাহাড়ি রাজ্যে কিছুতেই তা সম্ভব হলো না?
২০২২ সালে, এস ফ্যংগং কোনইয়াক (রাজ্যসভা সদস্য) ইতিহাস তৈরি করেন। চার দশকেরও বেশি সময় পরে উত্তর-পূর্বে এই রাজ্য থেকে প্রথম মহিলা সাংসদ হন তিনি। ১৯৭৭ সালে রাজ্য থেকে লোকসভায় নির্বাচিত প্রয়াত রনো এম শাইজার পরে কোনইয়াকই দ্বিতীয় সাংসদ হন। নাগাল্যান্ডে মহিলাদের সামাজিক অবস্থান কিন্তু মোটেও খারাপ না। রাজ্যের মহিলা সাক্ষরতার হার ৭৬.১১ শতাংশ, যা জাতীয় গড় ৬৪.৬ শতাংশের চেয়ে বেশিই ভালো। এমনকী পুরুষদের সাক্ষরতার হারও বেশ ভালো। নাগাল্যান্ড রাজ্যে একাধিক নারী অধিকার সংস্থারও যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে। তাহলে কেন এই অবস্থা রাজনীতির ক্ষেত্রে?
নাগাল্যান্ডে এখনও পর্যন্ত মাত্র ২০ জন মহিলা বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। এর মধ্যে ২০১৮ সালেই পাঁচটি আসনে মহিলা প্রার্থী ছিলেন। তাঁদের মধ্যে তিনজন ভোটের ছয় ভাগের এক ভাগও পাননি। এখনও পর্যন্ত রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে লড়া ২০ জন মহিলার মধ্যে ১৩ জনের অবস্থা এই একই।
আসলে বাইরে থেকে যতই শিক্ষার হার বেশি হোক বা মাতৃতান্ত্রিকতার মোড়ক থাক, দেশ চালানোর ক্ষেত্রে মেয়েদের এগিয়ে আসা রুখতে হানাহানিও হয়েছে এই রাজ্যে। নাগাল্যান্ডের নির্বাচনী রাজনীতিতে মহিলাদের বিরোধিতা তাই নতুন নয়। ২০১৭ সালে, স্থানীয় নির্বাচনে মহিলাদের জন্য ৩৩ শতাংশ সংরক্ষণের ঘোষণা করায় এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে ধর্মঘট ডাকে উপজাতীয় সংস্থাগুলি। সেই সময় হিংসার জেরে দুই ব্যক্তির মৃত্যুও হয়।
আরও পড়ুন- ধর্ম নয়, চাকরিই পথ! ত্রিপুরাতে কি এবার হারানো গড় ফিরে পাবে বামেরা?
বিক্ষোভকারীদের দাবি ছিল, এই সংরক্ষণ সংবিধান দ্বারা নিশ্চিত করা নাগাল্যান্ডের বিশেষ অধিকারকে লঙ্ঘন করে। সংবিধানের ৩৭১(এ) ধারা প্রথাগত নাগা আইন এবং পদ্ধতি রক্ষা করে। বিক্ষোভকারীদের দাবি ছিল, নারীরা সিদ্ধান্ত গ্রহণের জায়গায় থাকতে পারে না। মহিলাদের টিকিট দিতে নারাজ রাজনৈতিক দলগুলোও। এমনকী মহিলা প্রার্থীদের ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রেও খোদ মহিলারাই খুব একটা এগিয়ে আসেননি। গ্রাম পরিষদের চেয়ারম্যান পদে এখনও পর্যন্ত একজন নারী নির্বাচিত হয়েছেন, তাও সেই ২০০৫ সালে।
নাগাল্যান্ডের মুখ্যমন্ত্রী নেফিউ রিও নাগা জনগণকে এবার মানসিকতা পরিবর্তনের আহ্বান জানিয়েছেন। মহিলারা কেবল পরিবার নয়, সমাজের ও দেশের সিদ্ধান্ত গ্রহণের জায়গায় থাকতে পারেন এবং অনেক দক্ষভাবেই পারেন, বোঝানো হচ্ছে সকলকেই। নেফিউ রিওর নেতৃত্বাধীন ন্যাশনালিস্ট ডেমোক্রেটিক প্রগ্রেসিভ পার্টি (এনডিপিপি) ৬০ সদস্যের বিধানসভা নির্বাচনের আগে ইস্তেহার প্রকাশ করেছে, সেই ইস্তেহারে যথেষ্ট গুরুত্ব পেয়েছে লিঙ্গ সাম্যের বিষয়টি।
এনডিপিপি পশ্চিম আঙ্গামি এবং ডিমাপুর-৩ আসন থেকে দুইজন মহিলাকে নির্বাচনে প্রার্থী করেছে। সামগ্রিকভাবে, চারজন মহিলা বিধানসভা নির্বাচনের জন্য মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। কংগ্রেস এবং বিজেপিও যথাক্রমে টেনিং এবং আটোইজু আসনে একজন করে মহিলাকে প্রার্থী করেছে।
১২ মার্চ নাগাল্যান্ড নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা হবে। পাশাপাশি আরও দু'টি উত্তর-পূর্বের রাজ্য মেঘালয় এবং ত্রিপুরার ফলাফলও ঘোষণা করা হবে। ২০২৩ সালে ভারতের ব্যস্ত নির্বাচনী মরশুমের সূচনা হচ্ছে এই তিনটি ভোট দিয়েই। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে এই বিধানসভা ভোটগুলি ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।
বিজেপি ত্রিপুরাকে ধরে রাখতে এবং অন্য দু'টি রাজ্যে নিজেদের দখল আরও বাড়ানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছে। অন্যদিকে, কংগ্রেস এবং বামেরা নিজেদের ময়দানে প্রাসঙ্গিক করে তুলতে সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপাচ্ছে। আর তৃণমূলও পশ্চিমবঙ্গের বাইরে প্রভাব বিস্তারে মরিয়া। এই সমস্ত ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে মহিলারা কতখানি এগিয়ে আসবেন এবার? বদল কি হবে? সিদ্ধান্তগ্রহণ পুরুষদের একচেটিয়া অধিকারের জায়গা হয়েই রইবে কেবল? নাকি বদলাবে! প্রাচীন চিন্তার জগদ্দল নড়তে সময় তো লাগবেই, শুরুটা হবে সামান্য স্ফুলিঙ্গ থেকেই।