নারীর অধিকারের লড়াইয়ে বারবার জেল, সেই অদম্য নার্গিসকেই এবার শান্তির নোবেল
Nobel Peace Prize 2023, Narges Mohammadi: নোবেল শান্তির স্বীকৃতি যখন পেলেন নার্গিস, তখন তিনি মিথ্যা অভিযোগে বন্দি ইরানের কুখ্যাত এভিন কারাগারে।
নারীকে আপন ভাগ্য ছিনিয়ে আনার অধিকার দেয়নি কেউ কোনওদিন। তাঁর জন্য লড়তে হয়েছে অবিরাম, অক্লান্ত। লড়েছেন মালালা ইউসুফাজাই, নার্গিস মহম্মদীদের মতো কেউ কেউ। আর সেই অদম্য সাহসীকতার স্বীকৃতি ইতিমধ্যেই পেয়েছেন মালালা। এবার পালা ইরানের মেয়ে নার্গিসের। ২০২৩ সালে নোবেল মঞ্চ কুর্নিশ জানিয়েছে সেই সাহসিনীকেই। নোবেল শান্তি পুরস্কার জিতে নিয়েছেন ইরানের মানবাধিকারকর্মী নার্গিস মহম্মদী। বিজ্ঞান, চিকিৎসা কিংবা সাহিত্যের নোবেল নিয়ে তো উত্তেজনা থাকেই। তবে এ ছাড়াও একটি বিরল পুরস্কার প্রতিবছর দিয়ে থাকেন নোবেল কমিটি। যা কোনওদিন পেয়েছিলেন মাদার টেরেজা, পেয়েছিলেন মালালা ইউসুফাজাই, সেই অদম্য সাহসীকতা ও দুনিয়াকে বদলে দেওয়ার স্বপ্নের হাতেই উঠল সেই শান্তি সম্মান।
মূলত নারীদের নিয়েই তাঁর কাজ। ইরানে যে ভাবে নারীদের প্রতি নিপীড়ন চলেছে, এবং চলে অসেছে তার বিরুদ্ধে লাগাতার লড়াই করে এসেছেন ৫১ বছরের নার্গিস। দেশের মানবাধিকার রক্ষার পাশাপাশি স্বাধীনতার অধিকারটুকু যাতে নিশ্চিক করা যায়, সে জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে গিয়েছেন তিনি। আর তার স্বীকৃতি যখন পেলেন নার্গিস, তখন তিনি মিথ্যা অভিযোগে বন্দি ইরানের কুখ্যাত এভিন কারাগারে। সেই ২০১১ সাল থেকে দফায় দফায় জেলে পাঠানো হয়েছে তাঁকে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠেন যারা, তাঁদের সঙ্গে যেমনটা হয়ে এসেছে আজন্মকাল। নার্গিসও যেন ব্যাতিক্রম নন।
আরও পড়ুন: অপরের জন্য লিখে সাহিত্যে নোবেল, কে এই জন ফসে?
নার্গিস যে হিউম্যান রাইট সেন্টারের উপ-প্রধানের দায়িত্ব সামলান, তার প্রতিষ্ঠাতা শিরিনও ইরানের বাসিন্দা এবং নোবেলজয়ীও বটে। শিরিনের পর এবার শান্তিতে দ্বিতীয় নোবেলজয়ী পেল ইরান। তবে এই সাহসী ভূমিকার চরম মূল্য চোকাতে হয়েছে নার্গিসকে ব্যক্তিগত জীবনে। রেকর্ড বলছে, এখনও পর্যন্ত ইরানের শাসকদল অন্তত ১৩বার গ্রেফতার করেছে নার্গিসকে। তার মধ্যে পাঁচবার দোষীসাব্যস্ত করা হয়েছে তাঁকে, যার জন্য মোট ৩১ বছরের কারাদণ্ড পেয়েছেন নার্গিস। যখন তিনি নোবেল পুরস্কারের খবরটি জানতে পারলেন, তখন তিনি জেলখানার অন্ধকারে।
কিছুদিন আগেই নারীবিক্ষোভে ফেটে পড়েছিল ইরান। নৈতিক পুলিশের আঘাত নেমেছিল সে দেশের মেয়ে মাশা আমিনির উপর। হিজাব না পরার 'অপরাধে' কারাগারে পিটিয়ে খুন করা হয় তাকে। যে ঘটনার পরে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে গোটা দেশ। রাস্তায় নামেন ইরানীয় মহিলারা। আর সেই আন্দোলনেই নেতৃত্ব দিয়েছিলেন নার্গিস। আর তার সেই ভূমিকাকেই কুর্নিশ জানিয়ে এই নোবেল শান্তি পুরস্কার তাঁকে, জানিয়েছে নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি। নোবেল কমিটির বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে মাশা আমিনি নামে সেই মেয়েটির কথা। পাশাপাশি ইরানের ধর্মীয় শাসকদের, মহিলাদের প্রতি বৈষম্য ও নিপীড়নের নীতির বিরুদ্ধে এবং সবার জন্য মানবাধিকার ও স্বাধীনতার চেয়ে যে হাজার হাজার মানুষ লড়াই করছেন, তাঁদের আন্দেলনকেও স্বীকৃতি জানিয়েছে এই বছরের নোবেল শান্তি পুরস্কার।
2023 #NobelPeacePrize laureate Narges Mohammadi’s brave struggle has come with tremendous personal costs. The Iranian regime has arrested her 13 times, convicted her five times, and sentenced her to a total of 31 years in prison and 154 lashes. Mohammadi is still in prison. pic.twitter.com/ooDEZAVX01
— The Nobel Prize (@NobelPrize) October 6, 2023
মুসলিমপ্রধান দেশ ইরানে নারী স্বাধীনতার জায়গা প্রায় শূন্য। বরং নানাবিধ ধর্মীয় ও সামাজিক পরাধীনতার নিগড়ে তাদের বেঁধে রাখা হয়েছে অষ্টপ্রহর। সেখান থেকে তাঁদের বের করার চেষ্টা মানেই ধর্মীয় শাসকদের চক্ষুশূল হওয়া। আর সেই কাজটাই বারবার করেছেন নার্গিস। যার জেরে বারবার জেলে যেতে হয়েছে তাঁকে। সহ্য করতে হয়েছে সীমাহীন নিগ্রহ আর অত্যাচার। তবে সেইসব কিছুই তাঁকে টলাতে পারেনি তাঁর বিশ্বাস থেকে। বরং ফের তিনি ঝাঁপিয়েছেন তাঁর কাজে। নারীমুক্তির স্বপ্ন আজও তাঁর চোখ জুড়ে।
আরও পড়ুন: এলইডি-তে বহুল ব্যবহার, যে প্রযুক্তির আবিষ্কার বিজ্ঞানী-ত্রয়কে এনে দিল রসায়নে নোবেল
এর আগে, চলতি বছরের শুরুতে, ইরানের তিন কারাবন্দি সাংবাদিককে বিশ্ব সংবাদমাধ্যম স্বাধীনতা পুরস্কার দিয়েছিল রাষ্ট্রপুঞ্জ। সেই তিনজনের মধ্যে ছিলেন নার্গেস মহম্মদিও। পুরষ্কার ঘোষণার খবর জানার পর নার্গেসের পরিবারের তরফে জানানো হয়েছে, ইরানের নারীরা স্বাধীনতার জন্য যে সংগ্রাম করছে তার একটি ঐতিহাসিক মূহূর্ত। তবে এই আনন্দের খবরের সময় বাড়ির মেয়েটি যে পাশে নেই, এ তাঁদের একটা হতাশার জায়গা তো বটেই। অক্টোবরে ঘোষণা হলেও নোবেল পুরস্কার প্রাপকদের হাতে তুলে দিতে দিতে আগামী ডিসেম্বর মাস। নোবেল কমিটির আশা, ততদিনে নিশ্চয়ই এই কারাবন্দি জীবন থেকে মুক্তি পাবেন নার্গিস। নিজে হাতে গ্রহণ করতে পারবেন এই সম্মান। আর সেই আশাতেই বুক বাঁধছে গোটা বিশ্ব।